সারাদেশে নতুন করে কোভিড-১৯ সংক্রমণ শুরু হয়েছে। এই নিয়ে মিডিয়ায় ব্যাপক আলোচনা চলছে। ইতোপূর্বে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সারাদেশে কোভিড-১৯ ইআরপিপি প্রকল্পের মাধ্যমে কোভিড-১৯ মোকাবেলা করার জন্য পর্যাপ্ত আধুনিক আরটি-পিসিআর ল্যাব, আইসিইউ তৈরি এবং নিয়োগের প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ১০০৪ জন দক্ষ এবং প্রশিক্ষিত জনবল তৈরি করে। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের বিষয় হল, এই দক্ষ জনবল গুলোকে কাজে না লাগিয়ে, এমনকি বেতন ভাতা পরিশোধ না করে বরং চাকরিচু্যত করা হচ্ছে। এই দক্ষ জনবল বিগত কোভিড-১৯ মোকাবেলায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন। বর্তমান এই জনবলগুলো কোভিড১৯ মোকাবেলার জন্য প্রস্তুত রয়েছে। তাদেরকে কাজে লাগালে স্বাস্থ্য সেবা পেতে সাধারণ মানুষের ভোগান্তি পোহাতে হবে না। সুতরাং স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকে দ্রুত পদক্ষেপ নিয়ে দক্ষ এবং প্রশিক্ষিত জনবলগুলোকে কাজে লাগানো প্রয়োজন।
করোনা ভাইরাস নিয়ন্ত্রণে সম্মুখ যোদ্ধা হিসেবে কোভিড-১৯ ইমারজেন্সি রেসপন্স এন্ড প্যানডেমিক প্রিপেয়ার্ডনেস প্রকল্পের অধীনে কর্মরত ১০০৪ জন জনবল বিগত ৪ মাস ধরে বেতন না পাওয়ায় মানবেতর জীবনযাপন করছে। ২০২০ সাল হতে করোনা ভাইরাস নিয়ন্ত্রণে ইআরপিপি প্রকল্পের অধীনে ডাক্তার থেকে শুরু করে ল্যাব কনসালট্যান্ট, নার্স, টেকনোলজিস্ট, কম্পিউটার অপারেটর, ল্যাব এটেনডেন্ড, ওয়ার্ডবয়য়, আয়া, এবং পরিচ্ছন্ন কর্মী দেশজুড়ে জীবনভয় তুচ্ছ করে অত্যত্ন নিষ্ঠর সাথে কাজ করে করেনা ভাইরাস মোকাবেলায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করে এসেছে।
১৯ আগষ্ট ২০২৪ তারিখে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের সভাপতিত্বে প্রকল্পের ১১তম প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি (পিআইসি) এর সভা অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত সভায় অতিরিক্ত মহাপরিচালক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন), স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, প্রকল্পের জরুরী জনবলের রাজস্বকরণের লক্ষ্যে, রাজস্বখতে পদসৃজনের জন্য কি পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে এ ব্যাপারে জানতে চান এবং প্রকল্প পরিচালক জানান রাজস্বখাতে জনবলের পদ সৃজনের প্রস্তাব স্বাস্থ্যসেবা বিভগে প্রেরণ করা হয়েছিলো এবং স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সুপারিশের আলোকে রাজস্বখতে জনবলের পদ সৃজনের প্রস্তাবনা পুনঃরায় প্রনয়নের কাজ চলছে। সভায় পরিচালক (পরিকল্পনা ও গবেষণা) মতামত প্রদান করেন যে, উক্ত প্রকল্পের সারাদেশেব্যাপী সেবাদান কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য জরুরি জনবলের রাজস্বকরণের বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ এবং এ ব্যাপারে সবার সার্বিক সহযোগী কামনা করেন। উক্ত সভায় রাজস্বখাতে জনবলের পদ সৃজনের প্রস্তাবনার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
পরবর্তীতে স্বাস্থ্য সেবা বিভগের সচিব মো: সাইদুর রহমান এর সভাপতিত্বে ৭ জানুয়ারি ২০২৫ তারিখে প্রকল্প স্টিয়ারিং কমিটির ১৩তম সভা অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত সভায় প্রকল্পের আওতায় চুক্তিবদ্ধ জনবলের মেয়াদ বৃদ্ধির জন্য অর্থ বিভাগের সম্মতি গ্রহণের জন্য পত্র প্রেরণের সিদ্ধান্ত হয় এবং প্রকল্প মেয়াদে সেবা চলমান রাখার জন্য প্রকল্পের জিওবি বরাদ্দের রাজস্ব অংশে অব্যয়িত অর্থ ব্যবহারের সিদ্ধান্ত এবং আন্তঃঅঙ্গ ব্যয় সমন্বয় প্রস্তাব দেওয়া হয়। উক্ত সভার প্রেক্ষিতে ৩০ জানুয়ারি ২০২৫ প্রকল্প পরিচালক ১২ পদের ১০০৪ জন জনবলকে ৭ টি ক্যাটাগরিতে বিভক্ত এবং তাদের নতুন বেতন কাঠামো উল্লেখ করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে প্ররণ করেন।
১৮ মার্চ ২০২৫ তারিখে স্বাস্থ্য সেবা বিভগের সচিব মো: সাইদুর রহমান এর সভাপতিত্তে প্রকল্প স্টিয়ারিং কমিটির ১৪ তম সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় প্রকল্প পরিচালক ১০০৪ জন জনবলের মেয়াদ জুন ২০২৫ পর্যন্ত বৃদ্ধির প্রস্তাব স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের মাধ্যমে অর্থ বিভাগে প্রেরণ করা হয়েছে বলে জানান। এ বিষয়ে অতিরিক্ত সচিব (পরিকল্পনা) স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ, এর প্রস্তাবের প্রেক্ষিতে অর্থ বিভাগের সংশ্লিষ্ট শাখায় যোগাযোগ করে অতিদ্রুত বিষয়টি সমাধানের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। একইসাথে উক্ত সভায় প্রকল্পের মেয়দ ৬ মাস (জুলাই ২০২৫ হতে ডিসেম্বর ২০২৫) বৃদ্ধির প্রস্তাব স্বাস্থ্য সেবা বিভাগে প্রেরণ ও পরিকল্পনা কমিশন কর্তৃক প্রণীত সমাপ্তির তালিকা হতে উক্ত প্রকল্পের নাম প্রত্যাহারের জন্য দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
পরবর্তীতে অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যয় ব্যবস্থপনা বিভাগ থেকে গত ২৩শে মার্চ ২০২৫ তারিখে জানানো হয় "কোভিড-১৯ ইআরপিপি" প্রকল্পের আওতায় চুক্তিবদ্ধ ১০০৪ জন জনবলের চুক্তির মেয়াদ বৃদ্ধিসহ প্রকল্পের জিওবি বরাদ্দের রাজস্ব অংশে অব্যয়িত অর্থ হতে সেবামূল্য পরিশোধের বিষয়টি বাজেট অনুবিভাগ সংশ্লিষ্ট হওয়ায় ব্যয় ব্যবস্থাপনা অনুবিভাগের কোন কার্যক্রম নেই। এবং প্রস্তাবটি পরবর্তী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্দেশক্রমে বাজেট-১ অনুবিভাগে প্রেরণ করা হয়। অথচ ৫ই মে ২০২৫ প্রকল্প বাস্তবায়ন শাখা-১ হতে জারি করা চিঠিতে বলা হয় প্রস্তাবিত ১০০৪ জন জনবলের আউটসোর্সিং প্রক্রিয়ায় নিয়োগ বিষয়ক অর্থ বিভাগের ব্যয় ব্যবস্থাপনা অনুবিভাগের সম্মতির কোন প্রমান নেই।
২৮ এপ্রিল ২০২৫ তারিখে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ হতে ১০০৪ জন জরুরি জনবলের বেতন প্রদানের লক্ষ্যে ১ জানুয়ারি ২০২৫ হতে ৩০ মার্চ ২০২৫ পর্যন্ত কর্মরত জনবলের হাজিরা শীট স্ব স্ব প্রতিষ্ঠান প্রধানের মাধ্যমে প্রেরণের জন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে চিঠি ইস্যু করে। পরবর্তীতে ৪ জানুয়ারি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিকল্পনা ও গবেষণা দপ্তর হতে প্রকল্প পরিচালকের মাধ্যমে প্রকল্পের আওতায় নিয়োজিত জনবলের প্রতিষ্ঠান প্রধানের কাছে জানুয়ারি হতে মার্চ পর্যন্ত কর্মরত জনবলের হাজিরার তথ্য চাওয়া হয়। উল্লেখ্য, উক্ত তথ্য চাওয়ার ২৪ ঘন্টার মধ্যে সারাদেশে কর্মরত প্রকল্পের জনবল তাদের স্ব স্ব প্রতিষ্ঠান প্রধানের মাধমে তিন মাসের (জানুয়ারি হতে মার্চ ২০২৫) হাজিরার তথ্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এবং প্রকল্প কার্যালয়ে প্ররণ করে। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের বিষয় ৫ মে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের প্রকল্প বাস্তবায়ন শাখা-১ হতে জানানে হয় যে ১জানুয়ারি ২০২৫ হতে প্রকল্পের সব জনবল অনুপস্থিত এবং তারা কোন বেতন প্রাপ্য হবেন না।
নিয়মিতভাবে কর্মস্থলে উপস্থিত এবং চাহিদা মত প্রতিষ্ঠান প্রধানের মাধমে তিন মাসের (জানুয়ারি থেকে মার্চ-২০২৫) হাজিরার তথ্য পাঠনোর পরেও স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের এমন সিদ্ধান্তে দিশেহারা হয়ে পরেছে কোভিড নিয়ন্ত্রণের সম্মুখ যোদ্ধা ইআরপিপি প্রকল্পের ১০০৪ জন দক্ষ জনবল।
সামগ্রিক দিক বিবেচনা করে মানবিক দৃষ্টিকোন থেকে কোভিড নিয়ন্ত্রণের ইআরপিপি প্রকল্পের ১০০৪ জন জনবলের বকেয়া বেতন, চুক্তি বর্ধিতকরণ ও প্রকল্পের আওতায় প্রতিষ্ঠিত পিসিআর ল্যাব, মর্ডার্ণ মাইক্রোবায়োলজি ল্যাব, আইসিইউ ও এপিডেমিওলজিকাল ইউনিটের সেবা কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য প্রকল্পের দক্ষ জনবলের রাজস্বকরণের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ জানাচ্ছি।
লেখকঃ
শামীম শাহ
কোভিড-১৯ ইআরপিপি প্রকল্পের কর্মী।
আরও পড়ুন