Advertisement
Doctor TV

বৃহস্পতিবার, ৬ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫


ডেঙ্গু কথন (পর্ব-২)

Main Image

ডেঙ্গু ওয়ার্ড (ইনসেটে লেখক)


আজকে কথা বলবো ডেঙ্গুতে সবার মাথা ব্যথা প্লাটিলেট নিয়ে। এটা মোটামুটি সবাই জানে ডেঙ্গুতে প্লাটিলেট কমে। এখন রোগীরা সবাই এসে বলে, স্যার পয়েন্ট কতো (মানে প্লাটিলেট কত), স্যার রোগীর মনে হয় ডেঙ্গু - প্লাটিলেটতো কম, স্যার প্লাটিলেটতো অনেক কমে গেছে, এখন কি হবে, এটা বাড়াবো কিভাবে, রক্ত দেওয়া লাগবে?

একটা কথা মাথায় ঢুকান, ডেঙ্গুতে প্লাটিলেট কমে এটা প্রমানিত, তবে ডেঙ্গুতে রক্তক্ষরণের সাথে প্লাটিলেটের সংখ্যার সম্পর্ক নাই বললেই চলে। আমাদের অনেক রোগী ছিল যাদের প্লাটিলেট ২০ হাজারের নিচে, (আমার এক রোগীর আট হাজার ছিলো) তাদের একজনেরও রক্তক্ষরণ হয়নি, আবার যে তিন চারজনের রক্তক্ষরণ হয়েছে (মাইনর ব্লিডিং) তাদের সবার প্লাটিলেট কাউন্ট ৪০ হাজারের বেশি ছিল। ডেঙ্গুতে কেন প্লাটিলেট কমে তা নিয়ে অনেক হাইপোথেসিস আছে, তা আমজনতার জানার প্রয়োজন নেই, তবে রক্তক্ষরণ মূলত প্লাটিলেটের সংখ্যা কমার কারনে হয়না, হয় প্লাটিলেটের ডিসফাংশনের কারনে (সাথে আরো কিছু কারন আছে যেমন ক্ষেত্রবিশেষে কোআগুলোপ্যাথি-মানে রক্তজমাটে সমস্যা ইত্যাদি) অর্থ্যাৎ প্লাটিলেট তার কাজ ঠিকমত না করার ফলে।

এমন অনেক স্টাডি আছে যেখানে দেখা গেছে, যাদের প্লাটিলেট কমে যাওয়ায় আগেই প্লাটিলেট দেওয়া হয়েছে এবং যাদের দেওয়া হয়নি দুই গ্রুপের মধ্যে রক্তক্ষরণের হারের কোন তফাত নেই, মানে সহজ কথায় দিয়ে লাভ হয়নি, উপরন্তু এই প্লাটিলেট শরীরে গিয়ে টিকেনা, বরং যাদের প্লাটিলেট দেওয়া হয়েছে তাদের মধ্যে উল্টো প্রতিক্রিয়ার হার বেশি। তবে হা যদি কারো রক্তক্ষরণ হয়, প্লাটিলেট খুব কম থাকে তখন প্লাটিলেট দেওয়া যেতে পারে, তার আগে নয়। তাহলে প্রশ্ন হলো প্লাটিলেট বাড়ানোর ঔষুধ - ETP(Eltrombopag) , papaya,caripa, পেপে পাতার রস প্রেসক্রাইব করেন কেন কিছু চিকিৎসক?

কারণ আমার মতে তিনটি—

১. রোগীদের অস্থিরতাঃ রোগীরা বুঝতে চান না, খালি প্লাটিলেট নিয়ে চিকিৎসকদের বিরক্ত করেন, তাই দিলে ক্ষতি কি, এগুলোতে প্লাটিলেট সাময়িক বাড়ার প্রমান আছে ভেবে চিকিৎসকরা দেন।

২. অজ্ঞতাঃ অনেক চিকিৎসক আছেন যারা গাইডলাইন পড়েন না, কেবল ঔষুধ কোম্পানীর কথা শুনে ঔষুধ লিখেন

৩. কনফিডেন্সের অভাবঃ পর্যাপ্ত রোগী ম্যানেজ করার অভাবে অনেকে ভয় পেয়ে যান রোগীদের মতই প্লাটিলেট কমে গেলে।

আমার এক রোগীর লোক আমার মাথা খারাপ করে দিছিলো প্লাটিলেট ২৮ হওয়াতে। আমি জাস্ট রোগীর প্রেশার ভাল, এলার্ম ফিচার নাই, হেমাটোক্রিট ভাল দেখে বলছিলাম কিছু লাগবেনা, ভাল আছে। পরদিন কমে ২২ হলো, তারা আরো worried, বললাম ভাল আছে, তারা সংশয়ে, ঢাকা যাবে কিনা, আমি কনফিডেন্ট। সন্ধ্যা থেকেই রোগী ভাল, পার্টিরও মাথা ব্যথা কমা শুরু হলো কারন প্লাটিলেট বাড়া শুরু করলো, ক্রিটিকাল ফেইজ পেরুলেই প্লাটিলেট বাড়া শুরু করে, প্লাটিলেট আমাদের মূলত রোগের ফেইজটা বুঝতে হেল্প করে।

পরের লেখায় আসল জিনিস হেমাটোক্রিট নিয়ে লিখবো ইনশাল্লাহ, সাথে আমাদের এক ইন্টারেস্টিং কেইস নিয়ে।

ছবিতে পাবমেডে প্রকাশিত ২০২২ এর একটা আর্টিকেলের কিছু অংশ দিলাম।

367441316_10226964280604750_5593056767306224675_n

আরও পড়ুন