ছবিঃ সংগৃহীত
দক্ষিণ এশিয়ায় কিশোরী ও নারীদের মধ্যে রক্তস্বল্পতা (অ্যানিমিয়া) ভয়াবহ রূপ নিয়েছে বলে উদ্বেগ জানিয়েছে জাতিসংঘের সংস্থা ও দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থা (সার্ক)। এক যৌথ প্রতিবেদনে জাতিসংঘ শিশু তহবিল (ইউনিসেফ), বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) এবং সার্ক এ অঞ্চলকে রক্তস্বল্পতার ‘গ্লোবাল এপিসেন্টার’ হিসেবে চিহ্নিত করেছে।
প্রতিবেদনে জানানো হয়, দক্ষিণ এশিয়ায় প্রায় ২৫৯ মিলিয়ন কিশোরী ও নারী রক্তস্বল্পতায় ভুগছেন। এই পরিস্থিতিকে "ব্যবস্থাগত ব্যর্থতার প্রতিফলন" আখ্যা দিয়ে ইউনিসেফ দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক পরিচালক সঞ্জয় উইজেসেকেরা বলেন, “যখন প্রতি দুই নারীর মধ্যে একজন রক্তস্বল্পতায় ভোগেন, তখন এটি শুধু একটি স্বাস্থ্যগত ইস্যু নয়, বরং বড় পরিসরে একটি সামাজিক সংকেত।”
রক্তস্বল্পতা নারীদের পাশাপাশি শিশুদের ওপরও নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। বিশ্বজুড়ে জন্মের সময় কম ওজনের ৪০ শতাংশ শিশুর জন্য দায়ী এই অবস্থা। এর ফলে শিশুর শারীরিক ও মানসিক বিকাশ ব্যাহত হয়, যা সবচেয়ে বেশি প্রভাব ফেলে দরিদ্র পরিবারগুলোতে।
অর্থনৈতিক দিক থেকেও বিষয়টি ভয়াবহ। প্রতিবছর দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো রক্তস্বল্পতার কারণে ৩২.৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ক্ষতির সম্মুখীন হয়।
তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই সমস্যা প্রতিরোধযোগ্য। আয়রন ও ফলিক অ্যাসিড সাপ্লিমেন্ট, পুষ্টিকর খাবার, পরিচ্ছন্নতা, সংক্রমণ প্রতিরোধ এবং উন্নত মাতৃসেবা নিশ্চিত করলেই এই সমস্যা মোকাবিলা সম্ভব। এজন্য প্রয়োজন স্বাস্থ্য, শিক্ষা, কৃষি এবং সামাজিক নিরাপত্তাসহ বিভিন্ন খাতের সমন্বিত উদ্যোগ।
প্রতিবেদনে বেশ কয়েকটি দেশের ইতিবাচক উদ্যোগের কথাও তুলে ধরা হয়েছে। বাংলাদেশ শিক্ষার্থীদের জন্য স্কুলভিত্তিক স্বাস্থ্য ও পুষ্টি কার্যক্রম পরিচালনা করছে। ভারত কিছু রাজ্যে স্কুল ও মাতৃসেবার সঙ্গে আয়রন সাপ্লিমেন্ট যুক্ত করেছে। পাকিস্তান প্রজননস্বাস্থ্যের সঙ্গে যুক্ত কমিউনিটি-ভিত্তিক পুষ্টি কর্মসূচি চালু করেছে। শ্রীলঙ্কা সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত জেলাগুলোতে পুষ্টি কর্মসূচি জোরদার করছে।
নেপাল ২০১৬ সাল থেকে নারীদের মধ্যে রক্তস্বল্পতার হার ৭ শতাংশ কমাতে সক্ষম হয়েছে, বিশেষ করে দরিদ্র এলাকায়। এ সাফল্যের পেছনে নারী স্বাস্থ্য স্বেচ্ছাসেবীদের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ।
ছোট জনসংখ্যার দেশ মালদ্বীপ ও ভুটান শিশুদের পুষ্টি, খাবারে আয়রন সংযোজন এবং সচেতনতা কর্মসূচির মাধ্যমে প্রাথমিক প্রতিরোধে গুরুত্ব দিচ্ছে।
সার্ক মহাসচিব মো. গোলাম সারওয়ার বলেন, “দক্ষিণ এশিয়ার উন্নয়নে যুব ও মা জনগোষ্ঠী গুরুত্বপূর্ণ। তাদের সুস্বাস্থ্য, পুষ্টি ও ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করা শুধু মানবিক দায়িত্ব নয়, বরং একটি কৌশলগত বিনিয়োগ।”
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এই সংকট মোকাবেলায় রাজনৈতিক সদিচ্ছা, শক্তিশালী স্বাস্থ্যব্যবস্থা, নির্ভরযোগ্য তথ্যভিত্তিক পরিকল্পনা এবং জনগণের সক্রিয় অংশগ্রহণ অপরিহার্য।
আরও পড়ুন