Ad
Advertisement
Doctor TV

সোমবার, ৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৫


ছুটির দিনে তৈলাক্ত খাবারের পর করণীয়

Main Image

ছবিঃ প্রতীকী


ছুটির দিনে আমাদের খাবারের টেবিলে আনন্দ যেন একটু বেশি রঙ ছড়িয়ে দেয়। বাসায় আয়োজন হোক কিংবা বাইরে খাওয়া—মেন্যুতে তখন স্থান পায় ভাজা–পোড়া, বিরিয়ানি, কাবাব কিংবা নানা রকম মশলাদার পদ। স্বাদের দিক থেকে এগুলো নিঃসন্দেহে আনন্দদায়ক, কিন্তু শরীরের জন্য প্রায়শই বোঝা হয়ে দাঁড়ায়। অতিরিক্ত তেল, ঝাল ও মশলা শুধু হজমে গোলমালই করে না, দীর্ঘমেয়াদে কোলেস্টেরল, স্থূলতা, এমনকি হৃদ্‌রোগের ঝুঁকি বাড়ায়। তবে সঠিক কিছু পদক্ষেপ নিলে এসব খাবারের বিরূপ প্রভাব অনেকটাই সামাল দেওয়া সম্ভব।

 

প্রথমেই ডিটক্স ওয়াটারের কথা বলা যায়। তৈলাক্ত খাবার খাওয়ার পরে শরীরের ভেতর যেন অদৃশ্য কিছু ভারীভাব তৈরি হয়। এক গ্লাস লেবুর রস, শসার রস ও পুদিনা পাতার মিশ্রণ সেই ভার লাঘব করতে সাহায্য করে। আধুনিক গবেষণায় দেখা গেছে, সাইট্রাস জাতীয় ফল ও শসার রস হজমতন্ত্রকে উদ্দীপিত করে এবং শরীর থেকে ক্ষতিকর উপাদান দ্রুত বের করে দেয়।

 

তৈলাক্ত খাবারের পরে গরম পানি হলো আরেকটি সহজ কিন্তু কার্যকর সমাধান। ঠান্ডা পানির বিপরীতে হালকা গরম পানি পাকস্থলীর রক্তসঞ্চালন বাড়ায়, ফলে খাবার দ্রুত ভাঙতে শুরু করে। এতে অস্বস্তি, ঢেকুর কিংবা বুকজ্বালার মতো সমস্যা কমে যায়।

 

শসার কথা আলাদাভাবে উল্লেখ না করলেই নয়। শসা শুধু ঠান্ডা সবজি নয়, এটি আসলে শরীরের জন্য এক প্রাকৃতিক শোধক। আয়ুর্বেদে শসাকে বলা হয় অগ্নিশমক—অর্থাৎ হজমের আগুনকে শান্ত রাখার উপাদান। তৈলাক্ত খাবারের এক থেকে দুই ঘণ্টা পর লবণ ছাড়া শসা খেলে পেটের ভারীভাব কমে এবং শরীর হালকা লাগে।

 

একইভাবে সাইট্রাস ফল যেমন লেবু, কমলা, মাল্টা বা বাতাবিলেবু শরীরের জন্য একেকটি প্রাকৃতিক ওষুধ। এগুলোর ভিটামিন সি শুধু রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাই বাড়ায় না, তেল ও চর্বির প্রভাবকেও নরম করে দেয়। অনেক ডাক্তারই তৈলাক্ত খাবারের পরে এক টুকরো লেবু খাওয়ার পরামর্শ দেন।

 

তবে একেবারেই বারণ রয়েছে খাওয়ার পরপর ঘুমিয়ে পড়া। বৈজ্ঞানিক গবেষণা বলছে, ভারী খাবার খাওয়ার সাথে সাথেই শুয়ে পড়লে পাকস্থলী সঠিকভাবে কাজ করতে পারে না। এর ফলে খাবার দীর্ঘক্ষণ জমে থাকে, অ্যাসিডিটি হয় এবং শরীরে চর্বি জমার ঝুঁকি কয়েকগুণ বেড়ে যায়। তাই অন্তত দুই থেকে তিন ঘণ্টা অপেক্ষা করেই ঘুমানো উচিত।

 

এ সময় প্রোবায়োটিক খাবারও শরীরের জন্য আশীর্বাদস্বরূপ। দই কিংবা অন্যান্য ফারমেন্টেড খাবারে যে উপকারী ব্যাকটেরিয়া থাকে, তা হজম প্রক্রিয়াকে দ্রুত ও কার্যকর করে তোলে। শুধু হজমই নয়, নিয়মিত প্রোবায়োটিক খেলে শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতাও বেড়ে যায়। তাই তৈলাক্ত খাবারের পরে এক কাপ টক দই খেলে পেট অনেকটা স্বস্তি পায়।

 

সবশেষে উল্লেখ করতে হয় হাঁটার কথা। আমাদের প্রাচীন চিকিৎসাশাস্ত্র বলে—“খাবারের পর হাঁটলে আয়ু বাড়ে।” আধুনিক বিজ্ঞানের ভাষায়ও একই কথা: খাওয়ার পর অন্তত ১০–১৫ মিনিট ধীরে হাঁটা হজমকে সহজ করে, ফ্যাট জমতে দেয় না, এমনকি ডায়াবেটিস ও স্থূলতাকেও নিয়ন্ত্রণে রাখে।

 

তবে কিছু বাড়তি সতর্কতাও জরুরি। তৈলাক্ত খাবারের পরে চা বা কফি এড়িয়ে চলা ভালো, কারণ এগুলো পাকস্থলীর অ্যাসিড বাড়ায়। প্রচুর পানি পান করলে শরীর ভারসাম্যে থাকে। আর প্রতিদিনের খাবারে যদি আঁশযুক্ত শাকসবজি, ডাল ও ফল রাখা যায়, তবে শরীর তৈলাক্ত খাবারের ক্ষতি সহজেই সামাল দিতে পারে।

আরও পড়ুন