Advertisement
Doctor TV

মঙ্গলবার, ১ এপ্রিল, ২০২৫


নায়ক মান্না, ক্রিকেটার তামিম ও কক্সবাজারের অজানা রোগী

Main Image


ডা. ফাহিম উদ্দিনঃ

 

১) নায়ক মান্না (৪৪):  বুকের ব্যথাকে প্রথমে গ্যাস্ট্রিকের ব্যাথা মনে করে অতটা গুরুত্ব দেননি। ম্যাসিভ হার্ট এট্যাকের পর ইউনাইটেড হসপিটাল থেকে Emergency Primary PCI (হার্টে রিং/স্টেন্টিং) ট্রিটমেন্ট এডভাইস করা হয়। কিন্তু তিনি এটা দেশে করাতে চাননি। উনার স্ত্রী-পরিবারও তখন দেশের বাইরে ছিল। উনি চেয়েছেন আপাতত শুধু মেডিসিন দিয়ে চিকিৎসা হোক, পরে উনি দেশের বাইরে গিয়ে হার্টে রিং/স্টেন্টিং করাবেন। ডিসিশন দিতে অনেক কালক্ষেপণ করা হয়। আর হার্ট এট্যাকের ইমার্জেন্সি চিকিৎসা হিসেবে বিভিন্ন ঔষধের পাশাপাশি লাইফ সেভিং ড্রাগ Inj. STK (Streptokinase injection) দেয়া হয়েছিল তাকে। 
 

ফলাফল: 
 

১. ইমার্জেন্সি মেডিসিন প্রয়োগ করার পরেও মান্নার মৃত্যু। 
২. ভুল ইনজেকশন/ভুল চিকিৎসা প্রয়োগ করে মৃত্যুর অভিযোগ! 
৩. হাসপাতাল ও ডাক্তারদের নামে মামলা!  
 

২) ক্রিকেটার তামিম ইকবাল (৩৬/৩৭): বুকের ব্যথাকে প্রথমে গ্যাস্ট্রিকের ব্যথা মনে করে গ্যাস্ট্রিকের ঔষধ সেবন করেছেন। তারপরেও ব্যথা পুরোপুরি না কমায় বিকেএসপির নিকটস্থ সাভারের কেপিজে স্পেশালাইজ্ড হসপিটালে যান। হার্ট এট্যাক ডায়াগনোসিস এর পর সম্ভবত লোডিং ডোজ (মুখের ঔষধ) দিলে কিছুটা ভালো বোধ করেন। ইমার্জেন্সি হেলিকপ্টার কল করতে বলেন, রাজধানীর এভারকেয়ার হসপিটালে যাওয়ার জন্য। হেলিকপ্টার আসতে অবশ্যই কিছুটা সময় লাগে। এরপর হসপিটাল থেকে বিকেএসপির মাঠে যান হেলিকপ্টারে উঠতে, কিন্তু হেলিকপ্টারে উঠার আগেই সম্ভবত সেকেন্ড এট্যাক হয়ে কার্ডিয়াক এরেস্ট হয়ে যায়, অজ্ঞান হয়ে পড়েন ও মুখ দিয়ে ফেনা বের হয়ে যায়।
 

ওখানেই ইমার্জেন্সি CPR (বুকের উপর ক্রমাগত চাপ) শুরু করেন মোহামেডান ক্রিকেট টিমের ট্রেইনার ইয়াকুব চৌধুরী ডালিম এবং ডাক্তারদের পরামর্শে হেলিকপ্টারে ঢাকায় নেয়ার সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে বরং পুনরায় কেপিজে স্পেশালাইজ্ড হসপিটালে নিয়ে যাওয়া হয়। প্রথমে লাইফ সার্পোর্টে দিয়ে তারপর Emergency Primary PCI করা হয়। এক্ষেত্রে তামিমের পরিবার ডাক্তারদের পরামর্শ অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নিতে ম্যাচ রেফারি কে স্বাধীনতা দিয়ে দেন। উনি ডাক্তারদের পরামর্শ মোতাবেক সিদ্ধান্ত দেন তামিমের পরিবারের পক্ষ থেকে।
 

ফলাফল: আল্লাহর অশেষ রহমতে কার্ডিওলজিস্ট ডা. মারুফ স্যার, এনেস্থেসিওলজিস্ট ডা. মনিরুজ্জামান স্যার এবং বিকেএসপি + কেপিজে টিমের উছিলায় তামিম এ যাত্রায় বেঁচে ফিরেছে। 
 

আল্লাহ না করুন, যদি মান্নার মত পারিবারিক সিদ্ধান্তহীনতা/কালক্ষেপণ হয়ে তামিমের কিছু হত, তখন সব দায় কার উপর পড়তো?? যত দোষ হত নন্দ ঘোষের!! 
(অনেকটা ওবায়দুল কাদেরের ঘটনার মত ভীষণ রিস্কি সিচুয়েশনে ডাক্তাররা কাজ করেছেন)
 

৩) কক্সবাজারের অজানা রোগী (বয়স্ক): এই রোগীর অতীতে  ২ বার হার্টে রিং পরানো হয়, ১ বার ওপেন হার্ট সার্জারী করা। পুনরায় রোগী ম্যাসিভ হার্ট এট্যাক নিয়ে আসে (হসপিটালে আসতে কতটুকু দেরি করেছিল বলতে পারছি না)। তার মানে বুঝতেই পারছেন কত ক্রিটিক্যাল রোগী! Foreign NGO সাপোর্ট থাকায় কক্সবাজার সদর হসপিটালের ইমার্জেন্সি সাপোর্ট অনেক মেডিকেল কলেজ হসপিটালের চেয়েও ভালো। একজন চিকিৎসক (ডা. সজীব)  সেই রোগী কে বেঁচে ফেরাতে কক্সবাজার সদর হসপিটালের ইমার্জেন্সি তে CPR (বুকে ক্রমাগত চাপ) দেন। 
ফলাফল: অনেক চেষ্টার পরেও রোগী বেঁচে ফিরে নি। আর ডা. সজীবের অবস্থা তো ৩ নং ছবিতেই দেখতে পাচ্ছেন!! 
 

Take_Home_Message 
 

১. ইমার্জেন্সি সিচুয়েশনে আল্লাহর উপর ভরসা করে আপনার চিকিৎসকের ডিসিশন কে সমর্থন জানান, তাকে স্বাধীনভাবে ঠান্ডা মাথায় কাজ করতে দিন। বেশি পন্ডিতি করে কাল ক্ষেপণ করবেন না, এবার আপনি যত বড় শিল্পপতি / আপনার বিষয়ে যত বড় জ্ঞানীও হোন না কেনো! 
 

২. বুকের ব্যথাকে গ্যাস্ট্রিকের ব্যথা বলে অবহেলা করা যাবে না। হসপিটালে অনেক সময় রোগীর লোক, এমনকি স্টাফ/নার্সও অনেক সময় বুকের ব্যাথা কে "গ্যাস্ট্রিকের ব্যাথা" বলে পন্ডিতি করে ইসিজি করাতে চায় না (ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকেই বলছি)। মনে রাখতে হবে, গ্যাস্ট্রিকের চিকিৎসা না করলে রোগী মরবে না কিন্তু হার্টের সমস্যা ধরতে/চিকিৎসা শুরু করতে দেরি করলে রোগীর মৃত্যুর ঝুঁকি আছে! 
 

৩. CPR, Heimlich Maneuver এর মত Life Saving টেকনিক গুলো ব্যাসিক এডুকেসন সিস্টেমে এড করা উচিত। কেউ এসব চেষ্টা করেও যদি জীবন বাঁচাতে ব্যার্থ হয়, তবে তার উপর এট্যাক না করে বরং তাকে সাপোর্ট করুন, কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করুন। 
 

৪. তামিমের ইমার্জেন্সি লাইফ সেভিং পিসিআই সেবা পেয়ে আল্লাহর রহমতে ফেরত আসাটা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে যে, আপনার জেলার রাজনৈতিক নেতাদের কাছে মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠার দাবি না জানিয়ে, বরং এমন Specialized Hospital এর দাবি জানান যেখানে হার্ট এট্যাক, ব্রেইন স্ট্রোক বা Road Traffic Accident পরবর্তী ইমার্জেন্সি লাইফ সেভিং ম্যানেজমেন্টের প্রয়োজন হলে সেই সার্ভিস সাধারন মানুষ যেনো স্বল্প/বিনামূল্যে অনায়াশে পেতে পারেন! কেননা, শুধু স্পেশালাইজ্ড হসপিটাল করলেই হবে না, সাধারন মানুষের কোয়ালিটি সার্ভিস প্রাপ্তির নিশ্চয়তাও থাকতে হবে। চেষ্টা না করলে আল্লাহ কোনো কিছু এমনি এমনি করে দেন না। 
 

৫. ওবায়দুল কাদেরের মত অকৃতজ্ঞতা না দেখিয়ে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে শিখুন। কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করলে কারো ২ টাকার লাভ হবে না, বরং ঝুঁকি নিয়ে হলেও ভালো কাজ করার স্পৃহা বাড়বে (সে যে প্রফেশনেরই হোক)। ওবায়দুল কাদের এতটাই অকৃতজ্ঞতা দেখিয়েছিল যে,, সুস্থ হবার পর প্রেস কনফারেন্সে শেখ হাসিনা, ভারতের ডা. দেবী শেঠি, সিংগাপুরের ডাক্তার, তার নেতা কর্মী সহ কারো অবদানের কথা মেনশন করতে ভুলেনি,,, শুধু ভুলেছে সেই ডাক্তারের (অধ্যাপক ডা. আবু নাসের রিজভী) কথা যিনি নিজে গাড়ী ড্রাইভ করে ওবায়দুল কাদেরকে পিজি হসপিটালে নিয়ে এসে ইমার্জেন্সি ট্রিটমেন্টের ব্যবস্থা করেন, ভুলেছে পিজি হসপিটালের পুরো কার্ডিয়াক টিমের কথা। আল্লাহর রহমতে যাদের উছিলায় সেদিন সে বেঁচে ফিরেছিল!
 

দয়া করে এমন অকৃতজ্ঞ হবেন না...!

আরও পড়ুন