Advertisement
Doctor TV

মঙ্গলবার, ১ এপ্রিল, ২০২৫


এলিট অ্যাথলেটরাও হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকিতে কেন থাকে?

Main Image


ভূমিকাঃ
 

ফিটনেস ও সুস্বাস্থ্যের প্রতীক হিসেবে আমরা পেশাদার ক্রীড়াবিদদের দেখি। তাদের সুগঠিত দেহ, দুর্দান্ত স্ট্যামিনা ও কঠোর অনুশীলন দেখে অনেকেই ভাবেন, তারা বুঝি হৃদরোগের ঝুঁকি থেকে মুক্ত। কিন্তু সম্প্রতি, বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ও জাতীয় পর্যায়ের অ্যাথলেটদের মধ্যে হঠাৎ হার্ট অ্যাটাকে মৃত্যুর ঘটনা আমাদের এই বিশ্বাসকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।
 

কী কারণে এমনটা ঘটে?
 

১. হাইপারট্রফিক কার্ডিওমায়োপ্যাথি (HCM):
 

এটি একটি জেনেটিক রোগ, যেখানে হার্টের পেশি অস্বাভাবিকভাবে মোটা হয়ে যায়। ফলে হার্টের ইলেকট্রিকাল সিস্টেমে বিঘ্ন ঘটে এবং হঠাৎ কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হতে পারে। এই রোগটি অনেক সময় নিরব থাকে এবং শুধুমাত্র ECG বা ইকোকার্ডিওগ্রাম করলে ধরা পড়ে।
 

২. Athlete’s Heart ও অতিরিক্ত পরিশ্রম:
 

দীর্ঘমেয়াদী ইনটেনসিভ ট্রেনিং হার্টের গঠনে পরিবর্তন আনে। হার্টের চেম্বারগুলো বড় হয়ে যায়, এবং হাইপারট্রফি দেখা দেয়। যদিও এটি অ্যাডাপটিভ, কিন্তু কখনও কখনও এটি arrhythmia বা sudden cardiac death-এর ঝুঁকি বাড়ায়।
 

৩. Arrhythmogenic Right Ventricular Cardiomyopathy (ARVC):
 

এটি আরেকটি বিরল কিন্তু মারাত্মক হার্ট ডিজিজ যা অ্যাথলেটদের মধ্যে হঠাৎ মৃত্যুর অন্যতম কারণ। এতে হার্টের ডান পাশের মাংসপেশি চর্বি ও আঁশযুক্ত টিস্যু দিয়ে প্রতিস্থাপিত হয়।
 

৪. ডিহাইড্রেশন ও ইলেকট্রোলাইট ইমব্যালান্স:
 

টানা অনুশীলনে প্রচুর ঘাম ঝরে এবং দেহ থেকে সোডিয়াম, পটাশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম বেরিয়ে যায়। এই উপাদানগুলো হার্টের বৈদ্যুতিক ক্রিয়াকলাপে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। ব্যালান্স নষ্ট হলে হঠাৎ অ্যারিথমিয়া দেখা দিতে পারে।
 

৫. পারফরম্যান্স বর্ধক ওষুধ ও সাপ্লিমেন্ট:
 

কিছু অ্যাথলেট উচ্চ পারফরম্যান্স বজায় রাখতে স্টেরয়েড ও শক্তিবর্ধক ওষুধ সেবন করে, যা হার্টের গঠন ও কার্যক্রমে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।
 

৬. জেনেটিক ও জন্মগত সমস্যা:
 

বিভিন্ন জন্মগত হৃদরোগ (Congenital heart disease) অনেক সময় উপসর্গহীন থাকে এবং তীব্র শারীরিক পরিশ্রমের সময় প্রকট আকার ধারণ করে।
 

প্রতিরোধ ও সচেতনতা
 

১. নিয়মিত হার্ট চেকআপ (ECG, ইকো, Holter Monitor, Stress Test)
২. পারিবারিক ইতিহাস থাকলে জেনেটিক কাউন্সেলিং
৩. উপযুক্ত বিশ্রাম ও হাইড্রেশন নিশ্চিতকরণ
৪. যেকোন পারফরম্যান্স বর্ধক ওষুধ এড়িয়ে চলা
৫. সতর্কতামূলকভাবে খেলোয়াড়দের মেডিকেল স্ক্রিনিং প্রটোকল অনুসরণ করা
 

উপসংহারঃ
 

পেশাদার ক্রীড়াবিদদের শারীরিক সক্ষমতা খুবই উঁচুমানের হলেও, কিছু নিরব হৃদরোগ ও জীবনধারাগত কারণ তাদেরও হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকিতে ফেলতে পারে। আমাদের উচিত খেলোয়াড়দের হৃদপিণ্ড সংক্রান্ত স্বাস্থ্য সুরক্ষায় আরও গুরুত্ব দেয়া এবং নিয়মিত চেকআপের আওতায় আনা।
 

তথ্যসূত্র:
 

1. Maron BJ, et al. European Heart Journal. 2007.
2. Baggish AL, Wood MJ. Circulation. 2011.
3. Corrado D, et al. J Am Coll Cardiol. 2003.
4. Pope HG Jr, et al. Endocrine Society Scientific Statement. 2014.

 

লেখকঃ

 

ডা. মো. গওছুল আযম
সহকারী অধ্যাপক, নিউরোসার্জারি বিভাগ, ঢাকা মেডিকেল কলেজ। 

আরও পড়ুন