Advertisement
Doctor TV

রবিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৫


আমেরিকা-কানাডায় লাখো মানুষকে এন-৯৫ মাস্ক পরার পরামর্শ

Main Image

ক্ষতিকারক ধোঁয়ার সূক্ষ্ম কণাগুলো স্বাস্থ্যের জন্য সবচেয়ে বড় ঝুঁকি তৈরি করে


কানাডার বনাঞ্চলে আগুন লেগেছে। এ আগুনের ক্ষতিকর ধোঁয়া কানাডা থেকে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক শহর পর্যন্ত ছড়িয়েছে। এতে দুই দেশের নাগরিকদের এন-৯৫ মাস্ক পরার অনুরোধ করা হয়েছে। নিউইয়র্ক বৃহস্পতিবার (৮ জুন) থেকে বিনামূল্যে মাস্ক বিতরণ শুরু করছে বলে খবর দিয়েছে বিবিসি।

কানাডা জানিয়েছে, ক্ষতিকারক ধোঁয়া এ সপ্তাহের শেষ পর্যন্ত বায়ুমণ্ডলে থাকবে। এসব ধোঁয়া কানাডার কুইবেক প্রদেশ থেকে আসছে। এই প্রদেশের বনাঞ্চলের ১৫০ স্থানে আগুন লেগেছে। তাই কারও যদি বাইরে যাওয়া জরুরি হয়ে পড়ে, তার মাস্ক পরিধান করা উচিত।

নিউইয়র্কের গভর্নর ক্যাথি হচুল ঘোষণা করেছেন, নিউইয়র্ক বৃহস্পতিবার থেকে নাগরিকদের মধ্যে ১০ লাখ মাস্ক বিতরণ করবে। তিনি একটি সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘এটি একটি অস্থায়ী পরিস্থিতি। এটি কভিড নয়। তবে নিউইয়র্ক সিটির বাস ও ট্রেনগুলোতে উচ্চ মানের বায়ু পরিস্রাবণের ব্যবস্থা রয়েছে, যা নিরাপদ ভ্রমণ নিশ্চিত করবে।’

কানাডার পরিবেশ বিভাগ জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার টরন্টোতে ধোঁয়ার পরিস্থিতি আরও খারাপ হচ্ছে। বুধবার দেশটির একটি বিশেষ আবহাওয়া বুলেটিন বাইরের যে কাউকে মাস্ক পরার পরামর্শ দিয়েছে।

বিবৃতিতে সংস্থাটি বলেছে, ক্ষতিকারক ধোঁয়ার সূক্ষ্ম কণাগুলো স্বাস্থ্যের জন্য সবচেয়ে বড় ঝুঁকি তৈরি করে। শ্বাসযন্ত্র দাবানলের ধোঁয়ায় থাকা গ্যাসের সংস্পর্শে আসা কমায় না।

এরইমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের পরিবেশ সুরক্ষা সংস্থা, উত্তর-পূর্বাঞ্চলের বাতাসের মানকে শ্বাসযন্ত্রের রোগে ভুগছেন এমন বাসিন্দাদের জন্য ‘অস্বাস্থ্যকর’ ঘোষণা করেছে। সব মিলিয়ে উত্তর আমেরিকার লাখ লাখ মানুষ দূষিত বাতাসের ঝুঁকিতে রয়েছে বলে সতর্ক করা হয়েছে।

নিউইয়র্কে কমলা রঙের কুয়াশা শহরের আকাশসীমা ঢেকে দিয়েছে। এছাড়া স্ট্যাচু অব লিবার্টির মতো উল্লেখযোগ্য স্থাপনাও এতে ঢেকে গেছে। বুধবার মেয়র এরিক অ্যাডামস বলেছেন, ‘আমরা নিউইয়র্কবাসীকে আহ্বান জানাচ্ছি, তারা যাতে যতটা সম্ভব বাইরের কাজকর্ম কমিয়ে ফেলেন।’ নিউইয়র্কে চিড়িয়াখানায় পশুদের ঘরের মধ্যে আনা হয়েছে এবং ঘোড়ায় টানা গাড়ির চলাচল বন্ধ রয়েছে।

বুধবার ওয়াশিংটন ডিসির স্কুলগুলোতে সব ধরনের বাইরের কর্মকাণ্ড বাতিল করা হয়েছে। সেখানে বাতাসের মান ‘কোড রেড’ ঘোষণা করা হয়েছে।

ডেট্রইট হচ্ছে বিশ্বের পঞ্চম মেট্রোপলিটন শহর, যার বাতাসের মান খুবই খারাপ। স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা মানুষদের বাইরে শরীরচর্চা করতে নিষেধ করেছে এবং যত কম সম্ভব ধোঁয়ার সংস্পর্শে আসার পরামর্শ দিয়েছে। কারণ এ ধোঁয়া তাৎক্ষণিক এবং দীর্ঘমেয়াদে স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করবে বলে আশঙ্কা রয়েছে।

আগুনে এরইমধ্যে কানাডায় ৩.৮ মিটার হেক্টর এলাকা পুড়ে গেছে, যা বছরের এই সময়ে গত ১০ বছরে হওয়া গড় দাবানলের তুলনায় ১২ গুন বেশি। জলবায়ু পরিবর্তন গরম, শুষ্ক আবহাওয়ার ঝুঁকি তৈরি করেছে, যা দাবানলকে আরও তীব্র করবে।

কানাডার দমকল বাহিনী দেশজুড়ে শুরু হওয়া ৪০০টির মতো দাবানল নিয়ন্ত্রণে আনতে বেগ পাচ্ছে, দেশটির পূর্বাঞ্চলের বেশিরভাগ এলাকা এবং পূর্ব উপকূল ধোঁয়ার চাদরে ঢেকে গেছে।

বাতাসের মান ও দূষণ নিয়ে দুই দেশের স্বাস্থ্য কর্মকর্তারাই হুঁশিয়ারি জারি করেছেন। বিশেষজ্ঞরা বলেন, দাবানলের ধোঁয়া দীর্ঘমেয়াদে নানা ধরনের স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করতে পারে।

সেন্টার অব আরবান এনভায়রনমেন্ট নামে একটি সংস্থার পরিচালক এবং ইউনিভার্সিটি অব টরেন্টোর অধ্যাপক ম্যাথিউ অ্যাডামস বলেছেন, দাবানলের ধোঁয়া নিঃশ্বাসের সঙ্গে প্রবেশ করলে তাৎক্ষণিকভাবে শ্বাসকষ্ট, হৃদস্পন্দন বেড়ে যাওয়া, বুকব্যথা কিংবা চোখ, নাক এবং গলায় জ্বালাপোড়া।

তিনি বলেন, ‘বাতাসের এ দূষণের সময়টাতে আমরা হাসপাতালে রোগীর ভিড় দেখব। আর যারা এ সময়ে হাসপাতালে আসবে, তাদের আগে থেকেই শ্বাসযন্ত্রের জটিলতা থাকবে। কিন্তু দাবানলের ধোঁয়ায় আরও দীর্ঘমেয়াদি স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি হতে পারে। যেমন ক্যান্সার বা ফুসফুসের রোগ, বিশেষ করে যারা ওই এলাকার বাসিন্দা এবং প্রায়ই দাবানলের শিকার হন।’

অধ্যাপক অ্যাডামস আরও বলেন, অনেক গবেষণায় দেখা গেছে, দীর্ঘ সময় ধরে দাবানলের আগুনের ধোঁয়ার সংস্পর্শে থাকলে তা গর্ভবতী নারী ও তার গর্ভের সন্তানের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে।

আরও পড়ুন