Advertisement
Doctor TV

বৃহস্পতিবার, ৬ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫


মরণোত্তর উত্তরণ

Main Image

স্বাস্থ্য প্রশাসনের অভ্যন্তরীন নানা বিষয় নিয়ে লিখেছেন অধ্যাপক ডা. হাবিবুল্লাহ তালুকদার রাসকিন


গত সপ্তাহে সরকার ৪৭০ জন চিকিৎসককে ক্যাডারভূক্তির আদেশ জারি করেছেন। যারা উন্নয়ন প্রকল্পে চাকুরিতে যোগ দিয়ে পরবর্তীতে রাজস্বখাতে স্থানান্তরিত হয়েছেন। এরপর পাবলিক সার্ভিস কমিশন চাকরি নিয়মিতকরণের জন্য সুপারিশ করেছে। মন্ত্রণালয় তাদের নিয়মিতকরণের আদেশ জারি করেছে। এরপর একই ভাবে চাকরি স্থায়ীকরণ হয়েছে। এমন অনেক ধাপ অতিক্রম করেও শুধু 'ক্যাডার' না হওয়ায় চাকরিতে ঘাটে ঘাটে বঞ্চিত হয়েছেন। স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারী হয়েও পদোন্নতিবঞ্চিত হয়েছেন। খুঁটির জোরে কেউ কেউ প্রথম দিকে ডিপিসি পেরুতে পারলেও এসএসবিতে বাদ পড়েছেন। পরের দিকে কেউ কেউ এসএসবিতে অধ্যাপক হয়েছেন। কিন্তু এই ভোগান্তি এত দীর্ঘ হলো কেন? যতদূর মনে পড়ে, এই চিকিৎসকদের পক্ষ থেকে চেষ্টা চলছিলো অন্ততঃ একযুগ আগে থেকে।

প্রশাসনের ধীর গতি, লাল ফিতের দৌরাত্ম তো ছিলোই। আর ছিলো অন্তর্কলহ। সামগ্রিকভাবে ডাক্তাররা অন্য কিছু ক্যাডারের তুলনায় অনেক বঞ্চনার শিকার। অথচ নিজেরা একজন আরেকজনকে ঠ্যাং ধরে নামানোর জন্য মহাতৎপর! মামলা-মোকাদ্দমায় যেতেও পিছপা নন।

যাক, ৪৭০ জন চিকিৎসককে ক্যাডারভূক্তির জন্য অভিনন্দন। তবে বেশ কয়েকজনের কোন কাজে আসবে না অতি-বিলম্বিত এই আদেশ।

b8405527-84ae-4c63-951f-0499fb0f2ea4

তালিকায় নয় নম্বরের নামটি আমার বন্ধু গোলাম মহিউদ্দিন দীপুর! ক্যান্সারের করাল থাবা কয়েক বছর আগেই যাকে নিয়ে গেছে সকল সরকারি আদেশের আওতার বাইরে! পরিচিত কিছু নাম দেখলাম, যারা অবসরে চলে গেছেন। আমার সাথে একই দিনে চাকরিতে যোগদানকারী ছোটভাই শফিক ঢাকা মেডিকেল কলেজের প্রিন্সিপালের দায়িত্ব পেয়ে গেছে, তার নামও দেখলাম ষোল নম্বরে।

আর দশ নম্বর নামটি আমার নিজের! তিন মাস আগেই অবসরে চলে এসেছি। অবশ্য আমার পদোন্নতির পথে এই 'ক্যাডারভূক্তি'র কোন ভূমিকা ছিলো না বিধিগত। কারণ আমার প্রকল্পের চাকুরি রাজস্বতে স্থানান্তর, নিয়মিতকরণ, স্থায়ীকরণ হওয়ার পর আমি পাবলিক সার্ভিস কমিশনের বিজ্ঞাপিত সহকারী অধ্যাপক পদে প্রতিযোগিতার মাধ্যমে 'নিয়োগপ্রাপ্ত'। ভূক্তভোগী অন্যরা পিএসসি নয়, ডিপিসির মাধ্যমে 'পদোন্নতিপ্রাপ্ত' ছিলেন।

তবে আসল কথাটা এবার বলি। অধ্যাপক পদে পদোন্নতির বেলায় নিয়মে নয়, আমাকে ভূগালো 'অনিয়মে'। চলতি দায়িত্ব ও নিয়মিত দায়িত্ব মিলে ক্যান্সার ইপিডেমিওলোজির 'সহযোগী অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান' পদবী আমাকে আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে ফেলেছিলো। আ-ঠা-রো বছর ছিলাম একই পদে। বিভাগের প্রথম শিক্ষক (পথিকৃৎ বলাই যায়), একমাত্র প্রার্থী। বাদ গেলাম পারিবারিক টাইটেল 'তালুকদার' হওয়ায়! পাঁচ বছর পর আমি হলাম দ্বিতীয় প্রার্থী, প্রথম প্রার্থী আমার স্নেহাস্পদ কনিষ্ঠ সহকর্মী! আমি তার চেয়ে আট বছর আগে সহকারী অধ্যাপক, পাঁচ বছর আগে নিয়মিত সহযোগী অধ্যাপক হয়েছি, তাতে কি? তালুকদার টাইটেল আছে না আমার?

পিছনের কারণ যাই হোক, অজুহাত হিসেবে এলো 'ক্যাডার' নন-ক্যাডার প্রসঙ্গ। সহকারী অধ্যাপক হিসেবে পিএসসির মাধ্যমে সরাসরি নিয়োগ পেয়েছি, আমার অনেক পরে মেডিকেল অফিসার থেকে পদোন্নতিপ্রাপ্ত কেউ আমার আগে প্রার্থী তালিকায় স্থান পেতে পারেন না। কিন্তু স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তরুন কর্মকর্তা- কাউকে বোঝানো গেল না! যুক্তি শুনতে ও বুঝতে তাদের মহা অনীহা। অবশেষে নালিশ জানালাম জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে। তারা উদ্যোগী হয়ে জানতে চাইলেন আমার পুরো বিষয়টি। এবার আমার যুক্তি বুঝতে রাজী হলো অধিদপ্তর ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।

তারপরও অনেক কিসসা! পরে বলবো।

(পাদটীকা: এই আদেশটি আগে হলে 'ক্যাডার' সংক্রান্ত অজুহাতে পেছানো পদোন্নতির নয় মাস বিলম্ব হয়তো ঘটতো না! মোট বিলম্ব যদিও প্রায় দশ বছরের)

লেখক : 

অধ্যাপক ডা. হাবিবুল্লাহ তালুকদার রাসকিন

অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান,

ক্যান্সার ইপিডেমিওলজি বিভাগ,

জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল, ঢাকা।  

আরও পড়ুন