পিসিওএস (পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোম) একধরনের হরমোনজনিত জটিলতা। বিশ্বজুড়ে প্রায় ১৫ লাখ নারী এ সমস্যায় ভুগছেন। কিশোরী থেকে শুরু করে মেনোপজের কাছাকাছি বয়সী নারীরাও এর শিকার হন। বাংলাদেশে আনুমানিক ৮–১৩ শতাংশ নারী এ রোগে আক্রান্ত। প্রতি বছর সেপ্টেম্বর মাসে পালিত হয় পিসিওএস সচেতনতা মাস।
এই উপলক্ষে ১৬ সেপ্টেম্বর রাজধানীতে প্রথম আলো কার্যালয়ে এক মুক্ত আলোচনার আয়োজন করে অবস্টেট্রিক্যাল অ্যান্ড গাইনোকোলজিক্যাল সোসাইটি অব বাংলাদেশ (ওজিএসবি) ও প্রথম আলো। অনুষ্ঠানের বৈজ্ঞানিক সহযোগী ছিল ইনসেপ্টা ফার্মাসিউটিক্যালস।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, পিসিওএস রোগ নির্ণয়ে বিশ্বব্যাপী দীর্ঘ সময় লেগে যায়। কারণ, এর উপসর্গ একেক নারীর ক্ষেত্রে একেক রকম হয়ে থাকে। কারও অনিয়মিত মাসিক, কারও গর্ভধারণে অসুবিধা, আবার কারও ক্ষেত্রে হরমোনাল বা মেটাবলিক সিনড্রোম দেখা দেয়। মেনোপজের কাছাকাছি বয়সে এ সমস্যার সঙ্গে যুক্ত হয় উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস এমনকি জরায়ুর ক্যানসারের ঝুঁকি।
তাঁরা জানান, পিসিওএস কোনো একক রোগ নয়, বরং এটি একটি সিনড্রোম। প্রধান লক্ষণ তিনটি হলো—শরীরে পুরুষ হরমোন বেড়ে যাওয়ার কারণে অবাঞ্ছিত লোম, অনিয়মিত মাসিক ও ডিম্বাশয়ে সিস্ট। এই তিনটির মধ্যে দুটি থাকলেই পিসিওএস হিসেবে চিহ্নিত করা যায়। অনেকের ওজন বেড়ে যায়, আবার প্রায় ২০ শতাংশ ক্ষেত্রে ‘লিন পিসিওএস’ দেখা যায়, যেখানে ওজন বাড়ে না। জিনগত কারণও এ রোগের সঙ্গে সম্পর্কিত।
চিকিৎসকেরা বলেন, ৫ থেকে ১০ শতাংশ ওজন কমলে মাসিক নিয়মিত হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে। প্রয়োজনে ওরাল কন্ট্রাসেপ্টিভ পিল বা সিপ্রোটেরন অ্যাসিটেট ব্যবহার করা হয়। এছাড়া স্পাইরনোল্যাকটন ব্যবহার করা হলেও এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার কারণে রোগীদের সতর্ক থাকতে হয়।
বিশেষজ্ঞদের মতে, কিশোরীদের নিয়মিত শরীরচর্চা করা উচিত এবং গর্ভাবস্থায়ও ব্যায়াম উপকারী। মাসিকের কাছাকাছি বয়সে কারও চার মাসের বেশি সময় ধরে মাসিক বন্ধ থাকলে প্রোজেস্টেরন দিয়ে মাসিক করানো জরুরি, নইলে জরায়ুর ক্যানসারের ঝুঁকি বেড়ে যায়। এ সময় টাইপ-২ ডায়াবেটিস ও হৃদ্রোগের ঝুঁকিও বেড়ে যায়।
তাঁরা জোর দিয়ে বলেন, সচেতনতা ও সঠিক সময়ে চিকিৎসা নিলেই পিসিওএস নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব।
আরও পড়ুন