বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আগামী তিন মাসে বেশ কয়েকটি দৃশ্যমান উন্নয়ন কার্যক্রম বাস্তবায়িত হবে বলে জানিয়েছেন হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. মশিউল মুনির। সোমবার হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের সেমিনার কক্ষে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় তিনি এ তথ্য জানান।
পরিচালক বলেন, ৫০০ শয্যার অনুমোদিত এই হাসপাতালটি ১ হাজার শয্যায় উন্নীত হলেও জনবল বাড়েনি। প্রতিদিন গড়ে প্রায় ২ হাজার রোগী ভর্তি থাকেন, অথচ অনুমোদিত জনবলেরও অর্ধেক পদ শূন্য। ফলে আড়াইশ শয্যার জনবল দিয়ে দ্বিগুণেরও বেশি রোগীর চিকিৎসা দিতে হচ্ছে, যা সব ক্ষেত্রেই সমস্যা তৈরি করছে। তবুও গত কয়েক মাস ধরে হাসপাতালের সার্বিক অবস্থা উন্নয়নে সর্বাত্মক চেষ্টা চলছে।
তিনি জানান, গত অর্থবছরে হাসপাতালে ইনডোরে চিকিৎসা নিয়েছেন ১ লাখ ৯৬ হাজার রোগী এবং বহির্বিভাগে প্রায় ৫ লাখ ৭৫ হাজার রোগী। জরুরি বিভাগে চিকিৎসা নিয়েছেন ২ লাখ ২৩ হাজার মানুষ। এ সময় অপারেশন থিয়েটারে ৩১ হাজার ৩৯৭ জন রোগীর অস্ত্রোপচার হয়, যার মধ্যে জটিল চক্ষু অপারেশনও রয়েছে। বর্তমানে প্রতি বেডে গড়ে ২.১৭ জন রোগী চিকিৎসাধীন। হাসপাতালটিতে এখনো এমআরআই মেশিন না থাকলেও ১টি সিটি স্ক্যান, ২টি এক্স-রে, ৪টি পোর্টেবল এক্স-রে এবং ৪টি আল্ট্রাসোনোগ্রাফি মেশিন দিয়ে সেবা দেওয়া হচ্ছে। বিকল যন্ত্রপাতি মেরামত এবং নতুন সরঞ্জাম সংগ্রহের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
পরিচালক আরও জানান, মেডিসিন ওয়ার্ডের ৪টি ইউনিট মূল ভবনে ফেরানো হচ্ছে এবং বহির্বিভাগকেও পুরনো মেডিসিন ওয়ার্ডের নিচতলায় সরিয়ে নেওয়া হবে শিগগিরই। ৩৩২ জন অনুমোদিত চিকিৎসকের মধ্যে বর্তমানে রয়েছেন ২৪০ জনের মতো, আর জরুরি বিভাগে ৯ জনের স্থলে মাত্র ৪ জন কর্মরত। সাতটি অ্যাম্বুলেন্সের মধ্যে ৬টি সচল হলেও চালক আছেন মাত্র ৩ জন।
অবৈধ অর্থ আদায়ের অভিযোগে স্বেচ্ছাসেবী ট্রলিম্যানদের পরিবর্তন, পুরনো ট্রলি মেরামত, ৭টি ভিজিলেন্স টিম গঠন, নতুন ১০০ সিলিং ফ্যান স্থাপন, ৯০ জন পরিচ্ছন্নতাকর্মী নিয়োগ এবং ৮টি স্বয়ংক্রিয় পরিষ্কার মেশিন চালু করা হয়েছে। পুরনো বেড বদলে ১০০টি নতুন বেড সংযোজন প্রক্রিয়াধীন। আগামী মার্চের মধ্যে ৪৬০ শয্যার ক্যান্সার, কিডনি ও হৃদরোগ ওয়ার্ড ভবনের নির্মাণকাজ শেষ হবে এবং শিশু হাসপাতালও দ্রুত হস্তান্তর করা হবে।
পরিচালক জানান, নানা অনিয়মে একজন ওয়ার্ড মাস্টারসহ ৪ জনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। দালালমুক্ত হাসপাতাল গড়ে তোলা এবং ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিদের প্রবেশ নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে। কঠোর নজরদারির ফলে হাসপাতালের প্যাথলজি বিভাগে এখন অধিকাংশ পরীক্ষাই নিজস্ব ল্যাবে করা হচ্ছে। এছাড়া এমআরআই, টেলিথেরাপি এবং অন্যান্য সরঞ্জামের চাহিদা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।
মতবিনিময় সভায় শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজের ভাইস-প্রিন্সিপাল ও মেডিসিন বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. আনোয়ার হোসেন বাবলুও বক্তব্য দেন।
এদিকে, চিকিৎসা সুবিধা নিশ্চিতকরণ ও স্বাস্থ্যখাত সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারীরা সোমবার হাসপাতাল প্রাঙ্গণে অনশন ও বরিশাল কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল এলাকায় কয়েক ঘণ্টা সড়ক অবরোধ করেন। এতে বরিশালসহ দক্ষিণাঞ্চলের সঙ্গে সারাদেশের সড়ক যোগাযোগ বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে এবং হাজারো যাত্রী চরম ভোগান্তিতে পড়েন। একই রাতে আন্দোলনকারীদের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে অন্তত ১০ জন আহত হন, কয়েকজনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
আরও পড়ুন