Advertisement
Doctor TV

মঙ্গলবার, ১ এপ্রিল, ২০২৫


পবিত্র রমজান মাসে আমিরাতের চিকিৎসকদের ব্যস্ততার চিত্র

Main Image


পবিত্র রমজান মাসে সংযুক্ত আরব আমিরাতের চিকিৎসকসহ অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মীরা ধর্মীয় বিধিবিধান পালনের পাশাপাশি তাদের চ্যালেঞ্জিং পেশার ভারসাম্য রক্ষা করতে কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হন। প্রথম সারির চিকিৎসক ডা. করিশ্মা ওয়াহাবের মতে এই মাসটি প্রায়শই চলার পথে ইফতার সেরে নেয়া এবং একইসঙ্গে জীবন-মরণ পরিস্থিতি সামলানোর চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায়। খবর গালফ নিউজের।

 

প্রতিবেদনের শুরুতেই ডা. করিশ্মার অন্যতম স্মরণীয় ইফতারের ঘটনা তুলে ধরা হয়েছে। এতে বলা হয়, শারজাহর অ্যাস্টার হাসপাতালের জরুরি বিভাগে চিকিৎসক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন ডা. করিশ্মা।

 

তাঁর বর্ণনা অনুযায়ী- রোগীটিকে ইফতারের ঠিক আগে হাসপাতালে আনা হয়। তার জরায়ুর বাইরে গর্ভধারণ (একটপিক প্রেগনেন্সি) হয়েছিল এবং তা ফেটে গিয়েছিল। আমরা দ্রুত তাকে অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে যাই এবং সফলভাবে অস্ত্রোপচার সম্পন্ন করি। সৃষ্টিকর্তার অশেষ রহমতে আমরা তার জীবন বাঁচাতে সক্ষম হই। সেদিন রাত ১১টায় ইফতার করেছিলাম,। তারপরও একজন মা এবং একটি পরিবারকে রক্ষা করতে পারার আনন্দ সবকিছুর ঊর্ধ্বে ছিল বলে জানান ডা. করিশ্মা। 

 

জরুরি পরিস্থিতি ও অপ্রত্যাশিত চ্যালেঞ্জ: 

 

দুবাইয়ে অর্থোপেডিক ও ট্রমা সার্জারি রেসিডেন্ট ডা. মোহাম্মদ এলহাসান জানান, স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য জরুরি অবস্থা সামাল দেয়া একটি দৈনন্দিন ব্যাপার, যার ফলে সময় মতো ইফতার খাওয়া অনেক সময় সম্ভবপর হয় না। তিনি জানান, কীভাবে গত সপ্তাহে টানা তিন দিন অপারেশন থিয়েটারে কাটিয়েছেন। 

ডা. মোহাম্মদ এলহাসানের বর্নণা অনুযায়ী, কখনও কখনও জটিল অস্ত্রোপচার নির্ধারিত সময়ের চেয়ে বেশি সময় ধরে চলে। আবার কখনও জরুরি কেস চলে আসে,’ তিনি বলেন। ’এই রমজানে এক বৃদ্ধা পড়ে যান এবং তার নিতম্ব ভেঙে যায়। আমরা বিকেল ৫টায় অপারেশন শুরু করি এবং শেষ করতে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা বেজে যায়। আমার দায়িত্ব হলো অপারেশন থিয়েটারে শেষ সেলাই সম্পন্ন হওয়া পর্যন্ত, ব্যান্ডেজ লাগানো পর্যন্ত এবং রোগীকে সম্পূর্ণভাবে স্থিতিশীল করা পর্যন্ত সেখানে অবস্থান করা। অবশেষে রাত ৮টা ২০ মিনিটের দিকে অপারেশন থিয়েটার থেকে বের হই। দ্রুত এক ঢোক পানি পান করে রোজা ভাঙি, কারণ তখন অন্য কিছু খাওয়ার সুযোগ ছিল না। এরপর রোগীর স্থিতিশীল অবস্থা নিশ্চিত করে তিনি হাসপাতাল ছাড়েন এবং বাসায় ফেরার পথে রাত ১০টায় একটি ফাস্ট ফুড রেস্টুরেন্টে ইফতার খেয়ে নেন।

 

রোগীর সেবাকে অগ্রাধিকার: 

 

আমিরাতের মেডকেয়ার হাসপাতালে কর্মরত নার্স রাহাফ আহমেদ আলদাহমানি জানান, তার জন্য রমজানের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো শিফটের মধ্যে খাওয়ার সময় বের করা। আমি সব সময় সঠিকভাবে বিরতি নিতে পারি না, ফলে অনেক সময় তাড়াহুড়ো করে খেতে হয় এবং তা থেকে অস্বাস্থ্যকর খাবারের অভ্যাস তৈরি হয়। পানি কম খাওয়ার ফলে ডিহাইড্রেশনও একটি বড় সমস্যা হয়ে দেখা দেয় এই রমজানে, কারণ জরুরি সেবার মাঝে কখনো কখনো পানি পান করতেও ভুলে যাই। পাশাপাশি, রোগীদের প্রাপ্য সেবা থেকে নিজের খাওয়ার সময় বের করে নেয়ার মধ্যে এক ধরনের অপরাধবোধও কাজ করে। তবে এসব চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও রাহাফ সর্বোচ্চ যত্ন দিয়ে রোগীদের সেবা দিতে অঙ্গীকারবদ্ধ। 

 

রাহাফ আহমেদ বলেন, একবার এক রোগী নিয়মিত চেকআপের জন্য আসেন। পরীক্ষা করার সময় আমি তার গুরুত্বপূর্ণ কিছু লক্ষণ লক্ষ্য করি, যা প্রথমে রোজার কারণে স্বাভাবিক মনে হলেও গভীরভাবে পর্যবেক্ষণের পর বুঝতে পারি এটি একটি গুরুতর অবস্থা, যা বিলম্ব করলে প্রাণঘাতী হতে পারত। তার শিফটের পর, রাহাফ পানি পান করে এবং সুষম সেহরির দিকে মনোযোগ দেন। ’আমি কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিই, নামাজ পড়ি, যা আমাকে মানসিকভাবে প্রশান্ত রাখে। 

 

ভারসাম্য বজায় রাখা: 

 

আবুধাবির মেডিওর হাসপাতালের শিশু বিভাগের নার্স কারিনা সুরিবেন মনে করেন, রমজানে ভারসাম্য বজায় রাখা খুব গুরুত্বপূর্ণ। ’যখন কোনো রোগীর উচ্চমাত্রার জ্বর বা অক্সিজেনের মাত্রা কমে যায় এবং চিকিৎসক জরুরি কক্ষে স্থানান্তরের নির্দেশ দেন, তখন আমাদের জন্য রোগীর সেবাকেই অগ্রাধিকার দিতে হয়, এমনকি ইফতারের সময় হলেও। 

 

কারিনা বিভিন্ন ধরনের জটিল পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছেন। তাঁর ভাষায়, রোজা রাখা একজন রোগী রক্ত পরীক্ষার পর জটিলতায় পড়েছেন, কেউ উচ্চ জ্বরের কারণে খিঁচুনিতে আক্রান্ত হন, কেউ উচ্চ রক্তচাপ বা হার্ট অ্যাটাকের কারণে সংজ্ঞাহীন হয়ে পড়েছেন, এমনকি রোজা রাখা একজন গর্ভবতী নারীও এসেছেন—আমি অনেক কিছু দেখেছি। এই ধরনের পরিস্থিতিতে দ্রুত ও কার্যকরী পদক্ষেপ নেয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, যা আমাদের অন্যান্য সব কিছু একপাশে সরিয়ে রেখে সম্পূর্ণ মনোযোগ রোগীর যত্নে নিবদ্ধ করতে বাধ্য করে বলে জানান তিনি। 

আরও পড়ুন