ছবিঃ সংগৃহীত
জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের উন্নয়নে এক কোটি টাকা অনুদান দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ঢাকা-১৭ আসনের প্রার্থী ডা. এস এম খালিদুজ্জামান। তিনি বলেছেন, ক্যান্সার চিকিৎসার সবচেয়ে বড় সরকারি এই প্রতিষ্ঠান আজ বিভিন্ন দুর্নীতি, দালালচক্র এবং রাজনৈতিক প্রভাবের কারণে ভেঙে পড়েছে। রোগীরা সঠিক সময়ে সেবা পাচ্ছে না, ফলে সাধারণ মানুষের জীবন ঝুঁকির মধ্যে পড়ে।
শনিবার (১৮ আগস্ট) বেলা সাড়ে ১১টায় জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের পরীক্ষা-নিরীক্ষার (সিটি স্ক্যান, রেডিওথেরাপি) যন্ত্র বন্ধ থাকা এবং প্রশাসনের বিভিন্ন দুর্নীতির বিরুদ্ধে আয়োজিত মানববন্ধনে তিনি এই মন্তব্য করেন।
ডা. এস এম খালিদুজ্জামান বলেন, দেশের ৬৪ জেলা ও ৪৯৫ থানার মানুষ ক্যান্সার চিকিৎসার জন্য ঢাকার এই জাতীয় ক্যান্সার ইনস্টিটিউটে আসে। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে প্রতিষ্ঠানটি নিজেই দুর্নীতিতে আক্রান্ত। সাতটি রেডিওথেরাপি মেশিনের মধ্যে মাত্র দুটি সচল, বাকি পাঁচটি অকেজো। তিনি প্রশ্ন তুলেছেন, রোগীরা কোথা থেকে চিকিৎসা পাবেন?
তিনি অভিযোগ করেন, নিয়োগ থেকে শুরু করে প্রশাসনিক কর্মকাণ্ড—সবখানেই দুর্নীতি ও রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তার করা হয়েছে। ১৭ বছরের শাসনামলে একজনের জীবনকাহিনি আরেকজন লিখে প্রমোশন পেয়েছে। ডাক্তার, নার্স, টেকনোলজিস্ট এবং প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের পদোন্নতি ও নিয়োগে বৈষম্য করা হয়েছে। একটি বিশেষ জেলা থেকে লোক এনে ক্যান্সার হাসপাতালে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। সংস্কার ও সংশোধনের নামে কিছু পরিবর্তন হলেও প্রকৃত প্রশাসনিক দুর্নীতি দূর হয়নি।
ঢাকা-১৭ আসনের মনোনয়নপ্রত্যাশী এই জামায়াত নেতা বলেন, কর্মচারীদের কোয়ার্টারেও বহিরাগতরা দখল করে আছে। সিরিয়াল বাণিজ্য দালালচক্র নিয়ন্ত্রণ করছে। এমআরআই, সিটিস্ক্যান ও ন্যানোগ্রাম মেশিন নেই। রক্ত ব্যাংক এখনও ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে চলছে, যা অবশ্যই কম্পিউটারাইজড করা প্রয়োজন। মানুষের স্বাস্থ্যসেবা এভাবে জিম্মি হতে পারে না।
ডা. খালিদুজ্জামান বলেন, আমাদের আমির ডা. শফিকুর রহমান চিকিৎসক হিসেবেই ঘোষণা দিয়েছেন আমরা দুর্নীতি করবো না, দুর্নীতি সহ্য করবো না, বরং দুর্নীতি প্রতিহত করব ইনশাআল্লাহ। তার নেতৃত্বে আমরা শিশু হাসপাতালে অনিয়মে নিয়োগপ্রাপ্ত ৬৫ জন চিকিৎসকের নিয়োগ বাতিল করেছি। ভবিষ্যতে সরকার গঠন করলে স্বাস্থ্য খাত থেকে সকল প্রকার দুর্নীতি দূর করা হবে।
তিনি আরও বলেন, এই হাসপাতালের দুর্নীতির একটি ক্ষুদ্র অংশই তিনি তুলে ধরেছেন। প্রকৃতপক্ষে দেশের স্বাস্থ্য খাত ‘ক্যান্সারে’ আক্রান্ত। আমরা চাই রোগীরা সেবা পান এবং যারা আশা-ভরসা নিয়ে আসে তারা আর হতাশ না হন। সেই লক্ষ্যেই আজকের এই ঘোষণা।
প্রতিশ্রুতি দিয়ে জামায়াত নেতা বলেন, ক্ষমতায় গেলে দক্ষ চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মী নিয়োগ, আধুনিক যন্ত্রপাতি সংযোজন, ব্লাড ব্যাংক ডিজিটালাইজেশন এবং পূর্ণ স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা হবে। পাশাপাশি সরকারি কর্মকর্তা ও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদের দেশেই চিকিৎসা গ্রহণ বাধ্যতামূলক করা হবে।
তিনি যোগ করেন, “আমি ব্যক্তিগতভাবে এক কোটি টাকা অনুদান ঘোষণা করছি। এটা কেবল শুরু। আমরা চাই ক্যান্সার হাসপাতালকে সত্যিকারের জনগণের জন্য আধুনিক ও দুর্নীতিমুক্ত একটি চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানে রূপান্তরিত করতে।”
আরও পড়ুন