Advertisement
Doctor TV

শুক্রবার, ১৪ মার্চ, ২০২৫


দেশে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে ভাইরাস নিয়ে ভীতিকর খবর

Main Image

দেশে ভাইরাসের চেয়েও দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে বিভিন্ন ধরণের ভাইরাস নিয়ে ভীতিকর খবর (ইনসেটে ড. খোন্দকার মেহেদী আকরাম)


দেশে ভাইরাসের চেয়েও দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে বিভিন্ন ধরণের ভাইরাস নিয়ে ভীতিকর খবর।
একদিকে হিউম্যান মেটানিউমো ভাইরাস আর অন্যদিকে ব্যাট রিওভাইরাস! 
 

এইচএমপিভি বা হিউম্যান মেটানিউমো ভাইরাস নিয়ে ভীতির তেমন কোন কারণই নেই। এটা অনেকটা ফ্লু ভাইরাসের মতই একজন থেকে আরেকজনে ছড়ায় হাঁচি বা কাশির মাধ্যমে। 
 

শীতে সারা পৃথিবীতেই ফ্লু এবং ঠান্ডাজনিত রোগের প্রাদুর্ভাব বেড়ে যায়। চীনের এক গবেষণায় দেখা গেছে, বয়সভেদে ইনফ্লুয়েন্জা ভাইরাস সংক্রমণ থেকে নিউমোনিয়া হওয়ার হার প্রায় ৭ শতাংশ। আর এইচএমপিভি ভাইরাস দিয়ে নিউমোনিয়া হওয়ার হার এর অর্ধেক।
 

হিউম্যান মেটানিউমো ভাইরাস নিয়ে ভীতি ছড়াচ্ছে মূলত ইন্ডিয়ার বেশ কয়েকটি মিডিয়া আউটলেট। 
 

চীনে প্রতিবছরই নভেম্বর থেকে মার্চ মাসের মধ্যে এইচএমপিভি ভাইরাসের সংক্রমণ বেড়ে যায়। তবে এবার তারা লক্ষ্য করছে এইচএমপিভি সংক্রমণ নিয়ে হাসপাতালে ভর্তির সংখ্যা কিছুটা উর্ধগতির। এটা নিয়েই তারা কিছুটা চিন্তিত। 
 

বাংলাদেশেও একজনের শরীরে এইচএমপিভি সনাক্ত হয়েছে। তবে এটা নিয়ে ভীতির তেমন কোন কারণই নেই। আপনি ইনফ্লুয়েন্জা ভাইরাস থেকে রক্ষা পেতে যতটুকু সতর্কতা অবলম্বন করেন ততোটুকু সতর্ক থাকলেই হবে। আপনার বয়স যদি ৬০/৭০ বছর হয় এবং আপনার যদি ক্যান্সার, অটোইমিউন ডিজিজ বা আপনি যদি ইমিউনোসাপ্রেসিভ ওষুধ গ্রহণ করেন তাহলে এই শীতের সময়টিতে আপনাকে কিছুটা বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।
এই সতর্কতা সকল রেস্পিরেটরি ভাইরাসের জন্যই প্রযোজ্য। এইচএমপিভি ভাইরাসের বাড়তি ভীতির কোন কারণ নেই। এবং এই মূহুর্তে ভ্যাকসিনেরও কোন প্রয়োজন নেই। 
 

ফ্লু বা এইচএমপিভি ভাইরাসের সংক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে জনসমাগম হয় এরকম পাবলিক প্লেস এড়িয়ে চলুন। যাঁদের আনুসাঙ্গিক রোগ বা কো-মর্বিডিটি রয়েছে তাঁদের উচিত বাস, মেট্রো বা ট্রেনে ভ্রমনের সময় মাস্ক ব্যাবহার করা। সাধারণ পরিচ্ছন্নতা, যেমন বাজার বা শপিং থেকে এসে সাবান দিয়ে হাত ধোয়ার অভ্যাস অসংখ্য ভাইরাসের সংক্রমণ থেকে আমাদের রক্ষা করে। 
 

এবার আসি ব্যাট রিওভাইরাসের প্রসঙ্গে
 

৪৮ জনের নমুনা পরীক্ষায় ৫ জনের শরীরে ব্যাট রিওভাইরাস পাওয়া গেছে। বাংলাদেশে এই প্রথম ব্যাট রিওভাইরাস সনাক্ত হল। সনাক্তের হার ১০ শতাংশ। যাঁদের শরীরে এই ভাইরাস পাওয়া গেল তারা সবাই নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে বলে সন্দেহ করা হয়েছিলো। অর্থাৎ রোগীদের মধ্যে রোগের লক্ষণ এবং সম্ভবত খেজুরের রস খাওয়ার ইতিহাস ছিলো। 
 

বাংলাদেশে ব্যাট রিওভাইরাসের উস্থিতি জনস্বাস্থ্যের জন্য তাৎপর্যপূর্ণ। কেননা নিপাহ ভাইরাস এবং ব্যাট রিওভাইরাস উভয়ই বাঁদুর থেকে মানুষে সংক্রমিত হয়। এবং এই সংক্রমণ হয় খেজুরের রসের মাধ্যমে। বাদুরের মল-মূত্রের মাধ্যমে মূলত এই ভাইরাসটি খেজুরের রসে মিশে যায়। 
 

নিপাহ ভাইরাসের মত ব্যাট রিওভাইরাসের সংক্রমণ অতটা মারাত্মক না হলেও এই ভাইরাস ফুসফুস এবং অন্ত্রে সংক্রমণ করে জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে। ইঁদুর এবং ল্যাবরেটরি পরীক্ষায় দেখা গেছে ব্যাট রিওভাইরাস ব্রেনে সংক্রমণ করে এনকেফালাইটিস বা মস্তিস্ক প্রদাহ সৃষ্টি করতে পারে। ব্যাট রিওভাইরাস দিয়ে মানুষের এনকেফালাইটিস হওয়ার ঘটনা বিরল।
 

ব্যাট রিওভাইরাস বাঁদুর থেকে মানুষে সংক্রমিত হয় এবং এরপর এই ভাইরাস মানুষ থেকে মানুষে সংক্রমিত হতে পারে হাঁচি-কাশি এবং মল-মূত্রের মাধ্যমে। শরীরে বাইরে এই ভাইরাসটি টিকে থাকতে পারে দীর্ঘক্ষণ। এই কারণের এই ভাইরাসটি জনস্বাস্থের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এটি একটি আরএনএ ভাইরাস এবং সহজেই এর জিনের মিউটেশন হয়। 
 

ব্যাট রিওভাইরাস এর আগে মালয়েশিয়া, কোরিয়া এবং চীনসহ বেশ কয়েকটি দেশে বাদুরের মধ্যে পাওয়া গেছে। 
 

ব্যাট রিওভাইরাসে ভীতির কোন কারণ নেই। তবে খেজুরের রস বা মাটিতে পরে থাকা ফল খাওয়ার আগে অবশ্যই সতর্ক হতে হবে। কাঁচা খেজুর রস বা তালের রস খাওয়া থেকে বিরত থাকুন। ব্যাট রিওভাইরাস রসের মাধ্যমেই আপনার শরীরে প্রবেশ করে। 
 

ব্যাট রিওভাইরাস ডিলেইড ইমিউন রেসপন্স করে। অর্থাৎ রস খাওয়ার বা ভাইরাসটির সংস্পর্শে আসার বেশ কিছু দিন পর রোগের লক্ষণ প্রকাশ পেতে পারে। 
 

জ্বর, শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণ, পরিপাকতন্ত্রের সংক্রমণে বমি, ডায়রিয়ার, মস্তিষ্কের প্রদাহের কারণে তীব্র মাথা ব্যাথা, স্মৃতিভ্রম বা জ্ঞান হারিয়ে ফেলার মতো লক্ষণ দেখা দিলে এবং এর সাথে সাম্প্রতিক খেজুরের রস খাওয়ার ইতিহাস থাকলে আপনার নিপাহ বা ব্যাট রিওভাইরাস সংক্রমণের সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে। এক্ষেত্রে অবশ্যই দ্রুত চিকিৎকের পরামর্শ নিতে হবে।
 

নিপাহ বা ব্যাট রিওভাইরাসের সংক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে কাঁচা খেজুর রস বা তালের রস খাওয়া থেকে বিরত থাকুন। 
 

-ড. খোন্দকার মেহেদী আকরাম

আরও পড়ুন