Advertisement
Doctor TV

শনিবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৫


ক্যানসারের চিকিৎসায় আশার আলো দেখছেন গবেষকরা

Main Image


ব্যথানাশক ওষুধ হিসেবে পরিচিত  অ্যাসপিরিন ব্যবহারের মাধ্যমে ক্যানসার নিরাময়ে আশার আলো দেখছেন চিকিৎসকরা। ইতোপূর্বে বিভিন্ন গবেষণায় অ্যাসপিরিন ব্যবহার এবং উন্নত ক্যানসার থেকে বেঁচে থাকার মধ্যে যোগসূত্র পান গবেষকরা। তবে গত সপ্তাহে নেচারে প্রকাশিত সমীক্ষায় ব্যাখ্যা করা হয়েছে, এটি কীভাবে ক্যানসারের বিরুদ্ধে কাজ করে।

 

অ্যাসপিরিন ব্যবহার ও ক্যানসার সম্পর্কে গবেষণায় যা পাওয়া গেছে
 

সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে, ব্যথানাশক ওষুধ হিসেবে পরিচিত অ্যাসপিরিন ক্যানসারের বিস্তার প্রতিরোধে সাহায্য করতে পারে। যদিও এটি সব ধরনের ক্যানসারের জন্য একই কাজ করবে কিনা তা এখনও স্পষ্ট নয়। ১৯৮৮ সালে প্রকাশিত প্রথম ক্লিনিকাল গবেষণায় দেখা যায়, নিয়মিত অ্যাসপিরিন ব্যবহার, কোলোরেক্টাল ক্যানসারের ঝুঁকি উল্লেখযোগ্যভাবে কমিয়ে দেয়। যদিও এর অন্তর্নিহিত কারণটি তখনও অস্পষ্ট ছিল।

 

এখন কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন গবেষণায় গবেষকরা এমন একটি প্রক্রিয়া খুঁজে পেয়েছেন, যার মাধ্যমে জানা সম্ভব হয়েছে- ক্যানসারের ছড়িয়ে পড়া প্রতিরোধে অ্যাসপিরিন কিভাবে সাহায্য করতে পারে। প্রক্রিয়াটি মেটাস্ট্যাসিস নামে পরিচিত। গবেষকদের মতে, ক্যানসারজনিত বেশিরভাগ মৃত্যুর জন্য দায়ী এই মেটাস্ট্যাসিস। কারণ ক্যানসারের কোষগুলো মূল টিউমার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে সারা শরীরজুড়ে অন্য জায়গায় শিকড় গজানোর চেষ্টা করে। যেহেতু এভাবে প্রবাহিত ক্যানসার কোষগুলো দুর্বৃত্ত হয়ে যায়, তাই অ্যাসপিরিন শরীরের প্রতিরোধ করার স্বাভাবিক ক্ষমতা বাড়িয়ে ক্যানসারের কোষগুলোকে ছড়ানো থেকে ধরে রাখতে পারে।

 

যেভাবে কাজ করে অ্যাসপিরিন
 

গবেষকদের মতে, আমাদের শরীরের ইমিউন সিস্টেমের মধ্যেই ক্যানসারের ওপর অ্যাসপিরিনের প্রভাবের চাবিকাঠি লুকিয়ে আছে। কোষ এবং প্রোটিনের মধ্যকার জটিল নেটওয়ার্ক সংক্রমণ, রোগ এবং ক্ষতিকারক জীবাণু থেকে রক্ষা করে। যখন ক্যানসার কোষগুলো একটি টিউমার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়, তখন তারা রক্ত প্রবাহে প্রবেশ করে। যেখানে ইমিউন সিস্টেম, বিশেষত টি-কোষ নামে পরিচিত শ্বেত রক্তকণিকায় প্রবেশ করে ধ্বংস করে দেয়। পাশাপাশি রক্তের ক্ষুদ্র কোষের টুকরো জমাট বাঁধতে সাহায্য করা প্লেটিলেটের ওপরও প্রভাব বিস্তার করতে পারে।

 

ক্যানসার আঘাতের অনুরূপ প্রতিক্রিয়ায় প্লেটিলেটের সুবিধা নেয়। যখন প্লেটিলেটগুলো মুক্ত-ভাসমান ক্যানসার কোষগুলো সনাক্ত করে, তখন তাদের প্রলেপ দিতে ছুটে যায়, যেমনটা রক্তপাত বন্ধ করার জন্য একটি ক্ষত তারা ঢেকে দেয়। এটি একটি প্রতিরক্ষামূলক ঢাল তৈরি করে, যা প্রতিরোধ ব্যবস্থার পক্ষে ক্যানসার কোষগুলো সনাক্ত করা এবং আক্রমণ করা কঠিন করে তোলে। উপরন্তু, প্লেটিলেটগুলো সংকেত দেয় এবং টি-কোষকে দমন করে তাদের কাজ করতে বাধা দেয়।

 

অ্যাসপিরিন একটি অণুর উৎপাদন হ্রাস করে ক্যানসারের প্রচেষ্টাকে ব্যাহত করে, যা প্লেটিলেটগুলো ইমিউন কার্যকলাপকে দমন করতে পারে। প্লেটলেটগুলো দুর্বল হওয়ার সাথে সাথে টি-কোষগুলো নতুন টিউমার তৈরির সুযোগ পাওয়ার আগে ক্যানসার কোষগুলোকে চিনতে এবং ধ্বংস করার ক্ষমতা ফিরে পায়।

 

অ্যাসপিরিন যেভাবে ক্যানসারের বিরুদ্ধে ব্যবহার করা যেতে পারে
 

গবেষণায় পরামর্শ দেয়া হয়েছে, টিউমার অপসারণের মতো অস্ত্রোপচারের পরে অ্যাসপিরিন ব্যবহার করা যেতে পারে। এর কারণ হলো, অস্ত্রোপচারের পর কিছু ক্যানসার কোষ টিউমার থেকে চলে যেতে শুরু করে এবং শরীরের অন্যান্য অংশে বসতি স্থাপনের চেষ্টা চালায়। এই প্রক্রিয়াটি সিডিং নামে পরিচিত, যেখানে ক্ষুদ্র ক্যানসার কোষগুলো নিজেদেরকে নতুন জায়গায় মিশে পরে টিউমারে পরিণত হতে পারে।

তবে বিশেষজ্ঞরা অবিলম্বে অ্যাসপিরিনকে ক্যানসারের চিকিৎসায় ব্যবহার করার বিষয়ে সতর্ক করেছেন। বিষয়টি নিয়ে আরও গবেষণার উপর জোর দিয়েছন তারা। কারণ ব্যথানাশকের এই ওষুধ ব্যবহারে অভ্যন্তরীণ রক্তপাতের মতো গুরুতর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ারও সম্ভাবনা রয়েছে। এরা প্লেটিলেটগুলোকে দুর্বল করে দেয়, ফলে রক্ত জমাট বাঁধার ক্ষমতা দুর্বল হয়ে যেতে পারে।

 

অ্যাসপিরিন এমন একটি অণুকে ব্লক করে দেয়, যা প্লেটিলেটগুলোকে একত্রিত করতে সাহায্য করে। এটি রক্তকে পাতলা করে এবং অনিয়ন্ত্রিত রক্তপাতের ঝুঁকি বাড়ায়। বিশেষ করে পাকস্থলীতে এটি বেশ বিপজ্জনক, অ্যাসপিরিন যেখানে আস্তরণে জ্বালা করা এবং আলসার সৃষ্টি করতে পারে। এছাড়া মস্তিষ্কে ক্ষুদ্র রক্তনালী ফেটে গেলে এটি হেমোরেজিক স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয় বহুগুণ।

 

এদিকে গবেষণাটি করা হয়েছে মানুষ নয়, ইঁদুরের উপর। তাই ক্যানসারের বিস্তারের উপর এর প্রভাব নিয়ে গবেষকরা এখনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারেননি। চিকিৎসার জন্য অ্যাসপিরিন সুপারিশ করার আগে, মানুষের উপর এর ফলাফল নিশ্চিত হওয়া প্রয়োজন।

 

গবেষণার অংশ নেয়া কেমব্রিজের প্যাথলজি বিভাগের অধ্যাপক রাহুল রায়চৌধুরি আল জাজিরাকে বলেছেন, "আমাদের গবেষণা ক্লিনিকাল স্টাডি থেকে পর্যবেক্ষণের জন্য একটি আণবিক ব্যাখ্যা পাওয়া গেছে, তবে সঠিক ক্লিনিকাল বৈধতা প্রয়োজন।"

 

অ্যাসপিরিন গ্রহণের ফলে কোন রোগীরা সবচেয়ে বেশি উপকৃত হবেন। তবে নির্দিষ্ট ধরনের ক্যানসারের জন্য কাজ করে কিনা তা নির্ধারণে যুক্তরাজ্য, আয়ারল্যান্ড এবং ভারতে এডিডি-অ্যাসপিরিন ট্রায়ালের মতো বেশ কয়েকটি ক্লিনিকাল ট্রায়াল চলছে। রাহুল রায়চৌধুরী যোগ করেছেন, তিনি ক্যানসারের চিকিৎসায় অ্যাসপিরিনের "তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া" আশা করেন না।

আরও পড়ুন