Ad
Advertisement
Doctor TV

শনিবার, ৪ অক্টোবর, ২০২৫


চিকিৎসক-নার্সদের সর্বনিম্ন বেতন বাংলাদেশে, পেশাগত উৎসাহ ও স্বাস্থ্যসেবা হুমকির মুখে

Main Image

ছবিঃ প্রতীকী


দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশে চিকিৎসক ও নার্সদের গড় বেতন সবচেয়ে কম, যা শুধু প্রতিবেশী দেশ নয়, উন্নত দেশগুলোর তুলনায়ও প্রায় ৩০ গুণ পর্যন্ত কম। এই বৈষম্য স্বাস্থ্যসেবার মান এবং দক্ষ জনবল ধরে রাখার ক্ষেত্রে বড় সংকট তৈরি করছে বলে সতর্ক করেছেন বিশেষজ্ঞরা। গত মঙ্গলবার (৩০ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর সিরডাপ অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠিত ‘স্বাস্থ্যখাতে কর্মরত সরকারি-বেসরকারি জনবলের বেতন নীতি: বর্তমান বাস্তবতা, চ্যালেঞ্জ ও সুপারিশ’ শীর্ষক এক আলোচনায় এসব তথ্য তুলে ধরা হয়। আয়োজনে ছিল অ্যালায়েন্স ফর হেলথ রিফর্মস, বাংলাদেশ। অনুষ্ঠানে অংশ নেন দেশের নীতিনির্ধায়ক, শিক্ষাবিদ ও স্বাস্থ্যখাতের বিভিন্ন পর্যায়ের পেশাজীবীরা।

 

সভায় সভাপতিত্ব করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক সৈয়দ আব্দুল হামিদ। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লিনিক্যাল অনকোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান এবং স্বাস্থ্যখাত সংস্কার কমিশনের সদস্য অধ্যাপক ডা. সৈয়দ আকরাম হোসেন। তিনি জানান, বাংলাদেশে একজন চিকিৎসকের গড় বার্ষিক বেতন মাত্র ৩ লাখ টাকা। তুলনায় যুক্তরাজ্যে একজন চিকিৎসক বছরে পান প্রায় ৯৮ লাখ টাকা এবং সিঙ্গাপুরে এই অঙ্ক ১১ লাখ টাকার মতো। নার্সদের ক্ষেত্রেও বাংলাদেশের বেতন কাঠামো আশঙ্কাজনকভাবে পিছিয়ে। ভারতের একজন চিকিৎসক গড়ে ১৬ লাখ টাকা পান, নার্সদের গড় বার্ষিক আয় প্রায় ৬ লাখ টাকা, যা বাংলাদেশের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ। এমনকি নেপালের মতো অপেক্ষাকৃত কম সম্পদশালী দেশেও স্বাস্থ্যকর্মীদের বেতন বাংলাদেশ থেকে বেশি।

 

অধ্যাপক হোসেন সতর্ক করে বলেন, এ ধরনের বেতন বৈষম্য শুধু পেশাগত উৎসাহ কমায় না, অনেক দক্ষ চিকিৎসক বিদেশে চলে যেতে বাধ্য হন, যার ফলে দেশের স্বাস্থ্যব্যবস্থা দুর্বল হয়ে পড়ে। তিনি আরও বলেন, চিকিৎসক-নার্সদের বেতন বৃদ্ধি করলে স্বাস্থ্যখাত শক্তিশালী হবে এবং দক্ষ জনবলের দেশত্যাগ কমবে। সরকার ইতোমধ্যে এই বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে বলেও জানান তিনি। সভায় বক্তারা চিকিৎসকদের জন্য একটি স্বতন্ত্র বেতন নীতি প্রণয়নের দাবি জানান এবং বলেন, তাদের জন্য আলাদা পে কমিশন গঠন করা প্রয়োজন। পাশাপাশি বেতন ও ভাতা যৌক্তিক হারে নির্ধারণ করে প্রতি তিন বছর পরপর হালনাগাদ করতে হবে।

 

বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতির সভাপতি ও স্বাস্থ্যখাত সংস্কার কমিশনের প্রধান অধ্যাপক একে আজাদ খান বলেন, স্বাস্থ্যখাতের উন্নয়নের জন্য মানবসম্পদের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা অপরিহার্য। বর্তমান বেতন কাঠামো স্বাস্থ্যসেবার ভিত্তিকে দুর্বল করছে। সরকারি ও বেসরকারি খাতে বেতনের বৈষম্য শুধু দক্ষতা ও কর্মপ্রেরণায় নয়, দেশের স্বাস্থ্যসেবার সামগ্রিক মানেও প্রভাব ফেলছে। সভায় আরও বক্তব্য রাখেন পে কমিশনের অধ্যাপক সৈয়দ আতিকুল হক, শ্রম ও স্বাস্থ্য সংস্কার কমিশনের সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহমেদ, জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের অধ্যাপক ডা. শাহিনা সোবহান মিতু, ড্যাবের মহাসচিব ডা. মো. জহিরুল ইসলাম শাকিল এবং এনডিএফ-এর সেক্রেটারি অধ্যাপক ডা. মাহমুদ হোসেন।

আরও পড়ুন