Advertisement
Doctor TV

বুধবার, ৫ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫


চিকিৎসক দম্পতির ভিন্ন রকম লড়াই

Main Image

ডাক্তার নির্যাতন, মানববন্ধন, ফেসবুক পোস্ট, আবার নির্যাতন— এই ফ্লোচার্ট থেকে বের হতে চেয়েছি


আমার স্বামী ডা. মো. আতিকুল হক (৩৯তম বিসিএস) ও আমি (৪২তম) চারঘাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কর্মরত। ১৪ মে সকালে আউটডোর শেষ করে বাসায় ফেরার পথে এক লোক ডা. আতিকুল হককে অনুসরণ করেন এবং রোগী হিসেবে তার চেম্বারে প্রবেশ করেন।

কথাবার্তার এক পর্যায়ে তিনি ৫ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন এবং বলেন, পরিবার নিয়ে সুস্থভাবে থাকতে হলে তাদের মাশোহারা দিয়েই থাকতে হবে। তাকে চাঁদা দিতে অস্বীকার করায় ডা. আতিকুল হকের গায়ে হাত তোলেন এবং চেম্বারে ভাঙচুর করেন।

এই লোক হয়ত জানতেন না চেম্বার সম্পূর্ণরূপে সিসিটিভির আওতাধীন। তিনি চেম্বারে ঢোকার পর থেকে কী কী কর্মকাণ্ড করেছেন, সব রেকর্ডেড। এরপর যখন ঘটনা জানাজানি হলো, এলাকার লোকজন অপরাধীকে মারতে চেয়েছে, বিভিন্নভাবে শাস্তি দিতে চেয়েছে। কিন্তু সরকারি চাকরিজীবী হিসেবে আমরা আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থেকেছি।

আমরা থানায় অভিযোগ করি। আমাদের হাসপাতালের সিনিয়র ডাক্তার, স্টাফ অনেকেই বলেছেন হাসপাতালে কর্মবিরতি দিতে, কালো ব্যাজ ধারণ করতে। কিন্তু আমরা তা চাইনি। এভাবে পাবলিক সেন্টিমেন্ট পাওয়া যেত, বিচার হতো না।

ডাক্তার নির্যাতন, মানববন্ধন, ফেসবুক পোস্ট, মুচলেকা, আবার ডাক্তার নির্যাতন— এই ফ্লোচার্ট থেকে আমরা বের হতে চেয়েছি। আমাদেরকে স্থানীয় অনেকে অনুরোধ করেছে, হুমকিও দিয়েছে যাতে আমরা এটা নিয়ে আর না আগাই। আসামি আমাদের কাছে এসে বলেছে, আমরা যদি না থামি সে আমাদের নামে বিভিন্ন মিথ্যা অভিযোগ করবে। স্থানীয় কিছু প্রভাবশালী এভাবেও হুমকি দিয়েছে, এই আসামির কিছুই হবে না, একদিন পর জামিনে বের হয়ে আসবে। এর জন্য লড়ার অনেক লোক আছে, আমরা বিপদে পড়ব।

আমি জবাব দিয়েছি, আমি সরকারি কর্মচারী, আমাকে আঘাত করা হয়েছে, প্রয়োজনে আমার জন্য সরকার লড়বে। আমরা আমাদের জায়গা থেকে সরিনি। অবশেষে আসামি গ্রেপ্তার হয়েছে।

চারঘাট বাঘার পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম এমপি এ ঘটনায় আমাদের সর্বাত্মক সহযোগিতা করেছেন। ধন্যবাদ চারঘাট উপজেলা প্রশাসনকে। আমরা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ, রাজশাহীর বিভাগীয় পরিচালক (স্বাস্থ্য), সিভিল সার্জন অফিস, রাজশাহী বিএমএ, স্বাচিপের নেতৃবৃন্দকে জানিয়েছি। সবাই আমাদের যার যার জায়গা থেকে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করেছেন।

চারঘাটের ইউএনও, রাজশাহী সার্কেলের এএসপি, চারঘাট উপজেলা চেয়ারম্যান, চারঘাট পৌরসভা মেয়র, ওসি আমাদের সার্বক্ষণিক খোঁজ নিয়েছেন, নিরাপত্তার ব্যবস্থা করেছেন। সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা।

গত দুই সপ্তাহ কীভাবে মাথা ঠাণ্ডা করে এসব সহ্য করেছি, সেটি শুধু আমরাই জানি। এ ঘটনার নেপথ্যে কে বা কারা আছে, তাদের পরিচয় প্রকাশে প্রশাসন আমাদের সহযোগিতা করবে এটাই আশা করছি। কারণ আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস এই লোক একা এর সাথে জড়িত না। এর পেছনে কোনো প্রতিষ্ঠান জড়িত থাকতে পারে, কোনো প্রতিষ্ঠানের লোক জড়িত থাকতে পারে। সেটি তদন্তের মাধ্যমে বের হবে। যেহেতু আসামি পুলিশ হেফাজতে আছে।

আর ঘৃণাজীবীদের জন, ‘এভাবে কারও জনপ্রিয়তা নষ্ট করা যাবে না। যে জনপ্রিয় সে চারঘাট থাকলেও হবে, শূন্যঘাট থাকলেও হবে। এলিসি প্রাসাদে বাস করলেও যে পরিমাণ জনপ্রিয়তা থাকবে, ফার্মগেট ওভারব্রিজের উপরে থালা নিয়ে বসলেও তাই থাকবে।’

লেখক: তাহমীনা নাজনীন এ্যানি
সহকারী সার্জন (৪২তম বিসিএস)
চারঘাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, রাজশাহী

আরও পড়ুন