Advertisement
Doctor TV

বুধবার, ৫ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫


কিসের এতো হতাশা?

Main Image

নিজ ছাত্রের আত্মহত্যা প্রসঙ্গে লিখেছেন- ডা. তাইফুর রহমান, হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ, কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ


ভয়ংকর দুঃখের ঝাপটা আজ চোখেমুখে।

আমার ছাত্র, সমস্ত ঝড়ঝাপটা উৎরে ইন্টার্নিতে এসে আত্মহত্যা করবে!! কিসের এতো হতাশা?
তার বন্ধু, আত্মীয় স্বজন, প্রতিবেশী কেউ টের পেলোনা তার হতাশা?

এই আনষ্টেবল সমাজ, সামনের অনিশ্চিত জীবন তাকে বিতৃষ্ণ করে শেষ করে দিয়েছে।

আমার ছাত্রজীবনের একটা ঘটনা মনে পড়ে।

আমার সহপাঠী বন্ধু দুই দুইবার মাত্রাতিরিক্ত ঘুমের ট্যাবলেট খেলো জীবন থেকে বাঁচতে। দুই বারই তাকে ষ্টমাক ওয়াশ দিয়ে বাঁচানো হলো।

সে ভালো লেখে, ভালো গান গায়, ভালো তবলচি অথচ হতাশার সমুদ্রে হাবুডুবু খাচ্ছে।

সবাই সিদ্ধান্ত দিলো তাইফুরের রুমে দিয়ে দাও। আমার রুমে এসে তো সে অবাক। এতো হৈ-হুল্লোড় করে ডাক্তার হওয়া যাবে? আমি সঙ্গীত ভবনে গান গাইতে যাই, শিল্পকলায় নাটক করতে যাই, এ কেমন কথা? আমার বন্ধুটাও এখন আমার মতো খায়-দায় গান গায়।

সে আগে ছিলো বন্ধু বাবলুর রুমমেট। অসম্ভব ধৈর্য্যশীল, পড়ুয়া ভালো ছাত্র। একদিন জানালা দিয়ে তাকিয়ে তার পড়াকালীন সময়ে ঘাড় ফেরানো দেখার প্রতীক্ষায় আমি ব্যর্থ হলাম।

এক দুপুরে বাবলুর রুমে ঢুকলাম তার এক রুমমেটের সাথে দেখা করতে। কয়েক মিনিট পরই বাবলু ঘাড় ঘুরিয়ে বললো in a nutshell. আমি কথা চালিয়ে গেলাম। বাবলু আবারও ঘাড় ঘুরিয়ে বললো in a nutshell.

আমি বললাম, মানে কি? বাবলু আস্তে করে বললো সংক্ষেপ করুন।

মেডিক্যাল জীবনের সকল পরীক্ষার সম্মিলিত নাম্বারে আমার আর বাবলুর পার্থক্য মাত্র তিন নাম্বার। আল্লাহ ভালো ভাবেই ডাক্তার বানিয়েছেন আমাকে এবং আমার ঐ রুমমেট বন্ধুটিকেও। আমার ঐ বন্ধুটা এখন একটা মেডিক্যাল কলেজের পূর্ণ অধ্যাপক এবং একজন সুখী মানুষ।

আসলে, পৃথিবীতে একেকজন মানুষ একেকরকম।

একেকজনের চাওয়া-পাওয়া, চিন্তা -চেতনা, ভালোলাগা -মন্দলাগা, জীবনের পথচলা একেকরকম।

চিন্তাটা একটু ঘুরিয়ে নিলেই জীবনটা সুন্দর হতে পারে। আমার ভাল লাগায় সাজিয়ে নিতে পারলেই জীবনটা সুন্দর হতে পারে। জীবনতো থেমে থাকে না, থেমে থাকার জিনিসও নয়। জীবন ঠিকই চলে যাবে তার আপন নিয়মে।

আমি ভাবুক মানুষ। টাইলসের দিকে তাকালে ঢেউতোলা নদী দেখি, নদীতে পালতোলা নৌকা দেখি। আমার মেডিক্যাল কলেজের ছোটভাই মুরাদকে টাইলসের দিকে তাকাতে বললে সে খুঁজে বের করে কয়টা ফাটল আছে, ফাটলে কতটুকু ধুলিকণা আঁটকে আছে।

পুরো করোনাকালে আমি ঠিকঠাক মতো মাস্কটাও পড়তে পারিনি। অনেকে আঁড়চোখে তাকিয়েছে, ক্যালাস!! করোনার থাবা থেমেছে সেই কবে। তবুও এখনো কেউ কেউ N95 লাগায়। এখন আমরা আঁড়চোখে তাকাই। কার কি যায় আসে তাতে? সবাই কি একভাবে চিন্তা করতে পারে? এটাই সৃষ্টির বৈচিত্র্য। এখানেই সৃষ্টির সৌন্দর্য!

এটাই মানুষে মানুষে পার্থক্য। কেউ কারো মতো নই। কেউ কারো মতো হওয়ার দরকারও নেই। এটা আল্লাহ প্রদত্ত।

এটা নিয়েই আমরা দু'ধরনের মানুষই সুখী।

মূল কথা হলো জীবনকে সহজভাবে ভাবতে হবে। শুধু ভালো মানুষ হওয়াটা আবশ্যক।

মানুষের জন্য কল্যানকামিতা থাকতে হবে। নিজের মতো নিজের জীবনকে সাজিয়ে সুখী হতে হবে।

তবেই সার্থক এই জীবন।

লেখক :

ডা. তাইফুর রহমান, হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ, কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ। 

আরও পড়ুন