
ছবিঃ প্রতীকী
ক্রনিক অবস্ট্রাকটিভ পালমোনারি ডিজিজ (COPD) এখন বিশ্বের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ জনস্বাস্থ্য চ্যালেঞ্জ হিসেবে বিবেচিত হয়। বৈশ্বিক মৃত্যুহার অনুযায়ী রোগটি বর্তমানে চতুর্থ প্রধান মৃত্যু-কারণ, যা প্রতি বছর প্রায় ৩.৫ মিলিয়ন মানুষের প্রাণ কেড়ে নেয়। COPD হলো একটি দীর্ঘমেয়াদি ও ক্রমাগত অগ্রসরমান রোগ, যা ধীরে ধীরে শ্বাসনালীর পথ সংকুচিত করে এবং ফুসফুসের কার্যক্ষমতা নষ্ট করে। ধূমপান, পরিবেশদূষণ ও বিভিন্ন ক্ষতিকর বায়ুবাহিত কণার দীর্ঘমেয়াদি সংস্পর্শ রোগটির মূল কারণ। সাধারণত ৪০ বছরের বেশি বয়সীদের বেশি প্রভাবিত করলেও, রোগটির বোঝা প্রতিনিয়ত বাড়ছে—বিশেষ করে নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোতে (LMICs), যেখানে COPD–এর কারণে মৃত্যুবরণকারীদের প্রায় ৯০ শতাংশের বয়স ৭০ বছরের নিচে।
বর্তমান হিসাব অনুযায়ী বিশ্বব্যাপী ৩০ কোটিরও বেশি মানুষ COPD–তে ভুগছেন, এবং এই সংখ্যা আরও বাড়ছে নগরায়ণ, জনসংখ্যার বার্ধক্য ও তামাক ব্যবহারের বিস্তারের কারণে। LMIC দেশগুলোতে রান্নাবান্নায় ব্যবহৃত বায়োমাস জ্বালানির ধোঁয়া এখনো COPD–এর একটি প্রধান কারণ হিসেবে রয়েছে। অন্যদিকে উন্নত দেশগুলোতে তামাক সেবন রোগটির প্রায় ৭০ শতাংশের জন্য দায়ী। উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো—অনেক উন্নত অঞ্চলে এখন পুরুষ ও নারীর মধ্যে COPD–এর প্রকোপ প্রায় সমান, যার মূল কারণ গত কয়েক দশকে নারীদের মধ্যে ধূমপানের হার বৃদ্ধি।
COPD কী
COPD এমন একটি শ্বাসতন্ত্রের রোগ, যেখানে শ্বাসকষ্ট ও শ্বাসনালীর বাধা স্থায়ীভাবে বৃদ্ধি পায়। রোগটি সাধারণত দুটি অবস্থার সমন্বয়ে গঠিত—
এই পরিবর্তনগুলো ফুসফুসের বাতাস গ্রহণ ও বের করার ক্ষমতাকে কমিয়ে দিয়ে শ্বাসকে অত্যন্ত কষ্টকর করে তোলে।
কারণ ও ঝুঁকির উপাদান
দীর্ঘ সময় ধরে বিভিন্ন ক্ষতিকর কণা বা গ্যাসের সংস্পর্শ COPD–এর মূল কারণ। বৈশ্বিকভাবে রোগটির ৮৫ শতাংশেই ধূমপান সবচেয়ে বড় ঝুঁকি। এছাড়া পরোক্ষ ধূমপান, ঘরোয়া ও পরিবেশ দূষণ, কর্মক্ষেত্রে ধুলো ও রাসায়নিক পদার্থের সংস্পর্শ এবং জিনগত কারণ—বিশেষ করে আলফা–১ অ্যান্টিট্রিপসিনের ঘাটতি—রোগের ঝুঁকি বাড়ায়। যদিও বয়স বেশি হলে ঝুঁকি বেশি থাকে, তবুও যারা দীর্ঘদিন দূষণ বা ধোঁয়ার সংস্পর্শে থাকে কিংবা যাদের জিনগত দুর্বলতা আছে, তারাও অল্প বয়সে আক্রান্ত হতে পারে।
লক্ষণ ও রোগ নির্ণয়
COPD–এর লক্ষণ সাধারণত ধীরে ধীরে শুরু হয় এবং অনেক সময় বয়সজনিত সমস্যা বা ধূমপায়ীদের স্বাভাবিক কাশি বলে ভুল হয়। সাধারণ লক্ষণগুলো হলো—
রোগটি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বিশ্রামের সময়ও শ্বাস নিতে কষ্ট হয়, যা দৈনন্দিন জীবনকে মারাত্মকভাবে ব্যাহত করে।
রোগ নির্ণয়ের জন্য রোগীর ইতিহাস, শারীরিক পরীক্ষা এবং ফুসফুসের কার্যক্ষমতা মূল্যায়ন করা হয়। স্পাইরোমেট্রি COPD নির্ণয়ের সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য পরীক্ষা, যা একজন ব্যক্তি কতটা বাতাস নিতে ও ছাড়তে পারছে এবং কত দ্রুত তা করতে পারছে—তা মাপে। প্রয়োজন হলে বুকে এক্স-রে বা সিটি স্ক্যান করা হয় রোগের গভীরতা নির্ণয় এবং অন্যান্য রোগ বাদ দিতে।
চিকিৎসা ও ব্যবস্থাপনা
COPD–এর বর্তমানে কোনো স্থায়ী চিকিৎসা নেই, তবে সঠিক ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে রোগ নিয়ন্ত্রণ ও জীবনের মান উন্নত করা সম্ভব। ধূমপান ত্যাগ করা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ—যা রোগের অগ্রগতি উল্লেখযোগ্যভাবে কমিয়ে দেয়। পাশাপাশি ব্রংকোডাইলেটর ও ইনহেলড কর্টিকোস্টেরয়েডসহ বিভিন্ন ওষুধ শ্বাসনালী প্রসারিত করতে ও প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে। উন্নত পর্যায়ে রোগীরা পর্যাপ্ত অক্সিজেন নিশ্চিতে অক্সিজেন থেরাপি প্রয়োজন হতে পারে।
পালমোনারি রিহ্যাবিলিটেশন—যেখানে ব্যায়াম, পুষ্টি পরামর্শ, শিক্ষা ও মানসিক সহায়তা একসঙ্গে দেওয়া হয়—রোগীদের সক্ষমতা ও আরামদায়ক জীবনযাপন অনেকটাই বাড়িয়ে দেয়। বিশেষ কিছু ক্ষেত্রে অস্ত্রোপচার, যেমন লাং ভলিউম রিডাকশন সার্জারি বা অতি গুরুতর অবস্থায় ফুসফুস প্রতিস্থাপন, উপকার দিতে পারে।
প্রতিরোধ ও জীবনধারা
COPD প্রতিরোধের মূল চাবিকাঠি হলো ক্ষতিকর কণা ও ধোঁয়া থেকে সর্বোচ্চ দূরে থাকা। ধূমপান ছাড়ার পাশাপাশি পরোক্ষ ধূমপান এড়িয়ে চলা, দূষিত পরিবেশে কম যাতায়াত, কর্মক্ষেত্রে সুরক্ষা মেনে চলা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ইনফ্লুয়েঞ্জা ও নিউমোনিয়ার টিকা COPD রোগী বা ঝুঁকিপূর্ণ ব্যক্তিদের জন্য বিশেষভাবে উপকারী।
COPD নিয়ে বেঁচে থাকতে কিছু দৈনন্দিন অভ্যাসও উপকারী হতে পারে। পাশাপাশি মানসিক ও সামাজিক সহায়তা—কাউন্সেলিং, সহায়তা গোষ্ঠী বা পরিবার—রোগীদের একাকিত্ব ও উদ্বেগ কমাতে সাহায্য করে।
আরও পড়ুন