Ad
Advertisement
Doctor TV

শনিবার, ১৮ অক্টোবর, ২০২৫


পার্কভিউ মেডিকেল কলেজে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবিতে ক্লাস পরীক্ষা বর্জন

Main Image

ছবিঃ সংগৃহীত


সিলেটে অবস্থিত পার্কভিউ মেডিকেল কলেজে ছাত্র রাজনীতি নিয়ে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে। জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের কমিটি ঘোষণার পর থেকে গত চার দিন ধরে সাধারণ শিক্ষার্থীরা ক্লাস পরীক্ষা বর্জন করছেন। শিক্ষার্থীরা দাবি জানিয়েছেন, কলেজে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধসহ তিন দফা দাবি পূরণ না হলে তারা আন্দোলন চালিয়ে যাবেন। ছাত্ররাজনীতিমুক্ত এই বেসরকারি মেডিকেল কলেজে কমিটি ঘোষণা এবং প্রশাসনের কোনো নিষেধাজ্ঞা না দেওয়ায় অভিভাবক, শিক্ষার্থী ও বিদেশি শিক্ষার্থীদের মধ্যে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে।

 

অভিভাবকরা জানিয়েছেন, বেসরকারি এই মেডিকেল কলেজে ছাত্র রাজনীতি না থাকায় তারা সন্তানদের ভর্তি করিয়েছিলেন। এখন যদি ছাত্র রাজনীতি চালু হয়, তা শিক্ষার ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। ভবিষ্যতে তারা সন্তানদের ভর্তি করানোর আগ্রহ হারাতে পারেন। তারা চান না, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্র রাজনীতির মাধ্যমে পুরনো সংস্কৃতি ফিরে আসুক। বেসরকারি মেডিকেল কলেজে কার্যত ছাত্র রাজনীতি নেই। তাই ছাত্রদল কমিটি দিয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের আবেগ ও সম্মানের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখানো হয়েছে।

 

শিক্ষার্থীরা বলছেন, পার্কভিউ মেডিকেল কলেজ ছাত্র রাজনীতিমুক্ত ক্যাম্পাস। এখানে কোনো ছাত্র রাজনীতি সাধারণ শিক্ষার্থীরা মেনে নেবে না। যারা এখানে ছাত্র সংগঠনের কমিটি এনেছেন, তাদের বিরুদ্ধে প্রশাসনকে অবশ্যই যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে। আর যদি প্রশাসন যথাযথ ব্যবস্থা না নেয়, তাহলে সাধারণ শিক্ষার্থীরা কলেজে ছাত্র রাজনীতির বিরুদ্ধে দূর্বার প্রতিরোধ গড়ে তুলবে। তারা বলেন, যে কারো রাজনৈতিক মতাদর্শ থাকতে পারে, সেটা কলেজের বাইরে চর্চা করতে পারে। সেটা তার গণতান্ত্রিক অধিকার। কিন্তু রাজনীতিমুক্ত ক্যাম্পাসে কলেজে কোনো কার্যক্রম সাধারণ শিক্ষার্থীরা মেনে নেবে না।

 

জানা গেছে, দূর্গা পূজার ছুটি শুরুর দিন ২৫ সেপ্টেম্বর শেখ রাহাতুল ইসলামকে সভাপতি, মোঃ ইয়াছিন ইবনে মাহবুবকে সাধারণ সম্পাদক, মোঃ আশিক সামিকে সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও জুম্মান সারওয়ারকে সাংগঠনিক সম্পাদক করে সিলেটের পার্কভিউ মেডিকেল কলেজ ছাত্রদলের আংশিক কমিটি ঘোষণা করেন সংগঠনের কেন্দ্রীয় সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব ও সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন নাছির। ৩০ দিনের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের জন্যও নির্দেশনা দেওয়া হয়।


পূজার ছুটি শেষে ১২ অক্টোবর কলেজ খোলার পর বিষয়টি প্রকাশ্যে আসে। ছাত্র সংগঠনের কমিটি ঘোষণায় শিক্ষার্থীদের মধ্যে উদ্বেগ তৈরি হয়। সাধারণ শিক্ষার্থীরা কলেজের প্রিন্সিপাল অধ্যাপক ডা. দিলীপ কুমার ভৌমিক ও ভাইস প্রিন্সিপাল অধ্যাপক ডা. মো. শাহাবুদ্দিনের সঙ্গে দেখা করে রাজনীতিমুক্ত ক্যাম্পাসে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ করার প্রজ্ঞাপন জারি, ছাত্রদলের কমিটির নেতাদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ, কলেজের প্রধান ফটকসহ বিভিন্ন স্থানে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ মর্মে বিলবোর্ড স্থাপন এবং ভর্তির সময় শিক্ষার্থীদের কাছে স্পষ্টভাবে তা জানাতে ও প্রসপেক্টাসে উল্লেখ করার দাবি জানায়।

 

দাবি পূরণের জন্য দুই দিন সময় চান প্রিন্সিপাল অধ্যাপক ডা. দিলীপ কুমার ভৌমিক। দুই দিন পর ১৪ অক্টোবর শিক্ষার্থীরা পুনরায় প্রিন্সিপালের সঙ্গে দেখা করে অগ্রগতি জানতে চান। এসময় প্রিন্সিপাল শিক্ষার্থীদের জানান, একটি নোটিশ জারি করা হয়েছে। নোটিশে বলা হয়, কলেজ ও হোস্টেলে কোনো রাজনৈতিক কার্যক্রম পরিচালনা করা যাবে না। শিক্ষার্থীদের দাবি পূরণ না হওয়ায় সাধারণ শিক্ষার্থীরা সোমবার (১৪ অক্টোবর) থেকে ক্লাস পরীক্ষা বর্জনের ঘোষণা দেন।

 

কলেজ সূত্র জানায়, ছাত্র রাজনীতি চালু করায় কলেজ ছাত্রদলের চার নেতাকে মেডিসিন ক্লাবের সদস্য পদ, সন্ধানী ও অন্যান্য সামাজিক সংস্থান থেকে বহিস্কার করেছে সাধারণ শিক্ষার্থীরা। এছাড়া সকল ক্লাব ও সামাজিকভাবে বয়কটের ঘোষণা দিয়েছে শিক্ষার্থীরা।


শিক্ষার্থীরা জানান, পার্কভিউ মেডিকেল কলেজের সকল সাধারণ শিক্ষার্থী ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ বিষয়ে কলেজ প্রশাসনের উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ না দেখে পূর্ব ঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী সকল ব্যাচের শিক্ষার্থীরা ক্লাস পরীক্ষা বর্জন অব্যাহত রাখছেন। যতদিন দাবি পূরণ হবে না, ততদিন কর্মসূচি চলবে।


এ বিষয়ে কলেজের প্রিন্সিপাল অধ্যাপক ডা. দিলীপ কুমার ভৌমিক গণমাধ্যমকে বলেন, “শিক্ষার্থীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে একটি কমিটি করে দেয়া হয়েছে। কমিটি প্রতিবেদন জমা দিলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। যারা ছাত্র রাজনীতি চালু করেছে, তাদের বিরুদ্ধে কমিটির সুপারিশ মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

আরও পড়ুন