Ad
Advertisement
Doctor TV

রবিবার, ২৬ অক্টোবর, ২০২৫


হৃদযন্ত্রে ক্যান্সার: বিরল এক অজানা হুমকি

Main Image

ছবিঃ প্রতীকী


আমরা সবাই ক্যান্সারের নাম শুনলেই সাধারণত ফুসফুস, স্তন, কোলন কিংবা লিভারের মতো অঙ্গের কথা ভাবি। কিন্তু জানেন কি, ক্যান্সার কখনো কখনো হৃদযন্ত্রেও হতে পারে? যদিও এটি পৃথিবীর সবচেয়ে বিরল ক্যান্সারগুলোর একটি, তবুও একে অবহেলা করার সুযোগ নেই। কারণ একবার শনাক্ত হলে এর চিকিৎসা অত্যন্ত কঠিন এবং জটিল হয়ে দাঁড়ায়।

 

হার্ট ক্যান্সার কী

হার্ট ক্যান্সার হলো এমন এক অবস্থা যেখানে হৃদযন্ত্রের ভেতরে বা আশপাশে অস্বাভাবিক কোষ নিয়ন্ত্রণহীন ভাবে বাড়তে থাকে এবং টিউমার তৈরি করে। অন্য অঙ্গের ক্যান্সারের তুলনায় এটি অনেক বেশি দুর্লভ, তাই ডাক্তারদের জন্যও দ্রুত শনাক্ত করা কঠিন হয়ে পড়ে।

এটি মূলত দুই ধরনের হতে পারে:

প্রাইমারি হার্ট ক্যান্সার – সরাসরি হৃদযন্ত্রের ভেতরে তৈরি হয়। সাধারণত এটি সারকোমা নামে পরিচিত টিউমার আকারে দেখা দেয়।

সেকেন্ডারি হার্ট ক্যান্সার – শরীরের অন্য কোনো অঙ্গে ক্যান্সার হলে তা ছড়িয়ে হৃদযন্ত্রে চলে আসে। যেমন: ফুসফুস, স্তন, কিডনি বা থাইমাসের ক্যান্সার।

 

কেন এত বিরল

হৃদযন্ত্রমূলত মাংসপেশি ও সংযোজক টিস্যুদিয়ে তৈরি। এসব কোষ খুবধীরে বিভাজিত হয়, মানে নতুনকোষ খুব কম তৈরি হয়। ফলে এখানে মিউটেশন হওয়ার সম্ভাবনাও কম থাকে।

অন্যদিকে, ফুসফুস, স্তন, কোলন বা অগ্ন্যাশয়েরমতো অঙ্গগুলো এপিথেলিয়াল টিস্যু দিয়ে গঠিত, যেগুলো প্রতিনিয়ত নতুন কোষ তৈরি করে। এ কারণে এগুলোতে মিউটেশন হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি এবং ক্যান্সারও বেশি দেখা যায়। অর্থাৎ, হৃদযন্ত্রের টিস্যুর ধীরগতির কারণে এটি এক অর্থেক্যান্সারের বিরুদ্ধে প্রাকৃতিক সুরক্ষা দেয়।

 

গবেষণা কী বলছে

কার্ডিও-অঙ্কোলজি জার্নালে প্রকাশিত এক গবেষণায় দেখাগেছে

  • ১. প্রাইমারি কার্ডিয়াক সারকোমা অত্যন্ত বিরল হলেও প্রায় সব ক্ষেত্রেই প্রাণঘাতী।
  • ২. গড়ে ৪৫ থেকে ৫০ বছর বয়সীদের মধ্যে বেশি দেখা যায়।
  • ৩. পুরুষদের মধ্যে এর ঝুঁকি কিছুটা বেশি।
  • টিউমারের বৈচিত্র্য এত বেশি যে অনেক সময় একে শনাক্ত করতেই উন্নত প্রযুক্তি লাগে।

 

কীভাবে হয় এই ক্যান্সার

হৃদযন্ত্রেক্যান্সার হওয়ার পেছনে কয়েকটি কারণ থাকতে পারে:

  • জেনেটিক পরিবর্তন (Genetic mutation): যেমনPOT1 জিনে পরিবর্তন, যা বাবা-মা থেকে সন্তান পেতে পারে।
  • রেডিয়েশনের প্রভাব: দীর্ঘ সময় রেডিয়েশনের সংস্পর্শে থাকলে কোষ ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
  • পরিবেশ দূষণ বা টক্সিন: বিষাক্ত রাসায়নিক বা দূষণও ঝুঁকি বাড়ায়।
  • পরিবারে ক্যান্সারের ইতিহাস: বংশগত ঝুঁকিও ভূমিকা রাখতে পারে।

তবেএ সব কিছুর পরওহার্ট ক্যান্সার অত্যন্ত বিরল, কারণ হৃদযন্ত্রের টিস্যুতেকোষ বিভাজন ধীরগতির।

 

কোন লক্ষণগুলো দেখা দিতে পারে

হার্ট ক্যান্সারের উপসর্গগুলো অনেক সময় সাধারণ হৃদরোগের মতো মনে হয়।তাই রোগটি প্রাথমিক পর্যায়ে ধরা কঠিন হয়েপড়ে। তবে কিছু লক্ষণ বিশেষভাবে খেয়াল করার মতো:

  • ১. হঠাৎ হৃদযন্ত্র দুর্বল হয়ে পড়া বা হার্ট ফেইলিওর
  • ২. অস্বাভাবিক ক্লান্তি, শ্বাসকষ্ট
  • ৩. বুকব্যথা বা বুকের ভেতরে চাপ
  • ৪. অনিয়মিত হৃদস্পন্দন বা অ্যারিদমিয়া
  • ৫. মাথা ঘোরা বা অজ্ঞান হয়ে যাওয়া
  • ৬. হৃদযন্ত্রের চারপাশে তরল জমা হওয়া (পেরিকার্ডিয়াল এফিউশন)
  • ৭. অকারণে ওজন কমে যাওয়া
  • ৮. দীর্ঘস্থায়ী পিঠব্যথা বা রক্ত ওঠা কাশি
  • ৯. বিভ্রান্তি বা স্মৃতিশক্তি কমে যাওয়া

এসব উপসর্গ অন্য হৃদরোগের সাথেও মিলে যায়। তাই অনেকসময় রোগ ধরা পড়ে দেরিতে, যখন এটি বেশ এগিয়ে গেছে।

 

চিকিৎসা কীভাবে করা হয়

হার্টক্যান্সারের এখনো কোনো স্থায়ীচিকিৎসা নেই। তবে কিছুচিকিৎসা রোগীর উপসর্গ কমাতে এবং আয়ু কিছুটাবাড়াতে সাহায্য করতে পারে। যেমন

  • কেমোথেরাপি ও রেডিয়েশন থেরাপি: টিউমার ছোট করতে বা ছড়িয়ে পড়া ঠেকাতে।
  • সার্জারি: টিউমার কেটে ফেলা, তবে টিউমারের অবস্থান ও আকারের কারণে এটি সব সময় সহজ নয়।
  • অটো-ট্রান্সপ্লান্টেশন: খুব বিরল একটি পদ্ধতি যেখানে হৃদযন্ত্র সাময়িকভাবে বের করে টিউমার কেটে আবার বসানো হয়।
  • হার্ট ট্রান্সপ্লান্ট: চূড়ান্ত পর্যায়ে নতুন হৃদযন্ত্র প্রতিস্থাপন করা হতে পারে।

সেকেন্ডারিহার্ট ক্যান্সারের ক্ষেত্রে চিকিৎসার মূল লক্ষ্য থাকেআসল ক্যান্সারকে নিয়ন্ত্রণে আনা, যেখান থেকেএটি হৃদযন্ত্রে ছড়িয়েছে।

 

হৃদযন্ত্রে ক্যান্সার এতটাই বিরল যে অনেক চিকিৎসকই জীবনে একবারও এ ধরনের রোগীর মুখোমুখি হন না। তবে বিরল হলেও এটি মারাত্মক এবং দ্রুত প্রাণঘাতী হয়ে উঠতে পারে।তাই উপসর্গগুলো অবহেলা না করে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।

আরও পড়ুন