Ad
Advertisement
Doctor TV

সোমবার, ৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৫


খালি পায়ে হাঁটা বনাম জুতো পরে হাঁটা: কোনটি বেশি স্বাস্থ্যকর

Main Image

ছবিঃ প্রতীকী


মানুষের জীবনযাত্রা বদলে গেছে যুগে যুগে। একসময় মানুষ প্রকৃতির সন্তান হয়ে খালি পায়ে হেঁটেছে মাঠে, নদীর পাড়ে কিংবা বনের ভেতর দিয়ে। কিন্তু সভ্যতার অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে মাটির সেই সরাসরি স্পর্শ ঢেকে গেছে চামড়া, কাপড় কিংবা আধুনিক প্রযুক্তির জুতোর আবরণে। এখন প্রশ্ন উঠছে আসলে কোন পথ আমাদের জন্য বেশি স্বাস্থ্যকর? খালি পায়ে চলার প্রাকৃতিক অভিজ্ঞতা, নাকি আধুনিক জুতোর সুরক্ষিত আরাম?

 

খালি পায়ে হাঁটার সৌন্দর্য ও বিজ্ঞান

খালি পায়ে হাঁটা কেবল একটি শারীরিক অভ্যাস নয়, এটি একপ্রকার প্রকৃতির সঙ্গে মিশে যাওয়ার অনুভূতি। মাটি বা ঘাসের প্রতিটি দানা, শীতল শিশির কিংবা কাঁচা মাটির উষ্ণতা সবকিছুই শরীরকে ভিন্নভাবে জাগিয়ে তোলে।

 

বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোণ

  • পায়ের পেশি শক্তিশালী হয়: জুতোর কারণে যেসব ক্ষুদ্র পেশি অব্যবহৃত থাকে, খালি পায়ে হাঁটার সময় সেগুলো সক্রিয় হয়ে ওঠে। এতে পায়ের গঠন মজবুত হয়।
  • ভারসাম্য উন্নত হয়: Journal of Foot and Ankle Research–এ প্রকাশিত একটি গবেষণায় দেখা গেছে, খালি পায়ে হাঁটা স্নায়ু ও মস্তিষ্কের মধ্যে সমন্বয় বাড়িয়ে ভারসাম্য রক্ষায় সহায়তা করে।
  • প্রাকৃতিক গেইট বা হাঁটার ভঙ্গি ফেরে: জুতোতে হিল বা কুশনের কারণে স্বাভাবিক হাঁটার ধরণ নষ্ট হয়, কিন্তু খালি পায়ে হাঁটলে ভঙ্গি ঠিক থাকে এবং হাঁটুর উপর চাপ কমে।
  • গ্রাউন্ডিং বা ‘আর্থিং’ প্রভাব: গবেষণায় আরও বলা হয়, খালি পায়ে মাটির সংস্পর্শে এলে শরীরে ইলেক্ট্রন প্রবাহ ঘটে, যা প্রদাহ ও মানসিক চাপ কমাতে সহায়ক হতে পারে।

তবে এ সব উপকারিতা সবার জন্য সমান নয়। ডায়াবেটিস, নিউরোপ্যাথি বা পায়ের বিকৃতির মতো সমস্যায় আক্রান্ত ব্যক্তিদের জন্য খালি পায়ে হাঁটা হতে পারে বিপজ্জনক।

জুতোর সুরক্ষা ও আধুনিক উদ্ভাবন

সভ্যতার বিকাশে মানুষ শুধু অলঙ্কার নয়, বরং প্রয়োজন থেকেই জুতোর ব্যবহার শুরু করেছে। আজকের আধুনিক জুতো বিজ্ঞানের এক বিস্ময়।

 

জুতোর উপকারিতা

  • শক শোষণ ও কুশনিং: হাঁটার সময় শরীরের ওজনের প্রায় দ্বিগুণ চাপ পায়ের ওপর পড়ে। জুতো সেই চাপ ভাগ করে হাড় ও জয়েন্টকে রক্ষা করে।
  • আর্ক সাপোর্ট: ফ্ল্যাট ফুট বা অতিরিক্ত আর্চ-যুক্ত মানুষের জন্য বিশেষ সাপোর্টযুক্ত জুতো হাঁটাকে সহজ করে।
  • সংক্রমণ ও আঘাত থেকে সুরক্ষা: বাইরের কাঁটা, কাচ, জীবাণু কিংবা রাসায়নিক পদার্থ থেকে জুতো পা বাঁচিয়ে রাখে।
  • চিকিৎসাগত সুবিধা: প্লান্টার ফ্যাসাইটিস, আর্থ্রাইটিস বা হাড়ের ব্যথায় আক্রান্ত রোগীদের জন্য বিশেষভাবে ডিজাইন করা অর্থোপেডিক জুতো চিকিৎসার অংশ হিসেবে ব্যবহৃত হয়।

আজকাল আবার “মিনিমালিস্ট শু” বা “বেয়ারফুট শু” জনপ্রিয় হচ্ছে, যেগুলো জুতোর সুরক্ষা বজায় রেখেও খালি পায়ে হাঁটার মতো অনুভূতি দেয়।

 

তাহলে কোন পথ সঠিক

সবার জন্য একক উত্তর নেই। আপনি যদি শক্তিশালী পেশি, ভালো ভারসাম্য এবং প্রকৃতির ছোঁয়া চান খালি পায়ে হাঁটা হতে পারে আদর্শ। তবে শুরুতে নরম ঘাস বা পরিষ্কার বালুকাবেলায় হাঁটা নিরাপদ।

  • আর যদি আপনি শহুরে জীবনে প্রতিদিন ব্যস্ত রাস্তায় হাঁটেন, কিংবা আপনার পায়ের গঠনে সমস্যা থাকে, তবে সঠিকভাবে মানানসই জুতোই আপনার সঙ্গী হওয়া উচিত।

 

একটি ভারসাম্যপূর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি

সবচেয়ে ভালো সমাধান হতে পারে পরিস্থিতি অনুযায়ী খালি পা ও জুতোর মেলবন্ধন।

  • ঘরে, পার্কে বা ঘাসে খালি পায়ে হাঁটা যেতে পারে।
  • কিন্তু জনসমাগমস্থল, রাস্তাঘাট বা ঝুঁকিপূর্ণ জায়গায় জুতো অপরিহার্য।

 

খালি পা হোক বা জুতো প্রতিটি পদক্ষেপেই আসল বিষয় হলো শরীরের ডাক শোনা। পায়ের সঙ্গে মাটির সম্পর্ক যতটুকু গভীর, ততটাই গুরুত্বপূর্ণ তাকে সুরক্ষিত রাখা। তাই সঠিক স্বাস্থ্যচর্চা হলো এই দুইয়ের মধ্যে সামঞ্জস্য খুঁজে নেওয়া। অবশেষে, সুস্থতার পথে সবচেয়ে নিরাপদ দিশা পেতে হলে নিজের জীবনধারা, শারীরিক অবস্থা এবং বিশেষজ্ঞের পরামর্শ মিলিয়েই বেছে নিতে হবে আপনার পথচলার রূপ।

আরও পড়ুন