Advertisement
Doctor TV

বৃহস্পতিবার, ৬ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫


সন্তানকে ডাক্তারি-ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ানোর জন্য পাগল হইয়েন না

Main Image

ডা. আমিরুজ্জামান মোহাম্মদ শামসুল আরেফিন, সাবেক সেক্রেটারি, সন্ধানী


অভিভাবকদের বলবো
সন্তানকে ডাক্তারি-ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ানোর জন্য পাগল হইয়েন না।

বড় বড় ডাক্তারের চেম্বারে গিয়ে আপনার চোখ ধাঁধিয়ে গেছে। বাপরে বাপ। ৪০ টা রুগী সিরিয়ালে। প্রতি রুগী ৫০০ করে হলে দিনে ২০,০০০ টাকা। মাসে ৬ লাখ টাকা হালালভাবে। আমাদের ছেলে ডাক্তারই হবে। শোন গ্যাদা, অমুকের পাও ধুয়ে পানি খা।

বা আপনার টাকা আছে। ৩০ লাখ টাকা দিয়ে মেয়েকে প্রাইভেট মেডিকেলে দিয়েছেন। ডাক্তার হয়ে গেলে ৫ বছরে ও টাকা উঠে আসবে ভাবছেন?

৯০% সম্ভাবনা যে, সর্বোচ্চ মেধা দিয়েও আপনার ছেলে মাসে ২০,০০০/- টাকা আনতে পারবে না। দিনে ২০ হাজারের স্বপ্ন পূরণ হবার নয়। আপনার শখ পূরণ করতে গিয়ে কৈশোর-যৌবন সব বরবাদ করবেন না আপনার সন্তানের।

যাদের চেম্বারে গিয়ে আপনার খায়েশ জন্মেছে, তাদের সময় সারা দেশে ডাক্তারই ছিল ১০ হাজার। আর এখন ১ লাখ+। ঝাঁকে ঝাঁকে মেডিকেল কলেজ। বিশেষজ্ঞ হবার সুযোগ সে তুলনায় বাড়েনি। অহেতুক প্রেসার তৈরি ছাড়া সে আর কিছুই পাবে না আপনার এই দিনে ২০ হাজার টাকার স্বপ্নে।

★ লক্ষ্য যদি টাকা হয়, তবে দুনিয়াতে আরও বহু কিছু আছে। ৩০-৪৫ বছর, এই সময়টা যারা সচ্ছল ও ধনী থাকতে চায়, তাদের না আসা উচিত ডাক্তারি পেশায়। এই সময়টাও যারা বাপ থেকে সাহায্য নিতে পারবেন, তারা ডাক্তারি পড়বেন। আমার বয়স ৩৫, পোস্টগ্র্যাড করছি, বাপের থেকে সাহায্য নিচ্ছি মাসে ২০ হাজারের উপরে।

অল্প বয়সে যাদের বেশি টাকা দরকার, তাদের জন্য পরামর্শ:

১. পলিটেকনিকে পড়ে ২০ বছর বয়সে বিদেশ গমন। ৩০ বছরে দেশে এসে একবারে বিয়ে করা। সঞ্চয় কাউকে না দিয়ে সংরক্ষণ করা।

২. প্রোগ্রামিং ইত্যাদি শিখে ফ্রীল্যান্সিং করে ১৮ বছর থেকেই পসার জমান।

৩. এসএসসি/এইচএসসির পর থেকেই ব্যবসা শেখা ও ছোটো বিনিয়োগ বেশি শ্রম দিয়ে ব্যবসা শুরু করা। ৩০ বছর বয়সে আশা করা যায় আপনার ব্যবসা একাধিক ট্রায়ালের পর দাঁড়িয়ে যাবে।

৪. মেরিন অফিসার/ মেরিন ইনজিনিয়ার হতে পারেন। ভালো মেধা থাকলে ৩০ বছরের মাঝে কোটি দশেক ব্যাংক-ব্যালেন্স থাকবে। এরপর হয় বিয়েশাদী করে আর গেলেন না। বা বছরে ৪-৬ মাস (শরয়ী অনুমোদন সাপেক্ষে) সাগরে থাকলেন। বাকি সময় পরিবারকে সময় দিলেন। ব্যবসাপাতি করলেন।

একটা অকেজো সার্টিফিকেটের জন্য ৬-৭ বছর নষ্ট করবেন না। শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়ে ভাবছেন? ৩০-৩২ বছরে আপনার কাছে বেসরকারি ভার্সিটিতে অনার্স-মাস্টার্স করার পয়সা চলে আসবে। বাবার টাকায় না, নিজের টাকায় পড়তে পারবেন। সার্টিফিকেট এখন পণ্য। টাকা থাকলে কিনতে পারবেন। সময়-মেধা খরচ করার দরকার নেই। ভেবে দেখতে পারেন।

★ আসলেই জ্ঞান অর্জন ও জ্ঞানের জন্য ত্যাগ স্বীকারে যারা আগ্রহী। তারা এইচএসসির মধ্যে...

- ইংরেজি রীডিং-রাইটিং এ প্রো হোন।

- এনালিটিক্যাল রিজনিং বাড়ান। বাজারে নানান বই পাওয়া যায় 'গাণিতিক যুক্তি ও মানসিক দক্ষতা' বাড়ানোর।

এবার ভার্সিটিতে যেকোনো সাবজেক্টে পড়ুন। ঘাড় গুঁজে পড়ুন। ভার্সিটি কালচার থেকে দূরে থাকুন। সিজিপিএ হাই রাখুন। বিদেশে উচ্চশিক্ষার ফিকির রাখুন। ডাক্তারি পড়ার ঐ ৩০ লাখ এই রাস্তায় ব্যয় হলে নিঃসন্দেহে আন্তর্জাতিক মানের স্কলার হয়ে যাবেন। ডাক্তারি না পড়লেই আপনি ৩০-৪৫ বছরের মাঝে এতো কিছু পেতে পারেন, যা ডাক্তারি পড়লে পাবেন না।

গণহারে ডাক্তারি পড়তে নিরুৎসাহিত করছি সজ্ঞানে।

আরও পড়ুন