Ad
Advertisement
Doctor TV

রবিবার, ৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৫


ঝুঁকিপূর্ণদের জন্য ইনফ্লুয়েঞ্জা টিকা অন্তর্ভুক্তির দাবি বিশেষজ্ঞদের

Main Image

ছবিঃ সংগৃহীত


বিশেষজ্ঞরা বাংলাদেশে ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর চিকিৎসায় ইনফ্লুয়েঞ্জা টিকাকে জাতীয় ক্লিনিক্যাল নির্দেশিকা ও স্বাস্থ্য কৌশলের অংশ হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করার আহ্বান জানিয়েছেন। সম্প্রতি আইইডিসিআর এবং আইসিডিডিআর,বি যৌথভাবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সিডিসি শাখা ও যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশনের সহায়তায় “বাংলাদেশে অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর চিকিৎসায় ইনফ্লুয়েঞ্জা টিকার ভূমিকা: ভবিষ্যৎ পথনির্দেশনা” শীর্ষক একটি কর্মশালার আয়োজন করে। দুই দিনব্যাপী এই কর্মশালাটি অনুষ্ঠিত হয় ১ ও ৪ সেপ্টেম্বর।

 

কর্মশালায় বিশেষজ্ঞরা জানান, মৌসুমি ইনফ্লুয়েঞ্জা বিশ্বব্যাপী প্রতিবছর প্রায় ৫০ লাখ মানুষের গুরুতর অসুস্থতার কারণ এবং প্রায় ৬ লাখ ৫০ হাজার মৃত্যুর জন্য দায়ী। বাংলাদেশে পরিচালিত সাম্প্রতিক এক জরিপে দেখা গেছে, ২০২৫ সালের জুন মাসে দেশের ১৯টি হাসপাতালে জ্বর ও কাশির উপসর্গ নিয়ে ভর্তি হওয়া রোগীদের মধ্যে প্রায় ৫৯ শতাংশ ইনফ্লুয়েঞ্জায় আক্রান্ত ছিলেন, যা পূর্ববর্তী সময়ের তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি। বাংলাদেশে সাধারণত এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময়কে ইনফ্লুয়েঞ্জার মৌসুম হিসেবে ধরা হয়।
 

বিশেষজ্ঞদের মতে, ৬০ বছরের বেশি বয়সী প্রবীণ, পাঁচ বছরের নিচে শিশু, গর্ভবতী নারী, দীর্ঘমেয়াদি অসুস্থতায় ভোগা রোগী যেমন ডায়াবেটিস, হৃদরোগ, কিডনি কিংবা শ্বাসতন্ত্রের সমস্যায় আক্রান্ত ব্যক্তি এবং স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারীদের ইনফ্লুয়েঞ্জা সংক্রমণের ঝুঁকি বেশি। তাই এই জনগোষ্ঠীর জন্য ফেব্রুয়ারি-মার্চ মাসে টিকা নেওয়া অত্যন্ত জরুরি, যাতে মৌসুমের শুরুতেই সুরক্ষা নিশ্চিত করা যায়।

 

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এই ঝুঁকিপূর্ণ গোষ্ঠীর জন্য নিয়মিত ইনফ্লুয়েঞ্জা টিকাদানকে সবচেয়ে কার্যকর প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা হিসেবে বিবেচনা করে। কিন্তু বাংলাদেশে এই টিকার গ্রহণযোগ্যতা এখনও অনেক কম। এর প্রধান কারণ সচেতনতার অভাব, নীতিগত নির্দেশনার ঘাটতি এবং বাস্তব প্রক্রিয়াগত কিছু চ্যালেঞ্জ।
 

কর্মশালার প্রথম দিনে অভ্যন্তরীণ মেডিসিন, শিশুস্বাস্থ্য, প্রসূতি ও স্ত্রীরোগ, হৃদরোগ, কিডনি রোগ এবং শ্বাসতন্ত্রবিষয়ক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা ইনফ্লুয়েঞ্জা টিকাদানকে নিয়মিত চিকিৎসা সেবার অংশ করার উপায় নিয়ে আলোচনা করেন। দ্বিতীয় দিনে আইইডিসিআর-এর পরিচালক অধ্যাপক ডা. তাহমিনা শিরিন ২০০৭ সাল থেকে চলমান হাসপাতালভিত্তিক ইনফ্লুয়েঞ্জা পর্যবেক্ষণের ফলাফল উপস্থাপন করেন। তিনি বলেন, জুন ও জুলাই মাসে সংক্রমণের হার সবচেয়ে বেশি থাকে, তাই সময়মতো টিকা গ্রহণ করলে ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর মধ্যে অসুস্থতা এবং মৃত্যু উল্লেখযোগ্যভাবে কমানো সম্ভব। তার মতে, এই টিকাদান কার্যক্রম অর্থনৈতিকভাবেও কার্যকর এবং খরচ সাশ্রয়ী।

 

বিশেষজ্ঞরা ইনফ্লুয়েঞ্জা টিকা গ্রহণে যে বাধাগুলোর কথা তুলে ধরেন, তার মধ্যে রয়েছে টিকার উচ্চমূল্য ও অপ্রাপ্যতা, পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার ভয়, টিকাদান নিয়ে সচেতনতার ঘাটতি, কোল্ড চেইন ও সংরক্ষণের সীমাবদ্ধতা এবং জাতীয় বা প্রাতিষ্ঠানিক নীতিমালার অভাব। এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় তারা বেশ কিছু সুপারিশও দেন, যার মধ্যে রয়েছে গবেষণার মাধ্যমে জাতীয় পর্যায়ের তথ্য প্রকাশ, টিকা সহজলভ্য ও সাশ্রয়ী করা, গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সচেতনতা বৃদ্ধিমূলক প্রচার এবং চিকিৎসকদের মাধ্যমে বার্তা প্রচারের উদ্যোগ।
 

আইসিডিডিআর,বি-এর গবেষক ডা. মো. জাকিউল হাসান জানান, স্বাস্থ্যসেবা কর্মীরা সাধারণ মানুষের তুলনায় চার গুণ বেশি ইনফ্লুয়েঞ্জা সংক্রমণের ঝুঁকিতে থাকলেও তাদের মধ্যে টিকা গ্রহণের হার এখনও খুব কম, যা উদ্বেগজনক। প্যানেল আলোচনায় অংশগ্রহণকারী বিশেষজ্ঞরা, যেমন অধ্যাপক ডা. তাহমিনা শিরিন, ডা. ফেরদৌসী কাদরী, ডা. কে. জামান, অধ্যাপক ডা. চৌধুরী আলী কাওসার এবং অধ্যাপক ডা. ফারহাদ হোসেন, সবাই জাতীয় ক্লিনিক্যাল গাইডলাইনে উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর জন্য ইনফ্লুয়েঞ্জা টিকাদান অন্তর্ভুক্তির ওপর জোর দেন। তারা বলেন, টিকাদান কার্যক্রমকে টেকসই করতে হলে এই টিকা সর্বসাধারণের জন্য বিনামূল্যে নিশ্চিত করা দরকার। পাশাপাশি জনগণ এবং চিকিৎসকদের মধ্যে সচেতনতা বাড়িয়ে টিকা গ্রহণের হার বাড়ানোও জরুরি।

 

অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের জনস্বাস্থ্য উইংয়ের যুগ্ম সচিব ডা. মো. শিব্বির আহমেদ ওসমানী এবং ইউএস সিডিসি’র কান্ট্রি ডিরেক্টর অধ্যাপক ডা. দিমিত্রি প্রিবিলস্কি। ডা. ওসমানী কর্মশালায় উত্থাপিত সুপারিশগুলো মন্ত্রণালয়ে উপস্থাপনের আশ্বাস দেন এবং জনস্বাস্থ্য কর্মসূচির মাধ্যমে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের প্রতিশ্রুতি দেন। অপরদিকে, অধ্যাপক প্রিবিলস্কি বলেন, ইনফ্লুয়েঞ্জা মোকাবিলায় প্রাদুর্ভাব শনাক্তকরণ, সময়মতো সতর্কবার্তা এবং সরকারি-বেসরকারি খাতের সমন্বয়ই সফল টিকাদান কার্যক্রমের মূল চাবিকাঠি।

আরও পড়ুন