Advertisement
Doctor TV

রবিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৫


শিশুর ‘ফিট ব্যামো’

Main Image

ফিট এর অন্যতম কারণ মৃগীরোগ


শিশুর হঠাৎ সংজ্ঞা হারানোকে সাধারণ ভাষায় ‘ফিট ব্যামো’ বলা হয়। এর অন্যতম কারণ এপিলেপসি বা মৃগীরোগ। এই রোগের ধারণা পেতে চিকিৎসককে বিস্তারিত ইতিহাস জানতে বা ঘটনা প্রত্যক্ষ করতে হয়।

অথবা অভিভাবক শিশুর ‘ফিট’ হয়ে যাওয়ার ঘটনা চিত্রায়ণ করে দেখালে চিকিৎসক ধারণা পেতে পারেন। কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা এই রোগ নির্ণয়ে ও কারণ অনুসন্ধানে সহায়ক। এর মধ্যে আছে ইলেকট্রো-এনসেপাফালোগ্রাফি (ইইজি), ব্লাড সুগার, ক্যালসিয়াম, মেটাবলিক স্ক্রিনিং। দরকার হলে মাথার সিটি স্ক্যান করতে হবে।

হতে পারে অন্য কিছু

রোগটি আসলেই ‘ফিট ব্যামো’ কি না, যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে তা নির্ণয় করা জরুরি। কারণ—

ভঙ্গিমা: অনেক শিশু মাঝেমধ্যে সংজ্ঞা হারানোর মতো অবস্থা করে থাকে। আসলে এটা তাদের একধরনের ভঙ্গিমা। এ ক্ষেত্রে মায়ের উপস্থিতিতে শিশুকে পর্যবেক্ষণ করতে হবে।

জিটারিনেস: কারও হঠাৎ হঠাৎ হাত-পা কাঁপে। একটু উদ্দীপ্ত করলে এমনিতে এটি হয়।

গ্লুকোজ: রক্তে গ্লুকোজ কিংবা ক্যালসিয়ামের মাত্রা কম থাকলে এমন হতে পারে।

ব্রেথ হোল্ডিং: কিছু চেয়ে না পেলে, রাগ-হতাশা-ভয় এসব থেকে শিশু কেঁদে কেঁদে প্রায় শ্বাসরোধ হওয়ার মতো অবস্থায় চলে যায়। তবে কিছুক্ষণের মধ্যে আপনা-আপনি সেরে ওঠে।

গরম: খুব গরমে অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকলে শিশু হঠাৎ চেতনা হারিয়ে ফেলতে পারে।

দুঃস্বপ্ন: নাইটমেয়ার বা দুঃস্বপ্নের কারণে এমনটা হতে পারে।

হিস্টিরিয়া: অতিরিক্ত মানসিক চাপে হিস্টিরিয়ার কারণে এমন হতে পারে।

বয়সভেদে শিশুর ‘ফিট ব্যামো’

নবজাতক (১ থেকে-২৮ দিন): মাথায় আঘাত (ইন্ট্রাক্রেনিয়েল ইনজুরি), এসফাইয়িকসিয়া, মেনিনজাইটিস (মস্তিষ্ক ও মেরুরজ্জুর আবরণীতে জীবাণুর আক্রমণ), হাইপোগ্লাইসেমিয়া (রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা কমে গেলে), ধনুষ্টঙ্কার প্রভৃতি কারণে খিঁচুনি হতে পারে। এ ক্ষেত্রে সারা শরীরে খিঁচুনি হতে থাকার মতো ঘটনা খুব কমই থাকে। চোখ একপাশে স্থির হয়ে থাকা, ঠোঁটের কোণে কাঁপুনি, হঠাৎ নীল হয়ে যাওয়া, হাত-পায়ের আঙুল কাঁপতে থাকা—এসব নিয়েই নবজাতকের খিঁচুনি দেখা দেয়।

ইনফ্যান্সি (১ বছর বয়সের মধ্যে): টনিক-ক্লোনিক অর্থাৎ সম্পূর্ণ চেতনা লোপ না পেয়েও ‘ফিট ব্যামো’ হতে পারে। এটি ইনফ্যান্টাইল স্পাজাম, অন্য নাম ‘সালাম ফিটস’। অর্থাৎ হঠাৎ সামনের দিকে ঝুঁকে বা পেছনের দিকে বেঁকে শিশু চিৎকার করে ওঠে। ইইজিতে এ রোগ নিশ্চিত ধরা পড়ে। খিঁচুনি মিনিটে অনেকবার পর্যন্ত হতে পারে। এটি খুব জটিল রোগ। এর সঙ্গে মস্তিষ্কের জন্মত্রুটি জড়িত।

বেশি বয়সী শিশু: ফিব্রাইল কনভালশনস বা জ্বরের সঙ্গে খিঁচুনি হতে পারে। সিমপ্লেক্স পারসিয়েল বা ভিন্ন ধরনের ‘ফিট’। যেমন মাথা নাড়ানো, ঠোঁট চাটানো। এ ক্ষেত্রে রোগী জ্ঞান হারায় না, মাটিতে পড়ে যায় না।

করণীয়

১- শুধু রাতে একবার মাত্র ফিট হয়েছে বা হচ্ছে—তাহলে দুশ্চিন্তার কিছু নেই।

২- বার বার ফিট হচ্ছে—বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

৩- এক ডোজ ওষুধও যেন বাদ না পড়ে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।

 

অধ্যাপক প্রণব কুমার চৌধুরী

শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ, চট্টগ্রাম

আরও পড়ুন