Advertisement
Doctor TV

বুধবার, ৫ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫


আমাদের দাবিকে যৌক্তিক বললেও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না

Main Image

মাসিক ভাতা ৫০ হাজার টাকার দাবিতে ৮ জুলাই থেকে কর্মবিরতির ডাক দিয়েছে বেসরকারি পোস্ট-গ্রাজুয়েট ট্রেইনি ডক্টরস এসোসিয়েশন


আপনারা সবাই জানেন, আমরা গত ৬ মাস ধরে আমাদের সমস্যাগুলো জানাতে এবং ভাতা বৃদ্ধি করার জন্য সবার কাছে যাচ্ছি। আমরা বিসিপিএস, বিএসএমএমইউ, বিএমএ, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরসহ নানান জায়গায় গিয়েছি আমাদের দাবি নিয়ে কথা বলতে। সবাই আমাদেরকে বলেছে তোমাদের দাবি যৌক্তিক, কিন্তু তারপর আর কোন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেননি।


আমরা চিকিৎসক, আমাদের কাজ রোগী দেখা, হাসপাতালে থাকা, রাস্তায় নয়। আজ কেন আমাদের আন্দোলন করতে হচ্ছে? কারণ আমাদের কথা কেউ ভাবে না।


সবাই চায়, আমরা ডাক্তার, আমরা শুধু চিকিৎসা দিবো। কিন্তু আমরাও যে মানুষ, আমাদেরও পরিবার আছে- তা কেউ ভাবে না। আমরা যারা পোস্ট গ্রাজুয়েট ডাক্তার, সবার বয়স ২৮-৪০ বছর। এই বয়সে আমরা কি পরিবার থেকে টাকা নিয়ে চলবো? নাকি আমাদেরকে পরিবারের দায়িত্ব নেওয়ার কথা? একবার ভাবেন তো, যে ডাক্তারের বাবা নাই, তার পরিবার তার উপর নির্ভরশীল, সে ডাক্তারের পক্ষে কিভাবে সম্ভব পোস্ট গ্রাজুয়েট ট্রেইনিং নিয়মিত করা?

তার ২০ হাজার টাকা দিয়ে বাসা ভাড়া দিবে?  নাকি খাওয়ার খরচ দিবে? ছোট ভাই-বোন থাকলে তো আরও বিপদ। তার পড়াশুনার খরচ। সে তো ডাক্তার, সে কি পারবে কারোর কাছে হাত পাততে? আমাদের মধ্যে অনেক পোস্ট গ্রাজুয়েট ট্রেইনি ডাক্তার আছেন, যারা জুলাই ২০২৩ থেকে ট্রেইনিং বন্ধ করে, চাকরিতে ঢুকেছেন। কারণ অনেকে ঋণগ্রস্ত, বাসা ভাড়া দিতে পারেন না। পরিবার নিয়ে চলতে পারছেন না। বর্তমানে দ্রব্যমূল্যের যে ঊর্ধগতি, ২০ হাজার টাকা ভাতা দিয়ে জীবনযাপন করে, পোস্ট গ্রাজুয়েট ট্রেইনিং করা বিলাসিতা।

আমি পোস্ট গ্রাজুয়েট ট্রেইনিং করবো এটা আমার অধিকার। কিন্তু আমরা তো সে অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছি। ভাতের অভাবে পরিবার নিয়ে কষ্ট করে আমরা তো ট্রেইনিং করতে পারছি না।

আমরা এখন প্রত্যেক দিন ঘুম থেকে উঠে, ঘুমানোর আগ পর্যন্ত ভাবি কি করবো এবং কি করা উচিৎ?  আমরা পোস্ট গ্রাজুয়েট ট্রেইনি ডাক্তাররা ভালো নেই। দিন দিন মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে যাচ্ছি। আমরা দেশের মানুষকে ভালো চিকিৎসা যদি দিতে চাই, আমাদেরকে তো সুস্থ থাকতে হবে।


আমরা যদি সুস্থ থাকি, ভালো থাকি, তাহলে আমরা ভালোভাবে রোগী দেখতে পারবো, তাদের উন্নত সেবা দিতে পারবো। আমরা চাই সুস্থ মস্তিষ্ক নিয়ে, আমাদের দেশের মানুষকে সেবা দিতে। আমাদের দাবি মেনে নিয়ে, আমাদেরকে সেই সুযোগ করে দেওয়া হোক।


আমরা অনেক দিন ধরেই আন্দোলন করে আসছি, সবাইকে অবগত করেছি। কিন্তু সবাই আমাদের দাবিকে যৌক্তিক দাবি বললেও, কেউ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছেন না।


আমরা জানি ১৯৫২ এর ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস। ১৯৭১ এ আমাদের বাঙালী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কিভাবে নেতৃত্ব দিয়ে এই দেশকে স্বাধীন করেছেন। আমরা তারই আদর্শের। আমরা জানি কিভাবে আন্দোলন করতে হয়। আমরা কাউকে ভয় করি না। আমাদের ভয় দেখিয়ে লাভ নাই।


যেহেতু আমাদের দাবি এখন পর্যন্ত মেনে নেওয়া হয়নি। তাই সকল পোস্ট গ্রাজুয়েট ট্রেইনি ডাক্তারদের সাথে কথা বলে, সবার মতামতের ভিত্তিতে আগামী ০৮/০৭/২০২৩ তারিখ থেকে আমরা সারাদেশের সকল হাসপাতালের সকল পোস্ট গ্রাজুয়েট ট্রেইনি ডাক্তাররা কর্মবিরতির ঘোষণা দেই।


০৮/০৭/২৩ অবস্থান কর্মসূচী, ০৯/০৭/২৩ গণ অনশন। পরবর্তী কর্মসূচী পরে জানানো হবে। 


আমাদের  বর্তমান দাবি -


১) ভাতা বৃদ্ধি করে ৫০ হাজার টাকা করতে হবে। 


২) ভাতা নিয়মিত দিতে হবে। 
 
যদি আমাদের দাবি মেনে নেওয়া হয়। আমরা সাথে সাথে কর্মবিরতি থেকে ফিরে আসবো। আমরা হাসপাতালে থাকতে চাই, রোগীর সেবা দিতে চাই, ভালো মানের ডাক্তার হতে চাই। আমাদেরকে সেই সুযোগ দেওয়া হোক। 


মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাদের মায়ের মত। তিনি সকলের কষ্ট বুঝেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমাদের আকুল আবেদন, আমাদের দাবি মেনে নিয়ে  আমাদেরকে হাসপাতালে থেকে দেশের মানুষকে উন্নত সেবা প্রদান করে দেশকে সামনে এগিয়ে নেওয়ার সুযোগ করে দেবেন। 


লেখক :


ডা. মো. নুরুন্নবী 


সাধারণ সম্পাদক, বেসরকারি পোস্ট-গ্রাজুয়েট ট্রেইনি ডক্টরস এসোসিয়েশন। 

আরও পড়ুন