স্বাস্থ্য সহকারীরা দীর্ঘদিন ধরে নিয়োগবিধি সংশোধন, বেতন বৈষম্য নিরসন এবং টেকনিক্যাল পদমর্যাদা প্রদানের দাবিতে আন্দোলন করে আসছেন। এবার ছয় দফা দাবি বাস্তবায়নের জন্য তারা অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতির ঘোষণা দিয়েছেন। ফলে আগামী ১ অক্টোবর থেকে সারা দেশের প্রায় ১ লাখ ২০ হাজার আউটরিচ ইপিআই টিকাদান কেন্দ্র এবং ১২ অক্টোবর শুরু হতে যাওয়া জাতীয় টাইফয়েড টিকাদান ক্যাম্পেইনসহ অন্যান্য নিয়মিত রিপোর্টিং কার্যক্রম অনিশ্চয়তার মুখে পড়তে যাচ্ছে।
আন্দোলনকারীরা জানিয়েছেন, দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত তারা কর্মস্থলে ফিরবেন না। এ বিষয়ে সংগঠনের নেতারা ইতোমধ্যেই রাজধানীর মহাখালী স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের কাছে স্মারকলিপি জমা দিয়েছেন।
সংগঠনের অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরে তৃণমূল পর্যায়ে শিশুদের প্রাণঘাতী ১০টি রোগ থেকে সুরক্ষা দিতে কাজ করলেও স্বাস্থ্য সহকারীরা এখনও টেকনিক্যাল পদমর্যাদা থেকে বঞ্চিত। এতে তারা সরকারি অন্যান্য কর্মচারীর তুলনায় বেতন বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন। স্মারকলিপিতে উল্লেখ করা হয়, ১৯৯৮ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী, ২০১৮ সালে স্বাস্থ্য সচিব ও মহাপরিচালক এবং ২০২০ সালে স্বাস্থ্যমন্ত্রী তাদের দাবি মেনে নেওয়ার ঘোষণা ও প্রতিশ্রুতি দিলেও আজও তা বাস্তবায়িত হয়নি।
বাংলাদেশ হেলথ অ্যাসিস্ট্যান্ট অ্যাসোসিয়েশন বলছে, বছরের পর বছর শুধু আশ্বাস শুনে আসার পর এবার তারা আন্দোলনে যেতে বাধ্য হয়েছেন। সংগঠনের কেন্দ্রীয় দাবি আদায় পরিষদের সদস্য সচিব মো. ফজলুল হক চৌধুরী বলেন, “আমরা সবসময়ই শুধু আশ্বাস পেয়েছি, কিন্তু বাস্তবায়ন হয়নি। তাই ছয় দফা দাবি না মানা পর্যন্ত আমাদের কর্মবিরতি চলবে। আমরা আশা করি, অন্তর্বর্তী সরকার ২০ হাজার স্বাস্থ্য সহকারীর ন্যায্য দাবিগুলো পূরণ করবে।”
গত ২৬ সেপ্টেম্বর কেন্দ্রীয় দাবি বাস্তবায়ন সমন্বয় পরিষদের সভায় ৬৪ জেলার নেতাদের মতামতের ভিত্তিতে কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। এর মধ্যে রয়েছে—২৮ সেপ্টেম্বর মহাপরিচালকের কাছে স্মারকলিপি প্রদান, ২৯ ও ৩০ সেপ্টেম্বর জেলা সিভিল সার্জন ও উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তার কাছে স্মারকলিপি প্রদান এবং ১ অক্টোবর থেকে ইপিআই কার্যক্রম, টাইফয়েড টিকাদান ক্যাম্পেইন ও অন্যান্য কার্যক্রম বর্জন করে অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতি পালন।
তাদের ছয় দফা দাবি হলো নিয়োগবিধি সংশোধন, শিক্ষাগত যোগ্যতার মানদণ্ডে স্নাতক সংযোজন, ১৪তম গ্রেড প্রদান, ইন-সার্ভিস ডিপ্লোমা প্রশিক্ষণের মাধ্যমে টেকনিক্যাল পদমর্যাদা দেওয়া, বেতন স্কেল উন্নীত করে ১১তম গ্রেডে উন্নীত করা এবং অন্যান্য ন্যায্য দাবি বাস্তবায়ন।
স্বাস্থ্য সহকারীরা স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, শুধু আশ্বাস নয় দাবি বাস্তবায়নই তাদের আন্দোলন প্রত্যাহারের একমাত্র শর্ত।
আরও পড়ুন