Ad
Advertisement
Doctor TV

শনিবার, ১৩ ডিসেম্বর, ২০২৫


স্বাস্থ্যকর খাবার খেলেও কেন বাড়ছে ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স? বিশেষজ্ঞের সতর্কবার্তা

Main Image

ছবিঃ প্রতীকী


ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স এমন একটি বিপাকজনিত অবস্থা, যখন শরীরের কোষগুলো ইনসুলিনের প্রতি স্বাভাবিক সাড়া দিতে পারে না। এর ফলে রক্তে শর্করার মাত্রা বেড়ে যায়, শরীরে ক্লান্তি ও দুর্বলতা তৈরি হয়, পেটে মেদ জমতে থাকে এবং ধীরে ধীরে টাইপ–২ ডায়াবেটিস ও হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ে। অনেকেই স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ার চেষ্টা করেও এই সমস্যায় পড়েন। পুষ্টিবিদ লভনীত বাত্রা মনে করিয়ে দিয়েছেন সমস্যা খাবারের গুণে নয়, বরং দৈনন্দিন কিছু ছোট ভুলে, যেগুলো আমরা গুরুত্বই দিই না।

 

অনেকের ধারণা থাকে যে সালাদ মানেই ‘হেলদি’। কিন্তু বেশিরভাগ সালাদ ড্রেসিংয়ে থাকে মধু, বালসামিক গ্লেজ বা ফলের রস, যা অদৃশ্য সুগারের মতো কাজ করে। এসব হালকা ড্রেসিং দেখনে সহজ হলেও রক্তে শর্করা দ্রুত বাড়িয়ে দেয় এবং ইনসুলিনকে বারবার অতিরিক্ত কাজ করতে বাধ্য করে। ফলে দুপুরের দিকে বা সন্ধ্যায় হঠাৎ ক্ষুধা বেড়ে যাওয়া, এনার্জি কমে যাওয়া বা মিষ্টি খাওয়ার আকাঙ্ক্ষা তৈরি হয়। দীর্ঘমেয়াদে এই অভ্যাস ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্সের প্রবণতা বাড়িয়ে তোলে।

 

একইভাবে অনেকেই অ্যাপল সিডার ভিনিগার বা ACV–কে রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণের ‘জাদুকরী সমাধান’ ভেবে নেন। যদিও গবেষণা প্রমাণ করে, ACV খাবার হজমকে কিছুটা ধীর করে এবং গ্লুকোজের ওঠানামা কমায়, তবে এটি মূল সমস্যার সমাধান নয়। আপনি যদি অতিরিক্ত কার্বোহাইড্রেট খান, যথেষ্ট প্রোটিন ও ফাইবার না নেন, তাহলে ACV কোনোভাবেই সেই ঘাটতি পূরণ করতে পারবে না। তাই শুধুমাত্র ভিনিগার শটে নির্ভর করলে বরং শরীর আরও দুর্বল হয়ে পড়ে।

 

আরেকটি বড় ভুল হলো খালি পেটে ব্যায়াম করা। অনেকের ধারণা, ফাস্টিং ওয়ার্কআউট দ্রুত ফ্যাট বার্ন করে। সত্য হলেও, ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্ট ব্যক্তিদের জন্য এই পদ্ধতি উল্টো ক্ষতিকর। খালি পেটে শরীর স্বাভাবিকভাবেই বেশি কর্টিসল তৈরি করে, যা ফাস্টিং গ্লুকোজ বাড়িয়ে দেয় এবং বিশেষ করে সকালে কার্ডিও করলে শর্করা নিয়ন্ত্রণ আরও খারাপ হতে পারে। নারীরা ও যাদের পেটে মেদ বেশি, তারা এই প্রভাব বেশি অনুভব করেন।

 

অনেকেই মনে করেন গুড় বা মধু চিনি থেকে বেশি স্বাস্থ্যকর। কিন্তু বাস্তবে এগুলোর গ্লাইসেমিক ইনডেক্স প্রায় একই। শরীর সেগুলোকে প্রায় একইভাবে প্রক্রিয়া করে এবং দ্রুত রক্তে শর্করা বাড়ায়। ফলে বারবার ইনসুলিন বাড়ানো লাগে, আর দীর্ঘদিনে কোষগুলো ইনসুলিনের প্রতি সংবেদনশীলতা হারাতে থাকে।

 

ফলের ক্ষেত্রেও একই ভুল দেখা যায়। ফল পুষ্টিকর, কিন্তু অতিরিক্ত ফল খাওয়া—বিশেষ করে কলা, আঙুর বা আমের মতো উচ্চ কার্বযুক্ত ফল অল্প সময়েই শরীরে অতিরিক্ত গ্লুকোজ ঢুকিয়ে ফেলে। প্রোটিন বা ফ্যাট ছাড়া শুধু ফল খেলে গ্লুকোজ দ্রুত বাড়ে, যা দিনের মাঝামাঝি এনার্জি কমে যাওয়া এবং পেটে মেদ জমার প্রবণতা বাড়ায়। গবেষণায় দেখা গেছে, মিশ্র খাবারের তুলনায় শুধু ফল খেলে ইনসুলিন প্রতিক্রিয়া আরও বেশি হয়।

 

ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স কমাতে লভনীত বাত্রার প্রথম পরামর্শ হচ্ছে প্রতিটি খাবারে পর্যাপ্ত প্রোটিন রাখা। অন্তত ১৫–২০ গ্রাম প্রোটিন শরীরকে বেশি সময় তৃপ্ত রাখে, কার্বোহাইড্রেটের হজম ধীর করে এবং ইনসুলিনের ওঠানামা কমায়। ডিম, মুরগি, মাছ, টোফু, পনির বা গ্রিক দই সহজ উৎস হতে পারে। প্রোটিনের সাথে ফাইবার ও স্লো কার্বোহাইড্রেট থাকলে খাবারটি আরও ভারসাম্যপূর্ণ হয়। যেমন গ্রিলড চিকেনের সাথে সবজি ও কুইনোয়া, বা ডালের সাথে পালং ও মিষ্টি আলুর মতো সংমিশ্রণ রক্তে শর্করার গতি উল্লেখযোগ্যভাবে নিয়ন্ত্রণ করে।

 

ব্যায়ামের আগে একেবারে খালি পেটে না গিয়ে একটি ছোট প্রি ওয়ার্কআউট স্ন্যাক খেলে কর্টিসলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকে। এক টুকরো ফলের সঙ্গে বাদাম বা দইয়ের মতো হালকা খাবার ব্যায়ামের সময় গ্লুকোজের স্থিতিশীলতাকে ধরে রাখে এবং পরে অতিরিক্ত ক্ষুধা লাগা কমায়। ACV–ও খাবারের অংশ হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন সালাদ ড্রেসিংয়ে বা জলে মিশিয়ে যা খাবারের সামগ্রিক শর্করা শোষণ আরও নিয়ন্ত্রিত করে।

 

ফল অবশ্যই খাবেন, কিন্তু একসঙ্গে বেশি নয়। এবং চেষ্টা করবেন যেন ফলের সঙ্গে কিছু প্রোটিন বা স্বাস্থ্যকর ফ্যাট থাকে—যেমন বাদাম, দই বা নাট বাটার। এতে গ্লুকোজ শোষণ ধীরে হয় এবং ইনসুলিনের চাপ কমে।

সব মিলিয়ে, স্বাস্থ্যকর খাওয়া মানেই শুধু ‘হেলদি’ খাবার বেছে নেওয়া নয় বরং সঠিকভাবে খাওয়া, সঠিক মাত্রায় খাওয়া এবং সঠিকভাবে মিলিয়ে খাওয়া। লভনীত বাত্রা মনে করিয়ে দেন, আমাদের অজান্তে করা ছোট ছোট খাবারের ভুলই অনেক সময় ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স বাড়িয়ে দেয়। তবে সচেতনতার মাধ্যমে সহজেই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।

 

তথ্যসূত্রঃ TIO

আরও পড়ুন