Advertisement
Doctor TV

বৃহস্পতিবার, ৬ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫


টাইপ-১ ডায়াবেটিসের ‘গেম চেঞ্জিং’ ওষুধ বাজারে

Main Image

টাইপ-১ হলো জেনেটিক রোগ। এখন পর্যন্ত এটি প্রতিরোধ করার মতো কোনো উপায় আবিষ্কৃত হয়নি


যুক্তরাষ্ট্রের খাদ্য ও ওষুধ প্রশাসন (এফডিএ) টাইপ-১ ডায়াবেটিস মোকাবিলায় একটি ওষুধ ব্যবহারের অনুমোদন দিয়েছে। এই ডায়াবেটিসের ঝুঁকিতে থাকা মানুষদের ওষুধটি প্রয়োগ করা হলে, তারা স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে দেরিতে আক্রান্ত হতে পারেন। টাইপ-১ ডায়াবেটিস নিয়ে সচেতনতা বাড়াতে কাজ করা মানুষেরা ওষুধটিতে ‘গেম চেঞ্জিং’ উল্লেখ করেছেন। খবর বিবিসির।

বিশ্বজুড়ে প্রায় ৮৭ লাখ মানুষ টাইপ-১ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। যুক্তরাজ্যে ২৯ হাজার শিশুসহ প্রায় ৪ লাখ মানুষ আক্রান্ত। টাইপ-১ ডায়াবেটিসে আক্রান্তদের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা (ইমিউন সিস্টেম, যা সাধারণত ব্যাকটেরিয়া ও ভাইরাসের সঙ্গে লড়াই করে) ভুল করে শরীরের ইনসুলিন উৎপাদনকারী অগ্ন্যাশয়ের (প্যানক্রিয়াস) কোষে আক্রমণ করে বসে।

এফডিএর অনুমোদন পাওয়া ওষুধটির নাম টেপলিজুমাব। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চিকিৎসার ক্ষেত্রে টেপলিজুমাব ওষুধটি ‘নতুন যুগ’র সূচনা করেছে। এটি এ ধরনের ডায়াবেটিসের শুধু লক্ষণকে মোকাবিলার মধ্যে সীমাবদ্ধ না থেকে প্রথমবারের মতো মূল কারণকে মোকাবিলা করতে পারছে। ওষুধটি প্রয়োগ করা হলে এটি মানুষের শরীরের রোগ প্রতিরোধব্যবস্থার আচরণ স্বাভাবিক করে তোলে। এতে এটি তখন ভুল করে অগ্ন্যাশয়ের ইনসুলিন নিঃসরণকারী কোষকে আক্রমণ করে না।

টাইপ-১ ডায়াবেটিস কী
ডায়াবেটিসের প্রধান দুটি ধরন আছে। টাইপ-১ ও টাইপ-২ ডায়াবেটিস। টাইপ-১ ডায়াবেটিস মানুষের শরীরের রোগ প্রতিরোধক্ষমতার ওপর আঘাত করে এবং ইনসুলিন উৎপাদনকারী কোষগুলোকে ধ্বংস করে দেয়। আর টাইপ-২ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ব্যক্তিদের শরীরে যথেষ্ট ইনসুলিনের উৎপাদন হয় না কিংবা শরীরের কোষগুলো ইনসুলিনের প্রতি প্রতিক্রিয়া দেখায় না।

টাইপ-১ ডায়াবেটিসের চেয়ে টাইপ-২ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগী বেশি দেখা যায়। ওজন কমানো, শরীরচর্চাসহ জীবনযাপন পদ্ধতিতে পরিবর্তন আনার মধ্য দিয়ে টাইপ-২ ডায়াবেটিস প্রতিরোধ করা গেলেও টাইপ-১ হলো জেনেটিক রোগ। এখন পর্যন্ত এটি প্রতিরোধ করার মতো কোনো উপায় আবিষ্কৃত হয়নি।

টাইপ-১ ডায়াবেটিস শনাক্ত হতে দেরি হলে শরীরের ওপর মারাত্মক প্রভাব পড়তে পারে। এতে  শরীরের কার্যক্ষমতা নষ্ট হয়ে যেতে পারে এমনকি মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।

কীভাবে কাজ করে টেপলিজুমাব
২০১৯ সালে টাইপ-১ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার উচ্চ ঝুঁকিতে থাকা কিছু মানুষকে পরীক্ষামূলকভাবে টেপলিজুমাব ওষুধ প্রয়োগ করে দেখা গেছে, তারা যে সময় আক্রান্ত হওয়ার শঙ্কায় ছিলেন, তার চেয়ে দুই বছরের কিছু বেশি সময় পর আক্রান্ত হয়েছেন।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ বিলম্বের বিষয়টি খুব তাৎপর্যপূর্ণ। বিশেষ করে কমবয়সীদের জন্য। কারণ ওই বাড়তি হিসেবে পাওয়া সময়টুকুতে তাদের ইনসুলিন নিতে হবে না কিংবা নিয়মিত রক্তের শর্করার মাত্রা পরীক্ষা করাতে হবে না।

গবেষকেরা বলছেন, এ ওষুধ গ্রহণকারী ব্যক্তিদের রক্তের শর্করার মাত্রা তুলনামূলকভাবে আরও বেশি বছর স্বাস্থ্যকর অবস্থায় থাকে। শুধু তা–ই নয়, তারা আরও বেশি দিন রক্তে উচ্চ শর্করাজনিত বিভিন্ন জটিলতায় (কিডনি কিংবা চোখের অসুখসহ বিভিন্ন রোগ) আক্রান্ত হওয়া থেকে মুক্ত থাকতে পারেন।

টাইপ-১ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার কারণে ২০১৪ সালে বেথ বাল্ডউইন নামের এক ব্যক্তি তার ১৩ বছর বয়সী সন্তান পিটারকে হারিয়েছেন। প্রাণঘাতী ডায়াবেটিক কিটোঅ্যাসিওডোসিসে আক্রান্ত হয়ে তিনি মারা যান। টাইপ-১ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত পিটারের রোগ শনাক্ত না হওয়ায় এমন পরিস্থিতি হয়েছিল। বেথের আশা, এ ধরনের ওষুধ জীবনকে পাল্টে দিতে পারে।

খুব পিপাসা লাগা, স্বাভাবিকের চেয়ে বেশিবার প্রস্রাব করা, খুব ক্লান্ত বোধ করা, ওজন কমে যাওয়াসহ টাইপ-১ ডায়াবেটিসের বিভিন্ন লক্ষণ নিয়ে সচেতনতা বাড়াতে কাজ করছে জেডিআরএফ ইউকে। টেপলিজুমাব ওষুধ নিয়ে পরীক্ষা চালানোর জন্য সংস্থাটিও আংশিক অর্থায়ন করেছে।

জেডিআরএফ ইউকের আরেক সদস্য র‌্যাচেল কনোর বলেন, ‘এটি গেম চেঞ্জার। আমি মনে করি এর মধ্য দিয়ে টাইপ-১ ডায়াবেটিসের চিকিৎসার জন্য নতুন যুগের সূচনা হয়েছে।’

আরও পড়ুন