Ad
Advertisement
Doctor TV

সোমবার, ৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৫


চুলের ডগা ফাটা : কারণ, প্রতিরোধ ও যত্ন

Main Image

ছবিঃ প্রতীকী


চুলের ডগা ফাটা বা Split Ends নারীদের ও পুরুষদের এক সাধারণ সমস্যা, যা সুপরিচর্যিত চুলকেও নিস্তেজ, রুক্ষ ও শুষ্ক করে তোলে। সাধারণত চুলের বাইরের সুরক্ষামূলক স্তর ক্ষতিগ্রস্ত হলে ভেতরের আঁশ উন্মুক্ত হয়ে ডগা বিভক্ত হয়। এ অবস্থার স্থায়ী সমাধান একমাত্র ছাঁটাই বা ট্রিমিং হলেও, যথাযথ যত্ন ও সচেতন অভ্যাসের মাধ্যমে এর প্রতিরোধ সম্ভব। প্রতিদিনের নানা কারণ যেমন অতিরিক্ত তাপ প্রয়োগ, রাসায়নিক প্রক্রিয়া, রূক্ষভাবে আঁচড়ানো কিংবা ঘুমের সময় বালিশের সঙ্গে ঘর্ষণ চুলকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। তবে স্নিগ্ধ ব্যবহারে, পুষ্টিদায়ক পরিচর্যায় ও সুরক্ষামূলক পদক্ষেপে চুলকে রাখা যায় অধিকতর স্বাস্থ্যোজ্জ্বল ও দৃঢ়। নিচে ডগা ফাটা প্রতিরোধের সাতটি কার্যকর উপায় তুলে ধরা হলো

 

ডগা ফাটা প্রতিরোধে ৭টি কার্যকর উপায়

১. ধোয়ার পর কোমল আচরণ

চুল ভেজা অবস্থায় সবচেয়ে দুর্বল থাকে। এ সময় তোয়ালে দিয়ে জোরে ঘষা হলে ঘর্ষণের ফলে সহজেই ভেঙে যায় ও ডগা ফেটে যায়। তাই নরম তোয়ালে দিয়ে আলতোভাবে মুছুন, অথবা মাইক্রোফাইবার তোয়ালে ব্যবহার করুন যা চুল টানাটানি ছাড়াই পানি শোষে নেয়। এ অভ্যাস ডগা দীর্ঘদিন অক্ষত রাখতে সহায়ক।

 

২. আঁচড়ানোর সময় ধৈর্যশীল হোন

জট ধরা চুলে জোর করে আঁচড়ালে চুলের অকাল ভাঙন ঘটে। আমেরিকান একাডেমি অব ডার্মাটোলজি (AAD) এর পরামর্শ হলো চওড়া দাঁতের চিরুনি ব্যবহার করা, যা তুলনামূলক কোমলভাবে চুলে চলে। সবসময় নিচ থেকে উপরের দিকে ধীরে ধীরে আঁচড়ান। প্রয়োজনে আঁচড়ানোর আগে লিভ-ইন কন্ডিশনার বা ডিট্যাংলিং স্প্রে ব্যবহার করুন।

 

৩. আর্দ্রতা বজায় রাখুন

শুষ্কতা চুলের ডগা ফাটার প্রধানতম কারণগুলির একটি। গভীর পুষ্টিদায়ক হেয়ার মাস্ক নিয়মিত ব্যবহার করলে চুলে আর্দ্রতা ফিরে আসে, চুল হয় অধিকতর কোমল, দীপ্তিময় ও ভাঙন-প্রতিরোধী। বাজারজাত মাস্ক যেমন ব্যবহার করতে পারেন, তেমনি ঘরোয়া উপাদান নারকেল তেল, মধু, অ্যালোভেরা বা অলিভ অয়েল দিয়েও চুলে পুষ্টি জোগানো যায়। সপ্তাহে অন্তত একবার হেয়ার মাস্ক প্রয়োগ বিশেষ উপকারী।

 

৪. তাপ প্রয়োগে সংযম

ব্লো-ড্রায়ার, স্ট্রেইটনার কিংবা কার্লিং আয়রনের মতো যন্ত্রের অতিরিক্ত ব্যবহার চুলের প্রোটিন দুর্বল করে ও আর্দ্রতা নষ্ট করে দেয়। সম্ভব হলে চুল প্রাকৃতিকভাবে শুকাতে দিন এবং হিট ছাড়া স্টাইলিং বেছে নিন। অপরিহার্য হলে সর্বনিম্ন তাপমাত্রায় যন্ত্র ব্যবহার করুন এবং অবশ্যই হিট প্রটেক্ট্যান্ট স্প্রে প্রয়োগ করুন।

 

৫. অতিরিক্ত আঁচড়ানো থেকে বিরত থাকুন

চুলকে প্রতিদিন ১০০ বার আঁচড়াতে হয় এটি সম্পূর্ণ ভ্রান্ত ধারণা। বরং অতিরিক্ত আঁচড়ানো চুলের প্রাকৃতিক তেল নষ্ট করে এবং ভাঙন বাড়ায়। কেবল প্রয়োজনেই আঁচড়ান এবং তা হোক ধীরে, স্নিগ্ধ ভঙ্গিতে। জট খুলতে ডিট্যাংলিং স্প্রে ব্যবহার করলে ক্ষতি কম হবে।

 

৬. সিল্কে বিশ্রাম নিন

কটন পিলোকভার ঘর্ষণ সৃষ্টি করে, যা দীর্ঘমেয়াদে চুল দুর্বল করে। সিল্ক বা সাটিনের পিলোকভার ব্যবহার করলে ঘুমের সময় চুল মসৃণভাবে সরে যায় এবং ভাঙন কমে। বিকল্পভাবে সিল্কের ওড়না বা ক্যাপ ব্যবহার করলেও একই সুরক্ষা পাওয়া সম্ভব।

 

৭. রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় বিরতি দিন

বারবার রং করা, পার্ম বা রিবন্ডিং করার ফলে চুল মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এ ঝুঁকি হ্রাসে একেকটি ট্রিটমেন্টের মধ্যে অন্তত ৮–১০ সপ্তাহ বিরতি রাখুন। একই সময়ে একাধিক কেমিক্যাল প্রসেস এড়িয়ে চলুন। প্রতিবার ট্রিটমেন্টের পর অবশ্যই আর্দ্রতাদায়ক মাস্ক বা কন্ডিশনার ব্যবহার করুন।
 

সুস্থ চুলের জন্য অপরিহার্য উপকরণ

  • চওড়া দাঁতের চিরুনি – ভেজা ও শুকনো চুলে কোমলভাবে আঁচড়ানোর জন্য।
  • রিপেয়ারিং হেয়ার মাস্ক – আর্গান অয়েল, কেরাটিন বা মধুসমৃদ্ধ মাস্ক বিশেষ উপকারী।
  • সিল্ক বা সাটিন পিলোকভার/ওড়না – ঘুমের সময় ঘর্ষণ প্রতিরোধে কার্যকর।
     

চুলের ডগা ফাটা একবার হলে তা সম্পূর্ণ সারানো সম্ভব নয়, তবে সাময়িকভাবে আড়াল করা যায়। নারকেল, আর্গান বা বাদাম তেল ব্যবহার করলে চুল মসৃণ দেখায়, উজ্জ্বলতা বাড়ে ও ফাটা অংশ কম দৃশ্যমান হয়। পাশাপাশি বান, বেণী বা নিচু পনিটেলের মতো হেয়ারস্টাইল ফাটা ডগা ঢেকে রাখতে সহায়ক। ইচ্ছা করলে হেয়ার এক্সটেনশন ব্যবহার করে তাৎক্ষণিক পরিপাটি লুকও পাওয়া যায়। তবে মনে রাখতে হবে স্থায়ী সমাধান একমাত্র নিয়মিত ট্রিমিং।

চুলের ডগা ফাটা এক প্রাকৃতিক প্রক্রিয়া হলেও, সঠিক পরিচর্যায় এর উপস্থিতি বিলম্বিত করা যায়। কোমল ব্যবহার, নিয়মিত আর্দ্রতা প্রদান, হিট ও রাসায়নিকের ব্যবহার সীমিত রাখা, এবং সিল্কের বালিশকভার ব্যবহার এসব ক্ষুদ্র কিন্তু কার্যকর অভ্যাসই চুলকে দেবে দৃঢ়তা, দীপ্তি ও দীর্ঘস্থায়ী সৌন্দর্য।

আরও পড়ুন