Advertisement
Doctor TV

রবিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৫


চমেক হাসপাতালে নবজাতকের মৃত্যুর ঘটনায় ৪ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন

Main Image

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতাল


চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে ৮ দিন বয়সী নবজাতকের মৃত্যুর ঘটনায় তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। রোববার (১৬ মার্চ) হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. তসলিম উদ্দীন এই কমিটি গঠন করেন। কমিটিকে চার কর্মদিবসের মধ্যে মৃত্যুর কারণ এবং কারও অবহেলা রয়েছে কি না, তা তদন্ত করে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।  
 

চমেক হাসপাতালের শিশুস্বাস্থ্য বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক মোহাম্মদ মুছা মিঞাকে প্রধান করে সদস্য সচিব করা হয় অ্যানেস্থেশিয়া বিভাগের সহকারী অধ্যাপক শুভাশীষ তালুকদারকে।

অপর সদস্য হলেন মেডিসিন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক রবিউল আলম।  
 

ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. তসলিম উদ্দীন বলেন, নবজাতক মৃত্যুর ঘটনায় প্রকৃত বিষয়টি তুলে আনতে এ কমিটি গঠন করা হয়েছে। এতে যদি কারও অবহেলার দায় পাওয়া যায়, অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।  

 

উল্লেখ্য, গত শনিবার দুপুরে চমেক হাসপাতালের ৩২ নম্বর নবজাতক ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন অবস্থায় এক নবজাতকের মৃত্যু হয়। নবজাতকের বাবা বেলাল উদ্দিন অভিযোগ করেন, আয়াকে বকশিশ না দেওয়ায় অক্সিজেনের পানি সরবরাহ বন্ধ রাখায় নবজাতক মারা যায়।  

 

তবে কর্তব্যরত চিকিৎসকরা জানান, শিশুটি জন্মের পর থেকেই পেরিনিটাল এসফিক্সিয়া (জন্মগত শ্বাসরোধ), খিচুনিসহ একাধিক শারীরিক জটিলতায় আক্রান্ত ছিল।

 

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের লিখিত বক্তব্যে যা বলা হয়:

 

‘গত ৭ মার্চ চকরিয়ার জমজম ক্লিনিকে একটি বাচ্চা প্রসব করেন মোসাম্মৎ মহসিনা। বাচ্চাটি জন্মের সময় মায়ের পেটে পায়খানা করে দিয়েছিল। শ্বাসনালীতে পায়খানা চলে যাবার কারণে ডেলিভারি রুমে বাচ্চাটি কান্না করেনি এবং শ্বাস নেয়নি। জমজম হাসপাতালে বাচ্চাটি খুব সংকটাপন্ন অবস্থায় দুইদিন ভর্তি ছিল। ভর্তি থাকাকালীন এক পর্যায়ে অবস্থার আরও অবনতি হলে বাচ্চাটিকে চমেক হাসপাতালের নবজাতক আইসিইউতে রেফার করা হয়। সুদূর চকরিয়া থেকে এই দীর্ঘপথ পাড়ি দিয়ে আসার সময় বাচ্চাটির আরেকধাপ শারীরিক অবনতি হয়’।

 

নবজাতক ওয়ার্ডে কর্মরত চিকিৎসক ডা. নাহিদা বলেন, ভর্তির পর বাচ্চাটির গেসপিং (জোরে জোরে শ্বাস নেওয়া, দম ফুরিয়ে আসা) ও খিচুনি হচ্ছিল। সারা শরীরে সেক্লরেমা ছিল (শরীরের রঙ পরিবর্তন)। তিনি বাচ্চাটিকে অক্সিজেন দেওয়ার ডিভাইস সি-প্যাপ চালু করেন। সি-প্যাপ বাচ্চাটিকে সর্বোচ্চ মাত্রায় অক্সিজেন দেওয়া সত্ত্বেও সেচুরেশন মেইনটেইন হচ্ছিল না বিধায় বাচ্চাটিকে লাইফ সাপোর্টে নেওয়ার জন্য বাবা-মাকে কাউন্সিলিং করা হয়। বাচ্চাটিকে লাইফ সাপোর্টে নেওয়ার জন্য তারা সম্মত হননি।

 

চিকিৎসকেরা জানান বাচ্চাটির রোগ ছিল- Term (38 weeks), AGA ( 2800g), PNA (HIE Stage: III), MAS, Septic shock (Sclerema). এ ধরনের বাচ্চার মৃত্যুঝুঁকি ৫০ শতাংশ এবং বেঁচে যাওয়া বাচ্চাদের প্যারালাইসিসের শংকা শতভাগ। এনআইসিইউতে ভর্তির দিন হতে বাচ্চাটিকে ইনজেকশন সেফটাজিডাইম, অ্যামিকাসিন, ডোপামিন, ডোবুটামিন, ফেনোবারবিটাল, ফসফেনিটোইন দেওয়া হয়। বাচ্চার অবস্থার আরও অবনতি হলে অ্যান্টিবায়োটিক পরিবর্তন করে ইনজেকশন মেরোপেনেম ও ইনজেকশন লেভোফ্লক্সাসিন দেওয়া হয়। ১৫ মার্চ সকাল ১০টায় বাচ্চাটির শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে ইনজেকশন অ্যাড্রেনালিন দেওয়া হয় এবং পুনরায় লাইফ সাপোর্টে নেওয়ার জন্য কাউন্সিলিং করা হয়। হাসপাতালের বিভিন্ন নথি ও ব্যবস্থাপনা দেখে প্রতীয়মান হয়েছে যে, পেরিনিটাল অ্যাসফিক্সিয়া (জন্ম শ্বাসরোধ নামে পরিচিত) ও মেকোনিয়াম অ্যাসপিরেশন সিন্ড্রোম (এমএএস) এর জটিলতায় বাচ্চাটির মৃত্যু হয়েছে।

আরও পড়ুন