Ad
Advertisement
Doctor TV

শনিবার, ৪ অক্টোবর, ২০২৫


চিকিৎসকদের হাতের লেখা ঠিক করতে নির্দেশ আদালতের

Main Image

ছবিঃ সংগৃহীত


ভারতের পাঞ্জাব ও হরিয়ানা হাইকোর্ট এক রায়ে মন্তব্য করেছে, রোগীর জন্য স্পষ্ট ও পাঠযোগ্য প্রেসক্রিপশন পাওয়া একটি মৌলিক অধিকার। আদালতের মতে, চিকিৎসকের অস্পষ্ট হাতে লেখা প্রেসক্রিপশন শুধু বিভ্রান্তিই নয়, বরং তা রোগীর জীবন ও মৃত্যুর মধ্যকার পার্থক্য গড়ে তুলতে পারে।

 

এই মন্তব্য এসেছে ধর্ষণ, প্রতারণা ও জালিয়াতির একটি মামলার শুনানির সময়। মামলায় অভিযুক্ত ব্যক্তির জামিন শুনানির সময় আদালতে ভুক্তভোগী নারীর চিকিৎসা-সংক্রান্ত প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হয়। বিচারপতি জসগুরপ্রীত সিং পুরি বলেন, তিনি রিপোর্টটি একবার পড়ার চেষ্টা করে পুরোপুরি হতাশ হয়েছেন। তাঁর ভাষায়, “একটি শব্দ বা অক্ষরও স্পষ্টভাবে বোঝা যায়নি।” ওই রিপোর্ট লিখেছিলেন একজন সরকারি চিকিৎসক।

এই পর্যবেক্ষণের ভিত্তিতে আদালত নির্দেশ দেয়, আগামী দুই বছরের মধ্যে ভারতজুড়ে ডিজিটাল প্রেসক্রিপশন বাধ্যতামূলক করতে হবে। সেই সময় পর্যন্ত সব চিকিৎসককে প্রেসক্রিপশন এবং রোগ-নির্ণয়ের নোট বড় অক্ষরে ও স্পষ্টভাবে লেখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি, মেডিকেল শিক্ষায় হাতের লেখা উন্নত করার প্রশিক্ষণও অন্তর্ভুক্ত করতে বলা হয়েছে।

 

বিচারপতির ভাষায়, একটি অস্পষ্ট প্রেসক্রিপশন একজন রোগীর জন্য ‘নির্বাক মৃত্যুদণ্ড’ হতে পারে। তাই এটি কেবল একজন রোগীর নয়, সার্বজনিক স্বাস্থ্যসুরক্ষার বিষয়ও বটে।

ভারতীয় মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (আইএমএ) সভাপতি দিলীপ ভানুশালী বিবিসিকে বলেন, বড় শহরগুলোতে অনেক চিকিৎসক ইতিমধ্যেই কম্পিউটারাইজড প্রেসক্রিপশন ব্যবহার করছেন। তবে ছোট শহর ও গ্রামে এখনও হাতে লেখা প্রেসক্রিপশনই ভরসা। তাঁর মতে, “যে চিকিৎসক দিনে ৭ জন রোগী দেখেন, তাঁর পক্ষে স্পষ্টভাবে লেখা সম্ভব। কিন্তু যিনি দিনে ৭০ জন দেখেন, তাঁর জন্য তা কঠিন।”

 

এদিকে আদালতের নির্দেশনার পর চণ্ডীগড়ের সরকারি হাসপাতাল জিএমসিএইচ-৩২ চিকিৎসকদের স্পষ্ট হাতে লেখার নির্দেশনা দিয়েছে। একই পদক্ষেপ নিয়েছে হরিয়ানার স্বাস্থ্য বিভাগও।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভারতের মতো দেশে যেখানে অনেক ফার্মাসিস্ট পেশাগত প্রশিক্ষণ ছাড়াই কাজ করছেন, সেখানে অস্পষ্ট প্রেসক্রিপশন বড় ধরনের ভুল ওষুধ প্রয়োগ এবং ভুল চিকিৎসার ঝুঁকি তৈরি করতে পারে। ফলে প্রেসক্রিপশন যতটা চিকিৎসকের লিখিত পরামর্শ, ততটাই তা রোগীর জানার ও বোঝার অধিকার।

 

এই রায় চিকিৎসাসেবায় মানবিকতা, স্বচ্ছতা ও দায়বদ্ধতা নিশ্চিত করার এক সাহসী পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে। কারণ রোগীর প্রতি দায়িত্ব মানে কেবল ওষুধ দেওয়া নয়, তাকে বোঝার সুযোগ দেওয়াও চিকিৎসকের কর্তব্য। আদালত স্পষ্ট করে দিয়েছে—চিকিৎসকের লেখা রোগীর কাছে বোধগম্য না হলে, সেটি আর চিকিৎসা নয়

আরও পড়ুন