Ad
Advertisement
Doctor TV

সোমবার, ১ সেপ্টেম্বর, ২০২৫


বিএমইউ সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালে দেশের প্রথম রোবটিক রিহ্যাবিলিটেশন সেন্টার উদ্বোধন

Main Image

ছবিঃ সংগৃহীত


বাংলাদেশ মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএমইউ) সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালে দীর্ঘমেয়াদি স্নায়ুবিক জটিলতা ও পক্ষাঘাতগ্রস্ত রোগীদের উন্নত চিকিৎসা প্রদানের লক্ষ্যে দেশের প্রথম আধুনিক রোবটিক রিহ্যাবিলিটেশন সেন্টার উদ্বোধন করা হয়েছে। এর মাধ্যমে দেশের প্রতিবন্ধী ও পক্ষাঘাতগ্রস্ত রোগীদের জন্য চিকিৎসাসেবায় এক নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচিত হলো।

 

রবিবার, ৩১ আগস্ট ২০২৫ তারিখে সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালের অডিটোরিয়ামে (লেকচার হল-কক্ষ নং-৫০৭) এ উপলক্ষে এক বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের মাননীয় উপদেষ্টা জনাব নূরজাহান বেগম। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মাননীয় প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী (প্রতিমন্ত্রী পদমর্যাদা) অধ্যাপক ডা. মোঃ সায়েদুর রহমান, বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত মিঃ ইয়াও ওয়েন (Mr. Yao Wen) এবং স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সেবা বিভাগের সচিব জনাব মোঃ সাইদুর রহমান। অনুষ্ঠানটির সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক ডা. মোঃ শাহিনুল আলম।

 

অনুষ্ঠানে রোবটিক রিহ্যাবিলিটেশন সেন্টারের কার্যক্রম ও সম্ভাবনা নিয়ে বিশদ উপস্থাপনা করেন ফিজিক্যাল মেডিসিন এন্ড রিহ্যাবিলিটেশন বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মোঃ আব্দুস শাকুর। সঞ্চালনায় ছিলেন বিএমইউর রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ডা. মোঃ নজরুল ইসলাম ও সহকারী প্রক্টর ডা. রিফাত রহমান। এতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. মোঃ আবু জাফর, বিএমইউর প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর (প্রশাসন) ও রিহ্যাবিলিটেশন সেন্টার ইমপ্লিমেন্টেশন কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ডা. মোঃ আবুল কালাম আজাদ, প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর (গবেষণা ও উন্নয়ন) অধ্যাপক ডা. মোঃ মুজিবুর রহমান হাওলাদার, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. নাহরীন আখতারসহ অনেকে উপস্থিত ছিলেন।

 

অনুষ্ঠানের শুরুতে মাননীয় স্বাস্থ্য উপদেষ্টা হাসপাতালের বেইজমেন্টে স্থাপিত রোবটিক রিহ্যাবিলিটেশন সেন্টার উদ্বোধন ও পরিদর্শন করেন। পরে লেকচার হলে আয়োজিত অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, “বাংলাদেশ মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থাপিত এই রোবটিক রিহ্যাবিলিটেশন সেন্টারকে অবশ্যই টেকসই করতে হবে। একই সঙ্গে এটিকে বিকেন্দ্রীকরণের মাধ্যমে আরো কয়েকটি জেলায় বিস্তৃত করার উদ্যোগ নিতে হবে। বাংলাদেশ মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় একটি বিশাল প্রতিষ্ঠান, এখান থেকে দেশের সর্বত্র উন্নত চিকিৎসা পৌঁছে যাবে।”

 

তিনি আরও যোগ করেন, “রোবটিক রিহ্যাবিলিটেশন সেন্টার প্রতিষ্ঠায় চীনের অবদান অপরিসীম। দায়িত্ব নেওয়ার পর হাসপাতাল ভিজিটে দেখেছি অনেক রোগীর হাত-পা অকেজো হয়ে আছে। তখনই উন্নত চিকিৎসার কথা ভেবেছিলাম। আমরা চীনকে ১০–১৫টি রোবট চেয়েছিলাম, তারা ৫৭টি দিয়েছে। শুধু তাই নয়, তারা আমাদের ২৯ জনকে প্রশিক্ষণও দিয়েছে। এই সেন্টারকে অবশ্যই সাস্টেইনেবল করতে হবে।” এসময় তিনি চীনের প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।

 

চীনের রাষ্ট্রদূত মিঃ ইয়াও ওয়েন তার বক্তব্যে বলেন, “বাংলাদেশের উন্নয়নযাত্রায় চীন সবসময় পাশে থাকবে। স্বাস্থ্যখাতের উন্নয়নে আন্তর্জাতিকমানের যন্ত্রপাতি সরবরাহ করা হয়েছে। ভবিষ্যতেও এই সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে। সম্প্রতি বার্ন ইনস্টিটিউট ও বিমান দুর্ঘটনায় আহতদের চিকিৎসায়ও দ্রুত সহায়তা দেওয়া হয়েছে।”

অন্যদিকে, মাননীয় প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী অধ্যাপক ডা. মোঃ সায়েদুর রহমান বলেন, “বাংলাদেশ মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় হবে আধুনিক চিকিৎসা প্রযুক্তি স্থানান্তরের হাব। এখান থেকেই প্রযুক্তি সারা দেশে ছড়িয়ে পড়বে।”

 

সভাপতির বক্তব্যে ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক ডা. মোঃ শাহিনুল আলম বলেন, “আজকের দিনটি বিএমইউর জন্য ঐতিহাসিক। এই রোবটিক রিহ্যাবিলিটেশন সেন্টারের মাধ্যমে দেশে এআই ভিত্তিক চিকিৎসা শুরু হলো। এটিকে ‘ট্রেনিং অব দ্য ট্রেইনার্স’ মডেলে গড়ে তোলা হবে, যাতে সারা দেশে এই সেবা ছড়িয়ে দেওয়া যায়।” তিনি এসময় বিএমইউর অন্যান্য পদক্ষেপ যেমন—ইভিডেন্স বেইসড মেডিসিন, মেডিক্যাল অডিট, ইনফেকশন কন্ট্রোল, জরুরি চিকিৎসা, জেরিয়াট্রিক কেয়ার, অটোমেশন, ই-লগ বুক, রেডিওথেরাপি, কিডনি ও লিভার ট্রান্সপ্ল্যান্ট ইত্যাদির অগ্রগতির বিষয়ও উল্লেখ করেন।

 

অধ্যাপক ডা. মোঃ আব্দুস শাকুর জানান, “এই সেন্টারে মোট ৫৭টি রোবট রয়েছে, যার মধ্যে ২২টি এআই-ভিত্তিক। চীনের বিশেষজ্ঞ দলের মাধ্যমে ২৯ জন দেশীয় চিকিৎসক ও ফিজিওথেরাপিস্টকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। জুলাইয়ের আন্দোলনে আহত যারা দীর্ঘমেয়াদে চিকিৎসার প্রয়োজন তাদের এখানে বিনামূল্যে সেবা দেওয়া হচ্ছে। ভবিষ্যতে সাধারণ রোগীদের জন্যও এটি উন্মুক্ত করা হবে এবং খরচ রাখা হবে সাধ্যের মধ্যে।”

তিনি আরও জানান, “চীনের সহায়তায় প্রায় ৩০ কোটি টাকার আধুনিক রোবোটিক যন্ত্রপাতি দেওয়া হয়েছে। এটি দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম আধুনিক রোবোটিক রিহ্যাব সেন্টারে পরিণত হয়েছে। এর ফলে উন্নত চিকিৎসার জন্য রোগীদের বিদেশ যাওয়ার প্রয়োজন কমবে এবং বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় হবে।”

 

অনুষ্ঠানে বিএমইউর বিভিন্ন অনুষদের ডিন, বিভাগীয় চেয়ারম্যান, কর্মকর্তা, শিক্ষক, চিকিৎসক, রেসিডেন্টসহ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও উপস্থিত ছিলেন।

আরও পড়ুন