Ad
Advertisement
Doctor TV

রবিবার, ২৬ অক্টোবর, ২০২৫


ওষুধ খাওয়ার সময় পানি কেন জরুরি

Main Image

ছবিঃ প্রতীকী


অনেকের জীবনেই নিয়মিত ওষুধ খাওয়া একটি স্বাভাবিক ব্যাপার। কারও জ্বর বা কাশি হলে সাময়িকভাবে, আবার কারও ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ বা হৃদরোগের মতো দীর্ঘস্থায়ী অসুখের জন্য প্রতিদিনই ওষুধ খেতে হয়। কিন্তু ওষুধ খাওয়ার পদ্ধতি অনেক সময় উপেক্ষিত হয়। কেউ এক গ্লাস পানি দিয়ে ওষুধ খান, আবার কেউ কেউ ভাবেন পানির দরকার নেই, শুকনো ভাবেই খেয়ে নেন। অথচ, পানি ছাড়া ওষুধ খেলে তা শরীরে ঠিকভাবে কাজ নাও করতে পারে, বরং হজমতন্ত্রে অস্বস্তি বা ক্ষতি হতে পারে।

 

পানি ওষুধকে গলার ভেতর দিয়ে নিরাপদে পাকস্থলীতে পৌঁছাতে সাহায্য করে। একই সঙ্গে দ্রুত গলে গিয়ে শরীরে শোষিত হয়। পর্যাপ্ত পানি না খেলে ওষুধ গলা বা খাদ্যনালিতে আটকে যেতে পারে, এতে অস্বস্তি, ব্যথা এমনকি ক্ষত পর্যন্ত হতে পারে। তাই কতটা পানি খাবেন এবং কোন নিয়মে ওষুধ খাবেন এ বিষয়ে সচেতন হওয়া খুবই জরুরি।

 

কেন পানি খাওয়া জরুরি

ওষুধ খাওয়ার সময় পানি পান করা শুধু অভ্যাস নয়, এটি আসলে নিরাপত্তার জন্য অপরিহার্য। কারণ:

১. সহজে গলাধঃকরণ – পানি ছাড়া বড়ি গলায় আটকে যেতে পারে, পানি ওষুধকে মসৃণভাবে পাকস্থলীতে নামতে সাহায্য করে।

২. দ্রুত গলানো – পানি ওষুধকে দ্রুত গলতে সাহায্য করে, ফলে শরীরে সহজে শোষিত হয়।

৩. হজমতন্ত্রের সুরক্ষা – কিছু ওষুধ সরাসরি গলা বা পাকস্থলীর আস্তরণে জ্বালা সৃষ্টি করতে পারে। পানি ছাড়া খেলে ঝুঁকি আরও বেড়ে যায়।

৪. কার্যকারিতা বজায় রাখা – অনেক ওষুধ ধীরে বা নির্দিষ্ট সময়ে গলতে তৈরি করা হয়। পানি ছাড়া খেলে এই প্রক্রিয়া বিঘ্নিত হতে পারে।

 

কতটা পানি খাবেন

সাধারণ নিয়ম হলো প্রতিবার ওষুধ খাওয়ার সময় অন্তত এক গ্লাস (২০০–২৫০ মিলিলিটার) পানি খাওয়া উচিত।

  • ১. বড় বা ক্যাপসুল জাতীয় ওষুধের জন্য বেশি পানি প্রয়োজন।
  • ২. দীর্ঘমেয়াদি বা ধীরে গলতে হয় এমন ওষুধের কার্যকারিতা বজায় রাখতে যথেষ্ট পানি জরুরি।
  • ৩. যাদের গিলতে সমস্যা হয় বা খাদ্যনালি সংবেদনশীল, তাদের জন্য পানি আরও বেশি সহায়ক।

NIH-এর একটি গবেষণা বলছে, ৬০ মিলিলিটারের কম পানি বা শুধু লালা দিয়ে ওষুধ খেলে তা দীর্ঘ সময় খাদ্যনালিতে আটকে থাকতে পারে। এতে জ্বালা, ব্যথা বা আস্তরণ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে।

 

পানি ছাড়া ওষুধ খাওয়ার ঝুঁকি

ওষুধ খাওয়ার সময় পানি এড়িয়ে গেলে যে সমস্যা হতে পারে:

  • ১. গলায় বা খাদ্যনালিতে আটকে গিয়ে ক্ষত বা জ্বালা তৈরি হতে পারে।
  • ২. ব্যথানাশক বা অ্যান্টিবায়োটিকের মতো কিছু ওষুধ পাকস্থলীতে আলসারের ঝুঁকি বাড়ায়।
  • ৩. দেরিতে গলে, ফলে ওষুধের কার্যকারিতা কমে যায়।
  • ৪. অস্বস্তি, বমি ভাব, গ্যাস্ট্রিক বা অজীর্ণতার সমস্যা বেড়ে যায়।

 

ওষুধ খাওয়ার সঠিক নিয়ম

ওষুধের কার্যকারিতা বজায় রাখতে এবং শরীরকে সুরক্ষিত রাখতে কিছু সহজ অভ্যাস মেনে চলা জরুরি:

  • ১. গরম বা কুসুম গরম পানি ব্যবহার করুন – ঠান্ডা পানির তুলনায় এগুলো ওষুধ দ্রুত গলতে সাহায্য করে।
  • ২. খাওয়ার পর সঙ্গে সঙ্গে শুয়ে পড়বেন না – অন্তত আধা ঘণ্টা সোজা হয়ে থাকুন। এতে ওষুধ সহজে পাকস্থলীতে নেমে যায়।
  • ৩. খালি পেটে বা খাবারের পর – নির্দেশনা অনুযায়ী সময় মেনে খাবেন। খালি পেটে খেতে হলে খাবারের অন্তত আধা ঘণ্টা আগে, আর খাবারের পর খেতে হলে অন্তত আধা ঘণ্টা পর খান।
  • ৪. দুধ বা জুস এড়িয়ে চলুন – এগুলো অনেক ওষুধের শোষণ প্রক্রিয়ায় বাধা দেয়। কেবল চিকিৎসক অনুমতি দিলে পান করুন।

 

ওষুধ খাওয়ার সময় এক গ্লাস পানি শুধু অভ্যাস নয়, এটি ওষুধকে কার্যকর ও শরীরকে সুরক্ষিত রাখার একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ। পানি ওষুধকে সঠিকভাবে পাকস্থলীতে পৌঁছে দেয়, দ্রুত গলতে ও শোষিত হতে সাহায্য করে এবং অস্বস্তি বা আলসারের ঝুঁকি কমায়।

তাই ওষুধ খাওয়ার সময় সবসময় অন্তত এক গ্লাস পানি পান করুন, খাবারের সময় মেনে চলুন এবং দুধ-জুস এড়িয়ে চলুন। ছোট ছোট এই অভ্যাসগুলোই চিকিৎসাকে কার্যকর করে তোলে এবং আপনার সামগ্রিক স্বাস্থ্যের সুরক্ষা নিশ্চিত করে।

 

তথ্যসূত্রঃ টিওআই

আরও পড়ুন