Advertisement
Doctor TV

শনিবার, ২৬ জুলাই, ২০২৫


ফলমূল ও শাকসবজি ঘুমের গুণগত মান উন্নত করতে সহায়ক: গবেষণা প্রতিবেদনে ইঙ্গিত

Main Image

ছবিঃ সংগৃহীত


ফলমূল ও শাকসবজি খাওয়ার আরও একটি ইতিবাচক দিক তুলে ধরেছে সাম্প্রতিক এক গবেষণা। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সাময়িকী Sleep Health-এ প্রকাশিত একটি ছোট পরিসরের পর্যবেক্ষণমূলক গবেষণায় দেখা গেছে, প্রতিদিন অন্তত ৫ কাপ ফল ও সবজি খাওয়া হলে রাতে ঘুমের সময়কাল বাড়ে এবং ঘুম কম বিঘ্নিত হয়, অর্থাৎ মাঝরাতে ঘন ঘন ঘুম ভেঙে যাওয়ার ঘটনা কমে।
গবেষণার সহলেখক এবং নিউইয়র্কের কলম্বিয়া ইউনিভার্সিটি আরভিং মেডিকেল সেন্টারের নিউট্রিশনাল মেডিসিনের অধ্যাপক ড. মেরি-পিয়েরে সেন্ট-অনজে বলেন, ঘুমের মান উন্নত করতে জটিল কিছু করার প্রয়োজন নেই। “খাবারের মাধ্যমেই ভালো ঘুম সম্ভব,” বলেন তিনি।
 

গবেষণার পর্যালোচনা
এই গবেষণায় ২০ থেকে ৪৯ বছর বয়সী মোট ৩৪ জন প্রাপ্তবয়স্ক অংশ নেন, যাদের মধ্যে প্রায় ৮০ শতাংশ ছিলেন পুরুষ। অংশগ্রহণকারীরা জানান, তারা নিয়মিতভাবে দিনে তিনবার খাবার খান এবং প্রতিরাতে ৭ থেকে ৯ ঘণ্টা ঘুমান। মোট ২০১ দিন ও রাত ধরে তাদের খাদ্যাভ্যাস ও ঘুমের তথ্য সংগ্রহ করা হয়।
তারা প্রতিদিন কী খাচ্ছেন তা একটি অ্যাপে রেকর্ড করতেন এবং হাতে পরিধানযোগ্য একটি ডিভাইসের মাধ্যমে ঘুমের মান সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহ করা হয়। পরে এসব তথ্য বিশ্লেষণ করে গবেষকরা খাদ্যাভ্যাসের সঙ্গে ঘুমের সম্পর্ক খুঁজে বের করেন।


বিশ্লেষণে তারা নিচের বিষয়গুলো বিবেচনায় নেন:
• ম্যাক্রোনিউট্রিয়েন্টস: কার্বোহাইড্রেট (তন্তু বা ফাইবারসহ), প্রোটিন, ফ্যাট
• মাইক্রোনিউট্রিয়েন্টস: ম্যাগনেসিয়াম, ভিটামিন বি৬, ভিটামিন ডি, ক্যালসিয়াম, সোডিয়াম, দস্তা (জিঙ্ক) ইত্যাদি
• খাদ্য উপাদান: মাংস, দুগ্ধজাত পণ্য, ফল ও শাকসবজি, বাদাম, শস্য ইত্যাদি


ফলাফলে দেখা গেছে, যেসব দিন অংশগ্রহণকারীরা বেশি পরিমাণে ফল, শাকসবজি এবং জটিল কার্বোহাইড্রেট গ্রহণ করেছেন, সেসব দিনে তাদের ঘুমের মান ছিল উন্নত। অর্থাৎ, তাদের ঘুম ভাঙার ঘটনা কম ঘটেছে।


তবে অধ্যাপক সেন্ট-অনজে সতর্ক করে বলেন, সব কার্বোহাইড্রেট ঘুমের জন্য সহায়ক নয়। সাদা পাউরুটি বা চিনি জাতীয় সহজ কার্বোহাইড্রেট নয়, বরং জটিল কার্বোহাইড্রেট — যেগুলো ফাইবার ও ম্যাগনেসিয়ামে সমৃদ্ধ ঘুমের উন্নতিতে বেশি কার্যকর।
অন্যদিকে, যেসব দিন অংশগ্রহণকারীরা বেশি লাল মাংস বা প্রক্রিয়াজাত মাংস খেয়েছেন, সেসব দিন তাদের ঘন ঘন ঘুম ভাঙার প্রবণতা বেশি দেখা গেছে।
 

ঘুমে সহায়ক পুষ্টি উপাদান
গবেষণায় অংশ নেননি এমন একজন বিশেষজ্ঞ, ইউটি হেলথ হিউস্টনের স্নায়ুবিজ্ঞান বিভাগের স্লিপ নিউরোলজিস্ট ড. সুধা তালাভাঝুলা বলেন, ফলমূল ও শাকসবজিতে থাকা জটিল কার্বোহাইড্রেট শরীরকে ট্রিপটোফ্যান শোষণে সহায়তা করে, যা ঘুমের জন্য সহায়ক। ট্রিপটোফ্যান হলো একধরনের অ্যামাইনো অ্যাসিড, যা শরীরে মেলাটোনিন তৈরিতে সাহায্য করে মেলাটোনিন ঘুমের সংকেতদাতা হরমোন।
 

তন্তু বা ফাইবারের ভূমিকা
তন্তু বা ফাইবারসমৃদ্ধ খাদ্য ঘুমের গুণমান বাড়ায় — এ বিষয়টি পূর্ববর্তী গবেষণাতেও প্রমাণিত হয়েছে। ২০১৬ সালে অধ্যাপক সেন্ট-অনজে-র আরেকটি গবেষণায় দেখা যায়, বেশি ফাইবার গ্রহণ করলে ধীর তরঙ্গযুক্ত গভীর ও পুনরুদ্ধারমূলক ঘুমের পরিমাণ বাড়ে।
ফল ও সবজি ফাইবারের গুরুত্বপূর্ণ উৎস। উদাহরণস্বরূপ, এক কাপ রাস্পবেরিতে প্রায় ৮ গ্রাম ফাইবার থাকে, মাঝারি আকারের একটি আপেলে ৪.৫ গ্রাম। সবজির মধ্যে সবুজ মটর, ব্রোকলি, শালগম শাক এবং ব্রাসেলস স্প্রাউট ফাইবারে সমৃদ্ধ।


যুক্তরাষ্ট্রের কৃষি বিভাগ (USDA) অনুযায়ী, নারীদের প্রতিদিন ২৫ গ্রাম এবং পুরুষদের ৩৮ গ্রাম ফাইবার গ্রহণ করা উচিত। অথচ, সাধারণত একজন প্রাপ্তবয়স্ক আমেরিকান দিনে গড়ে মাত্র ১৬ গ্রাম ফাইবারই গ্রহণ করে থাকেন।


ম্যাগনেসিয়াম ও ঘুম
গবেষণায় আরও দেখা যায়, ম্যাগনেসিয়ামও ভালো ঘুমের সঙ্গে সম্পর্কিত। অধ্যাপক সেন্ট-অনজে বলেন, “ম্যাগনেসিয়াম আমরা কোথা থেকে পাই? এটি পাওয়া যায় সবুজ পাতাযুক্ত সবজি, জটিল কার্বোহাইড্রেট, পূর্ণ শস্য, বাদাম ও বীজজাত খাদ্য থেকে।”
ম্যাগনেসিয়াম ঘুমপ্রবণতা জাগিয়ে তোলে ও শরীরকে শান্ত করে তোলে। এটি মেলাটোনিন তৈরিতেও সাহায্য করে।


খাদ্যাভ্যাসে ফল-সবজি যুক্ত করার পরামর্শ
যদিও গবেষণায় অংশগ্রহণকারী সংখ্যা সীমিত এবং বেশিরভাগ পুরুষ হওয়ায় ফলাফল সবার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নাও হতে পারে, তবুও বিশেষজ্ঞরা এই ফলাফলকে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন।


ডেলাওয়্যার বিশ্ববিদ্যালয়ের পুষ্টি বিশেষজ্ঞ শ্যারন কলিসন বলেন, “আমি দেখি, যাদের ঘুমের ধরন এলোমেলো, তাদের খাদ্যাভ্যাসও একই রকম। খাদ্যভ্যাস নিয়মিত হলে ঘুমও অনেক সময় নিয়মিত হয়।”


তিনি পরামর্শ দেন, প্রতিটি খাবারের সময় প্লেটের অর্ধেক অংশে ফল বা সবজি রাখুন। বাকিটা পূর্ণ শস্য, যেমন ওটমিল, বাদামী চাল বা পূর্ণ গমের রুটি দিয়ে পূরণ করুন।
যদি এটি একবারে বেশি কঠিন মনে হয়, তাহলে প্রথমে ছোট করে শুরু করতে পারেন। যেমন, অফিস থেকে ফেরার পথে একটি ফল খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন এটি সন্ধ্যার অনিয়ন্ত্রিত ক্ষুধাও কমাতে পারে।


“আমি আমার রোগীদের বলি, প্রতিটি খাবার ও স্ন্যাকসের সঙ্গে অন্তত একটি ফল বা সবজি রাখতে হবে,” বলেন কলিসন।
অধ্যাপক সেন্ট-অনজে আরও বলেন, স্বাস্থ্যকর খাবার মানেই ব্যয়বহুল হওয়া উচিত নয়। “সবকিছুই তাজা কিনতে হবে এমন নয় হিমায়িত ফল ও সবজি না থাকার চেয়ে অনেক ভালো,” বলেন তিনি।


এই গবেষণা আবারও প্রমাণ করে, সুষম খাদ্যাভ্যাস কেবল স্বাস্থ্য রক্ষায় নয়, বরং মানসম্মত ঘুম নিশ্চিত করতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
 

আরও পড়ুন