ডেঙ্গুর ভ্যাকসিন বিলম্বের ৩ কারণ (ইনসেটে লেখক)
ডেঙ্গু এডিস মশাবাহিত ভাইরাস জনিত একটি রোগ। ব্রেক বোন ফিভার, ব্রেক হার্ট ফিভার অথবা সেভেন ডে ফিভার সবনামেই ডেঙ্গু জ্বর নামক মশাবাহিত এই রোগটি পরিচিত। ডেঙ্গুতে আক্রান্ত অতঃপর শক সিনড্রোম ও হেমারেজিক অবস্থা তারপর মৃত্যু।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ডেঙ্গুতে সংক্রমণের সংখ্যা গত দুই দশকে আশঙ্কাজনকহারে বেড়েছে। ডেঙ্গু ইতোমধ্যেই ১০০টি দেশে মহামারি আকার ধারণ করেছে। এবং প্রতি বছর নতুন নতুন অঞ্চলে এই ভাইরাসের সংক্রমণের খবর পাওয়া যাচ্ছে।
সবচেয়ে ভাবনার বিষয় হচ্ছে, ডেঙ্গু ভাইরাসের বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত কোনও নির্দিষ্ট চিকিৎসা এবং সর্বজনীনভাবে প্রতিরোধেরও কোন পদ্ধতি আবিষ্কৃত হয়নি। এদিকে গবেষকরা কয়েক দশক ধরে ডেঙ্গুর বিরুদ্ধে একটি কার্যকর ভ্যাকসিন তৈরি নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন।
সবমিলিয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য মতে, এখন পর্যন্ত একটি মাত্র ডেঙ্গু ভ্যাকসিন ডেঙ্গভ্যাক্সিয়া অনুমোদন পেয়েছে এবং আরও প্রায় পাঁচটি ডেঙ্গু ভ্যাকসিন ক্লিনিক্যাল পর্যায়ে রয়েছে।
এমন অবস্থায় ডেঙ্গুর ভ্যাকসিন তৈরি হলেও তিনটি কারণে কার্যকারিতা নিয়ে গবেষকদের ভেবে দেখতে হচ্ছে,
প্রথমত, ডেঙ্গু ফ্লাভিভাইরিডি পরিবারের একটি ভাইরাস এবং এর চারটি স্বতন্ত্র, কিন্তু ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কিত ৪টি সেরোটাইপ রয়েছে যা ডেঙ্গু সৃষ্টিতে ভূমিকা রাখে। এবং এই মুহূর্তে কার্যকরী কোন ভ্যাকসিন তৈরি করা সম্ভব হয়নি যা ডেঙ্গুর এই চারটি সেরোটাইপ থেকে রোগীকে সুরক্ষা দিতে পারে।
দ্বিতীয়ত, যেহেতু ডেঙ্গুতে সবচেয়ে বেশি সংবেদনশীল ব্যক্তিরা যেমন অল্পবয়সী শিশুরা, বয়স্ক ব্যক্তিরা এবং দুর্বল ইমিউন সিস্টেমের ব্যক্তিরা আক্রান্ত হচ্ছেন। এবং তৈরিকৃত ভ্যাকসিনগুলো যেহেতু শিশুদের এবং বয়স্কদের নেওয়ার ক্ষেত্রে ফলাফল এখনো আসেনি সে হিসেবে বিজ্ঞানীদের আরও সময়ের প্রয়োজন আছে।
তৃতীয়ত, যেহেতু ডেঙ্গু একটি তীব্র ভাইরাল সংক্রমণ, তাই সংক্রমণের প্রাথমিক পর্যায়ে অ্যান্টিভাইরাল চিকিৎসা দিতে হবে। কিন্তু এই মুহুর্তের ভ্যাকসিনগুলো তখনই ব্যবহার করা যাবে যারা পূর্বে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন তা নিশ্চিত হওয়ার পরে। এক্ষেত্রে আরেকটি চ্যালেঞ্জ হচ্ছে বেশিরভাগ ডেঙ্গু রোগী অসুস্থতার তৃতীয় বা চতুর্থ দিন পর্যন্ত নরমাল জ্বর ভেবে বাসায় চিকিৎসা নিয়ে থাকেন। এবং প্রাথমিক পুরো সময়টা বাসায় পার করে খারাপ অবস্থা হলে হাসপাতালে আসেন।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ও মারা যাওয়ার সংখ্যা আশঙ্কাজনকহারে বাড়ছে। এর ফলে ডেঙ্গু প্রতিরোধের ডেঙ্গু প্রবল এলাকার মানুষদের জন্য একটি নির্দিষ্ট চিকিৎসার প্রয়োজন দেখা দিয়েছে। এই অবস্থা বিবেচনায় গবেষকরা খুব দ্রুত ডেঙ্গুর কার্যকর ভ্যাকসিন উৎপাদন করতে সফল হবেন বলে আশা করছি।
লেখক :
কামরুজ্জামান নাবিল
ইন্টার্ন, বারডেম।
ও সাবেক শিক্ষার্থী,
ইস্পাহান মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, ইরান।
আরও পড়ুন