Advertisement
Doctor TV

শুক্রবার, ২১ মার্চ, ২০২৫


ধূমপানের চেয়েও ক্ষতিকর ভেপিং: গবেষণা

Main Image

ই-সিগারেট বা ভেপিং


সিগারেটের বিকল্প হিসেবে যারা ভেপিং করে থাকেন- তাদের জন্য দুঃসংবাদ। কারণ, নিয়মিত ই-সিগারেট ব্যবহার বা ভেপিংয়ের ফলে ব্যবহারকারীদের ডিমেনশিয়া, হৃদরোগ ও অঙ্গ অকেজো হয়ে যাওয়ার মতো ঝুঁকি তৈরি হতে পারে। সাম্প্রতিক এক গবেষণায় এই আশঙ্কার তথ্য উঠে এসেছে । সূত্র: ইয়াহু নিউজ ইউকে

 

বর্তমানে নজিরবিহীন সংখ্যায় ভেপ গ্রহণ করছে ব্রিটিশরা, দেশটির দশ জন প্রাপ্তবয়স্কের মধ্যে অন্তত একজন এ অভ্যাসে আসক্ত বলে প্রতিবেদনে লিখেছে ব্রিটিশ ট্যাবলয়েড ডেইলি মেইল।

অনেকেই এসব ভেপকে সাধারণত সিগারেটের চেয়ে নিরাপদ ও ধূমপান ছাড়ার জন্য কার্যকর একটি টুল হিসাবে বিবেচনা করেন। তবে গবেষণা বলছে, প্রায় আট শতাংশ প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তি ভেপ গ্রহণের আগে কখনও ধূমপান করেননি।

 

‘ম্যানচেস্টার মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটি’র গবেষকরা বলছেন, সিগারেটের চেয়েও মারাত্মক স্বাস্থ্য হুমকি তৈরি করতে পারে এসব ভেপিং টুল।

 

তারা বলেছেন, ই সিগারেটের কারণে মানুষ ভেপের মধ্যে নিকোটিন ভরে তা নিঃশ্বাসের সঙ্গে গ্রহণ করতে পারেন। আর এ ধরনের ভেপ সাধারণত প্রোপিলিন গ্লাইকল, গ্লিসারিন, ফ্লেভারিং ও অন্যান্য রাসায়নিক পদার্থওয়ালা তরল গরম করে তৈরি হয়।

 

ভেপিংয়ের মাধ্যমে এসব উচ্চমাত্রার নিকোটিন হার্টরেট ও রক্তচাপ বাড়ানোর পাশাপাশি দেহের বিভিন্ন রক্তনালীকে সংকুচিত ও ধমনীর প্রাচীরকে ক্ষতিগ্রস্থ করতে পারে বলে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বিশেষজ্ঞরা।

 

এ অভ্যাস ত্যাগ করার আহ্বান জানিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। তারা বলছেন, “যারা ভেপ গ্রহণ করছেন তাদের বিপদ ধূমপায়ীদের থেকে একেবারেই আলাদা নয়”।

 

‘কার্ডিয়াক রিহ্যাবিলিটেশন’ বা হৃদরোগ পুনর্বাসন বিশেষজ্ঞ ও এ গবেষণার প্রধান গবেষক ড. ম্যাক্সিম বোইডিন বলেছেন, ধূমপায়ীদের মধ্যে বাইরে গিয়ে ধূমপান করার প্রবণতা থাকে এবং একবার একটি সিগারেট শেষ হয়ে গেলে তাদের চালিয়ে যাওয়ার জন্য আরেকটি সিগারেট জ্বালাতে হয়।

 

তবে ভেপের ক্ষেত্রে আপনি চাইলেই এটির গ্রহণ চালিয়ে যেতে পারেন। এজন্য কতোগুলো পাফ টেনেছেন তা খেয়াল রাখা সম্ভব হয় না।”

 

তাই না থেমে বা নিরবিচ্ছিন্নভাবে ভেপ নেওয়ার কাজটি অনেক সহজ। কারণ এমনসব জায়গাতেও আপনি এটি গ্রহণ করতে পারেন, যেখানে ধূমপানের সুযোগ কম।”

 

গবেষণায় উঠে এসেছে, ভেপিংয়ের বিভিন্ন বিপদ ধূমপায়ীদের চেয়ে আলাদা নয়।

 

যুক্তরাজ্যের ‘ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিস’ বা এনএইচএস-এর প্রধানরা ভেপিংকে ধূমপানের চেয়ে নিরাপদ বলে দাবি করলেও বিশেষজ্ঞরা দীর্ঘদিন ধরে বলে আসছেন, ভেপিং ঝুঁকিমুক্ত নয় একেবারেই।

 

তারা বলছেন, ই সিগারেট বা ভেপে ক্ষতিকর বিষাক্ত পদার্থ থাকে, যেগুলোর দীর্ঘমেয়াদী বিভিন্ন প্রভাব এখনও রহস্য হিসাবেই রয়ে গেছে।

চিকিৎসকরা শঙ্কা প্রকাশ করে বলেছেন, অল্প বয়সী যারা এ অভ্যাস গ্রহণ করেছেন আগামী দশকে তাদের মধ্যে ফুসফুসের রোগ, দাঁতের সমস্যা ও ক্যান্সারের মতো রোগের প্রকোপ দেখা দিতে পারে।

 

এ গবেষণায় গড়ে ২৭ বছর বয়সী অংশগ্রহণকারীদের ওপর নজর দেন গবেষকরা, যাদের প্রত্যেকেরই শারীরিক ফিটনেসের অবস্থা একইরকম। তাদের দেহের বিভিন্ন রক্তনালীর স্থিতিস্থাপকতা ও মস্তিষ্কে রক্ত প্রবাহের গতি পরিমাপ করতে নিয়মিত স্ট্রেস টেস্ট পরীক্ষা করেছেন তারা।

 

এসব পরীক্ষার ১২ ঘণ্টা আগে কেবল পানি পান করেছে তারা। এ সময় ভেপ, ধূমপান ও ব্যায়াম থেকে দূরে ছিলেন অংশগ্রহণকারীরা।

 

ড. বোইডিন বলেছেন, ‘মেডিয়েটেড ডাইলেশন’ বা এফএমডি পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারীর হাতে একটি কাফ বসান গবেষকরা। যাতে এর মাধ্যমে আরও রক্ত প্রবাহিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তাদের ধমনী কতটা প্রসারিত হয় তা পরিমাপ করা যায়, যা ভেপিংয়ের বিভিন্ন প্রভাব সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা দিতে পারে গবেষকদের।

 

তিনি আরও বলেন, এ গবেষণায় ধূমপায়ী ও যারা ভেপ নেন উভয়ই ‘ফ্ল্যাট রিডিং’ দিয়েছে। এ থেকে ইঙ্গিত মেলে, তাদের ধমনীর প্রাচীর ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে, যা ভবিষ্যতে গুরুতর হৃদরোগের সমস্যার প্রায় নিশ্চিত লক্ষণ।

 

গবেষণার আরও দেখা গেছে, ধূমপায়ী ও ভেপারদের রক্তপ্রবাহ একইরকমভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়, যার ফলে তাদের ডিমেনশিয়া’সহ কাজের প্রতি অনীহার ঝুঁকি তৈরি হতে পারে।

 

ড. বোইডিন বলেছেন, আপনার শরীরে নানা পদার্থ ও রাসায়নিকের মিশ্রণ প্রবেশ করাবেন আর আপনার কিছুই হবে না– এমন আশা করতে পারেন না।

 

ভেপিংয়ের কেবল একটি সুবিধা রয়েছে, তা হচ্ছে মানুষকে ধূমপান ছাড়তে সহায়তা করা। তবে কেউ যদি ধূমপান ছেড়ে ভেপিং গ্রহণ চালিয়ে যান তবে ফলাফল একইরকম হবে।

আরও পড়ুন