Ad
Advertisement
Doctor TV

মঙ্গলবার, ৪ নভেম্বর, ২০২৫


প্রতিরোধই স্ট্রোকের সেরা চিকিৎসা- বিশ্ব স্ট্রোক দিবসের অনুষ্ঠানে আহ্বান ঢামেক বিশেষজ্ঞদের

Main Image

ছবিঃ ডক্টরটিভি


“Every Time Counts” প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে বিশ্ব স্ট্রোক দিবস উপলক্ষে রবিবার (২ নভেম্বর) ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতাল চত্বরে বর্ণাঢ্য র‍্যালি ও ট্রেনিং কমপ্লেক্স গ্যালারিতে এক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়।

 

ঢামেকের নিউরোসার্জারি বিভাগের ডা. সুজন শরীফের সঞ্চালনায় আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন নিউরোসার্জারি বিভাগের অধ্যাপক ডা. শফিকুল ইসলাম। বিশেষ অতিথি ছিলেন হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. মো. আসাদুজ্জামান।

 

অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢামেক হাসপাতালের এন্ডোভাসকুলার ও স্ট্রোক সার্জারি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. শাহেদুর রহমান শিকদার। তিনি বলেন, “উন্নয়নশীল দেশে ৮৯ শতাংশ স্ট্রোক ঘটে। প্রতি মিনিটে প্রায় ১.৯ মিলিয়ন মস্তিষ্কের স্নায়ুকোষ (নিউরন) মারা যায়। তাই স্ট্রোকের রোগীদের জন্য সময় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সাড়ে চার ঘণ্টার মধ্যে চিকিৎসকের কাছে নেওয়া গেলে রোগীকে পুরোপুরি এবং ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আনা গেলে জীবন সুরক্ষা পায়।”


তিনি আরও বলেন, “স্ট্রোক সকল বয়সের মানুষের হতে পারে। তবে আশার কথা হলো, এসব রোগীদের চিকিৎসা যথেষ্ট দক্ষতার সঙ্গে দেশেই হচ্ছে। স্ট্রোক ইউনিট ছাড়া স্ট্রোকের সফল ও কার্যকর চিকিৎসা শতভাগ সম্ভব হয় না, এ কারণে আরও স্ট্রোক ইউনিট প্রতিষ্ঠার চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।”

 

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ঢামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. মো. আসাদুজ্জামান বলেন, “এখন রোগীরা বুঝতে পারে না তাদের স্ট্রোক হয়েছে কিনা, এই সচেতনতা মানুষের মাঝে তৈরি করাটা জরুরি হয়ে পড়েছে। স্ট্রোকের ক্ষেত্রে প্রতিরোধ অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। অনেক রোগের ক্ষেত্রে টাকা বা ভালো চিকিৎসা নিয়ে হয়তো সুস্থ হওয়া সম্ভব, কিন্তু স্ট্রোকের ক্ষেত্রে তাৎক্ষণিক চিকিৎসা না নিলে মৃত্যু বা পঙ্গুত্বের ঝুঁকি তৈরি হয়। সে জন্য সচেতনতা ও প্রতিরোধই এই রোগের সবচেয়ে বড় সমাধান।”


তিনি আরও বলেন, “স্বাধীনতার এত বছর পর এসেও স্ট্রোকের চিকিৎসা অনেকাংশেই ঢাকা-কেন্দ্রিক। বিভাগীয় ও জেলা শহরগুলোতে স্ট্রোকের চিকিৎসা ব্যবস্থা নিশ্চিত করা জরুরি।”

 

সভাপতির বক্তব্যে অধ্যাপক ডা. মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, “প্রতি চার জনে একজনের স্ট্রোক হয়, তবে এই স্ট্রোক নব্বই ভাগই প্রতিরোধ করা সম্ভব। এতে করে আমাদের আর চিকিৎসা পর্যন্ত যাওয়ার প্রয়োজনই হল না।”


তিনি আরও যোগ করেন, “সারাদেশে স্ট্রোক সেন্টার হওয়া প্রয়োজন এবং মানুষের ঘনত্বের ভিত্তিতে সারা দেশকে স্ট্রোক সেন্টারের আওতায় আনতে হবে। স্ট্রোক বিষয়ে সচেতনতার জন্য সামাজিক আন্দোলন তৈরি করতে হবে।”

 

অধ্যাপক ডা. ফজলে এলাহী মিলাদ বলেন, “অসংক্রামক রোগের ওষুধ বন্ধ করলে স্ট্রোকের ঝুঁকি বেড়ে যায়।” তিনি সবাইকে সুশৃঙ্খল জীবনযাপন ও অস্বাস্থ্যকর খাবার বর্জনের আহ্বান জানান।


ফিজিক্যাল মেডিসিন বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মনিরুজ্জামান বলেন, “স্ট্রোকের সকল রোগী, বিশেষ করে বয়স্কদের সার্জারি করা সম্ভব হয় না। সেই রোগীদের ফিজিক্যাল ট্রিটমেন্টের মাধ্যমে চিকিৎসা দেওয়া হয়।”

 

অনুষ্ঠানে বক্তারা স্ট্রোক চিকিৎসায় হটলাইন চালু ও স্ট্রোক অ্যাম্বুলেন্স সেবা প্রবর্তনের প্রস্তাব দেন। পাশাপাশি সচেতনতা বৃদ্ধিতে সরকার ও সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের কার্যকর ভূমিকা রাখার আহ্বান জানান।

সাংবাদিকদের প্রশ্নোত্তর পর্বের মাধ্যমে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিউরোসার্জারি বিভাগের আয়োজিত এই অনুষ্ঠানটি শেষ হয়।

আরও পড়ুন