Advertisement
Doctor TV

শনিবার, ৭ জুন, ২০২৫


বৃটেন বনাম বাংলাদেশ: মানসিক স্বাস্থ্যসেবায় দুই বিপরীত চিত্র

Main Image


ডা. সাঈদ এনামঃ
 

যুক্তরাজ্যে মাত্র ৬.৭ কোটি মানুষের জন্য কাজ করছে ১০,৫০০ সাইকিয়াট্রিস্ট, হাজার হাজার সাইকোথেরাপিস্ট ও বিশেষ প্রশিক্ষিত ক্রাইসিস টিম। NHS-এর অধীনে সব নাগরিকের জন্য ২৪/৭ জরুরি সহায়তা, কমিউনিটি সাপোর্ট, আধুনিক হাসপাতাল এবং ডিজিটাল থেরাপি একীভূতভাবে বিনামূল্যে প্রদান করা হয়। 
 

শুধু যুক্তরাজ্য নয়, ফিনল্যান্ড, ডেনমার্ক, জার্মানি, সুইজারল্যান্ড—সব দেশেই মানসিক স্বাস্থ্য রাষ্ট্রীয় অগ্রাধিকার। এদেশ গুলো জ্ঞানে বিজ্ঞানে উন্নত, বিশ্বকে নেতৃত্ব দিচ্ছে তারাই।
 

বাংলাদেশের ছবিটা ভয়াবহ এবং রীতিমতো আতংকের!
 

১৭ কোটির ও বেশী মানুষের জন্য সাইকিয়াট্রিস্ট মাত্র ৩০০ জন! প্রতি ৫ লাখ ৬৬ হাজারে ১ জন! ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্টও নেই ৪০০ জন। সাইন্সভিত্তিক থেরাপিস্ট প্রায় নেই বললেই চলে। 
বাংলাদেশে আছে গলিতে গলিতে তান্ত্রিক, কবিরাজ আর ভণ্ড পীরের ভিড়। ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়া জুড়ে তাদের বিজ্ঞাপন। তাদের কল্পকাহিনি, কেরামতি, মেরামতি ও মুখরোচক গালগল্পে ভ্রান্ত, প্রতারিত মানসিক রোগী নিয়ে সাধারণ মানুষ। 
 

৬৪ জেলায় ৫০টিতেই নেই পূর্ণাঙ্গ মানসিক স্বাস্থ্য ইউনিট। সচেতনতা মুলক প্রচার প্রচারণা একেবারেই নেই। জাতিয় বাজেটে এ বিষয়ে বরাদ্দ স্বাস্থ্যখাতের মাত্র ০.৪৪%! যার ফলে দেশের ৯২% মানসিক রোগী চিকিৎসাই পায় না। অবহেলিত আর প্রতারিত হয়ে, রাস্তায় বস্তা পরে ধুকে ধুকে জীবন কাটাচ্ছে।
 

এই অবহেলার আরো ভয়ানক  পরিণতি —আত্মহত্যা ও বিষণ্নতায় বিশ্বে শীর্ষে উঠছে বাংলাদেশ। তরুণরা ভুগছে উদ্বেগ, হতাশা আর আসক্তির কবলে। কর্মজীবনে কমছে উৎপাদনশীলতা, বাড়ছে পারিবারিক সহিংসতা।
এখনই সময় বদলের। মানসিক স্বাস্থ্যকে ঘোষণা করতে হবে ‘জাতীয় জরুরি অবস্থা’। বাজেট বাড়াতে হবে পাঁচ গুণ, প্রতিটি জেলায় গড়তে হবে পূর্ণাঙ্গ মানসিক স্বাস্থ্য ইউনিট ও ২৪/৭ কাউন্সেলিং সেল। মেডিকেল কলেজে সাইকিয়াট্রি উচ্চশিক্ষায় আসন ও প্রশিক্ষণ বাড়াতে হবে। 
 

এমবিবিএস শিক্ষা কারিকুলামে ইউরোপ আমেরিকার মতো সাইকিয়াট্রিকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। কমিউনিটি স্বাস্থ্যকর্মীদের দিতে হবে ‘মানসিক স্বাস্থ্য ফার্স্ট এইড’ প্রশিক্ষণ। স্কুল-কলেজে বাধ্যতামূলক কাউন্সেলিং চালু করতে হবে।
 

সর্বোপরি, “মানসিক রোগ মানেই পাগলামি”—এই কুসংস্কার ভাঙতে হবে এখনই। সাহস যোগাতে হবে রোগী ও তার স্বজন দের। মানসিক রোগের চিকিৎসা নেওয়া দুর্বলতা নয়, বরং সাহস ও স্মার্টনেসের পরিচয়।

 

লেখকঃ 

ডা. সাঈদ এনাম 
এমবিবিএস (ডিএমসি) এম ফিল (সাইকিয়াট্রি) বিসিএস (স্বাস্থ্য)
সহযোগী অধ্যাপক (সাইকিয়াট্রি) 
সিলেট মেডিকেল কলেজ 
ফেলো, আমেরিকান সাইকিয়াট্রিক এসোসিয়েশন।

আরও পড়ুন