Ad
Advertisement
Doctor TV

শনিবার, ১৩ ডিসেম্বর, ২০২৫


শীতে যে খাবার গুলো উষ্ণতা ও রোগ প্রতিরোধের শক্তি জোগাবে

Main Image

ছবিঃ প্রতীকী


শীতকাল প্রকৃতির কাছে একরকম উৎসব হলেও অনেকের শরীরের জন্য এটি যেন বাড়তি পরীক্ষার সময়। বাতাসে হালকা শিরশিরে ঠান্ডা, সকাল–সন্ধ্যার কুয়াশা আর রোদের উষ্ণতার অনিশ্চয়তা সব মিলিয়ে এই মৌসুমে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশ পরীক্ষার মুখে পড়ে। বিশেষ করে বয়স্ক মানুষ বা যাদের স্বাস্থ্যের ভেতরটা একটু দুর্বল—তারা অল্প ঠান্ডাতেই অসুস্থ হয়ে পড়েন। এ সময় ঘরে ঘরে সর্দি–কাশি, গলা ব্যথা, জ্বর লেগেই থাকে। তবে আনন্দের খবর হলো শীত এমনই একটি সময় যখন সঠিক খাবার বেছে নেওয়া গেলে শরীরকে গরম রাখা, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানো এবং সার্বিক সুস্থতা বজায় রাখা খুব একটা কঠিন নয়।

 

পুষ্টিবিদদের মতে, শীত এমন অনেক পুষ্টিকর খাবারের মৌসুম, যেগুলো শরীরকে ভেতর থেকে শক্তিশালী করে তুলতে পারে। চলুন জেনে নেওয়া যাক শীতকালের আদর্শ খাদ্যাভ্যাস এবং কোন খাবারগুলো রাখতে পারেন আপনার দৈনন্দিন তালিকায়।

 

বাদাম ও বীজ: স্বাস্থ্যকর ফ্যাটের চাবিকাঠি

শরীরকে উষ্ণ রাখতে স্বাস্থ্যকর ফ্যাট অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আখরোট, কাঠবাদাম, পেস্তা এই বাদামগুলোতে রয়েছে ওমেগা–৩, ভিটামিন ই এবং নানা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যা শুধু শরীর গরম রাখে না, বরং ত্বককে শুষ্ক হওয়া থেকেও রক্ষা করে। তিসি, সূর্যমুখীর বীজ বা সাদা তিলের মতো বীজজাত খাবারও শীতকালে দারুণ উপকারী। এগুলো ধীরে হজম হয়, ফলে দীর্ঘক্ষণ ধরে শরীর তাপ সংরক্ষণ করতে পারে। নিয়মিত অল্প পরিমাণে বাদাম–বীজ খেলে শীতের দুর্বলতা কমে এবং শরীরের শক্তি বাড়ে।

 

উষ্ণ পানীয়: শরীর-মনকে প্রশান্ত রাখার সহজ উপায়

শীতের সকালে বা সন্ধ্যায় গরম পানীয়ের এক কাপ যেন আরামের পাশাপাশি প্রয়োজনীয় চিকিৎসা।

 

ভেষজ চা

আদা, তুলসী, দারুচিনি, লবঙ্গ বা মধু দিয়ে তৈরি হরেক রকম হারবাল চা শীতকালে বিশেষভাবে উপযোগী। আদা শরীরকে উষ্ণ রাখে, গলা ব্যথা কমায়। তুলসী ভাইরাসজনিত সংক্রমণ প্রতিরোধ করে ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।

 

হলুদ দুধ

গরম দুধের সঙ্গে এক চিমটি হলুদ মিশিয়ে তৈরি ‘হলুদ দুধ’ শীতের এক অনন্য পেয়ালা। এতে থাকা কারকিউমিন অ্যান্টি–অক্সিড্যান্ট ও অ্যান্টি–ইনফ্লেমেটরি গুণে ভরপুর। বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রতিদিন রাতে গরম হলুদ দুধ পান করলে সর্দি–কাশি দূরে থাকে, ত্বক ভালো থাকে এবং রোগবালাই কম ধরে।

 

স্যুপ ও স্টু

সবজি, মুরগি, মাশরুম বা ডাল দিয়ে তৈরি স্যুপ শরীরকে গরম রাখার পাশাপাশি পানির ঘাটতি পূরণ করে। শীতকালের হালকা ক্লান্তি বা শুষ্কতার বিরুদ্ধে এটি কার্যকর সঙ্গী।

 

আদা-রসুন: রান্নাঘরের লুকানো ওষুধ

শীতের রান্নায় আদা ও রসুন যেন প্রাকৃতিক প্রতিরক্ষাব্যূহ। এ দুটি উপাদানে রয়েছে অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল ও অ্যান্টি–ইনফ্লেমেটরি উপাদান। এগুলো শরীরের ভেতরের প্রদাহ কমায়, সংক্রমণ প্রতিরোধ করে এবং শরীরকে উষ্ণ রাখে।

আদা-রসুনযুক্ত খাবার শরীরের রক্ত সঞ্চালনও উন্নত করে যার ফলে হাত-পা ঠান্ডা হয়ে যাওয়ার সমস্যাও কমে।

 

কমলালেবু: শীতের সেরা ফল

শীতের মৌসুম কমলালেবুর মৌসুম। ভিটামিন–সি—এটির সবচেয়ে বড় শক্তি। এই ভিটামিন শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়, সর্দি–কাশি প্রতিরোধ করে এবং ত্বক উজ্জ্বল রাখতে সাহায্য করে। পাশাপাশি কমলালেবুতে থাকা প্রাকৃতিক অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট শরীরকে বিভিন্ন ভাইরাল সংক্রমণ থেকে সুরক্ষা দেয়।

 

হলুদ: ছোট্ট মশলায় বড় উপকার

হলুদ শুধু রান্নার রং স্বাদের জন্য নয়; শীতকালে এটি শরীরের প্রাকৃতিক প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা জোরদার করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। কারকিউমিন–সমৃদ্ধ হলুদে রয়েছে ফোলেট, নিয়াসিন, ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম, সোডিয়াম, ফসফরাস, জিঙ্ক, ম্যাগনেসিয়াম, ভিটামিন সি, কে, ই—যা লিভার ভালো রাখে, শক্তি বাড়ায় এবং পুরো দেহকে সচল রাখে।

হলুদ দুধ, হলুদ মেশানো স্যুপ কিংবা রান্নায় নিয়মিত হলুদ ব্যবহার শীতকালীন যত্নের জন্য এগুলো বেশ উপকারী অভ্যাস হতে পারে।

 

শীতের ঠান্ডায় অসুস্থতার ভীতি যতটা সত্য, ততটাই সত্য যে সঠিক খাদ্য নির্বাচন করলে এই মৌসুমটি হতে পারে সবচেয়ে আরামদায়ক। বাদাম, বীজ, ভেষজ চা, স্যুপ, আদা–রসুন, কমলা ও হলুদের মতো প্রাকৃতিক খাবারগুলো শীতকালে শরীরকে গরম রাখে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং মন–মেজাজ ভালো রাখে। 

 

আরও পড়ুন