Advertisement
Doctor TV

শুক্রবার, ৮ আগস্ট, ২০২৫


বিএমইউ’র প্রতিবেদনে উঠে এল ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর গর্ভবতী নারীদের খাবার সংক্রান্ত কুসংস্কার

Main Image

ছবিঃ সংগৃহীত


বাংলাদেশ মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএমইউ) পাবলিক হেলথ এন্ড ইনফরমেটিকস বিভাগের উদ্যোগে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীদের স্বাস্থ্য বিষয়ক তিনটি গবেষণার ফলাফল এক প্রগতিশীল সেমিনারে উপস্থাপন করা হয়েছে। বিএমইউ সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালের কনফারেন্স রুম-৫০৪ এ অনুষ্ঠিত এই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস-চ্যান্সেলর অধ্যাপক ডা. মোঃ শাহিনুল আলম।

 

গবেষণাগুলোতে মূলত বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে বসবাসরত ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীদের মধ্যে স্বাস্থ্যসেবার প্রাপ্তি, ম্যালেরিয়া প্রতিরোধ কার্যক্রম এবং গর্ভবতী মহিলাদের নিয়ে প্রচলিত ‘ফুড ট্যাবু’ বা খাবার সংক্রান্ত ভ্রান্ত ধারণা নিয়ে বিস্তারিত অনুসন্ধান চালানো হয়েছে।

 

প্রধান অতিথি অধ্যাপক ডা. মোঃ শাহিনুল আলম তার বক্তব্যে বলেন, “বিএমইউ গতকালকের গণঅভ্যুত্থানের ফলে সৃষ্ট গণআকাঙ্ক্ষা উপলব্ধি করে আন্তর্জাতিক মানের উচ্চতর মেডিক্যাল শিক্ষা, উন্নত চিকিৎসাসেবা এবং গবেষণাকে বিস্তৃত ও জোরদার করেছে। এই ধরনের গবেষণা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রগতিশীল কর্মকাণ্ডের অংশ এবং নতুন বাংলাদেশ গঠনে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে।”

 

গবেষণাগুলোর মধ্যে প্রথমটি পরিচালনা করেন ডা. অনির্বাণ চাকমা, যেখানে তিনি রাঙ্গামাটি জেলার বিভিন্ন উপজেলায় ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মধ্যে ম্যালেরিয়া প্রতিরোধের জ্ঞান, অভ্যাস এবং সচেতনতা বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করেন। গবেষণার ফলাফল থেকে সুপারিশ করা হয়, ম্যালেরিয়া প্রতিরোধে ঝুঁকিপূর্ণ সম্প্রদায়কে সঠিক তথ্য দিয়ে শিক্ষিত করা, আবদ্ধ পানি অপসারণ, পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা এবং প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণে উৎসাহিত করা অত্যাবশ্যক।

দ্বিতীয় গবেষণায় ডা. রাজন তালুকদার পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রবীণ ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর অসংক্রামক রোগ যেমন হৃদরোগ, ডায়াবেটিস ও ক্যান্সার সংক্রান্ত স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণের আচরণ বিশ্লেষণ করেন। গবেষণায় উঠে আসে যে প্রবীণদের স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণে প্রধান বাধাগুলো হলো আর্থ-সামাজিক দুরবস্থা, ভাষাগত প্রতিবন্ধকতা এবং স্বাস্থ্যকেন্দ্রে সেবার দীর্ঘ প্রতীক্ষা। এই সমস্যাগুলো দূর করতে স্থানীয় ভাষাভাষী কর্মী নিয়োগ, পরিবারের সদস্যদের মাধ্যমে প্রবীণদের সেবা কেন্দ্রে নেওয়া, অপেক্ষার সময় কমানো ও ওষুধের মূল্য হ্রাসের মতো পদক্ষেপ গ্রহণের সুপারিশ করা হয়েছে।

 

তৃতীয় গবেষণাটি পরিচালনা করেন ডা. লাবন্য ত্রিপুরা, যেখানে পার্বত্য চট্টগ্রামের ত্রিপুরা, চাকমা ও মারমা সম্প্রদায়ের গর্ভবতী নারীদের মধ্যে প্রচলিত ৬৪টি ‘ফুড ট্যাবু’ চিহ্নিত করা হয়। এই খাবারগুলোর মধ্যে ফল, শাক-সবজি, মাছ, পশুজাত খাদ্যসহ অনেক পুষ্টিকর খাদ্য রয়েছে, যা ভ্রান্ত ধারণার কারণে গর্ভকালে এড়িয়ে চলা হয়। গবেষণায় দেখা যায়, গর্ভবতী মায়েদের মা, শাশুড়ি, ননদ ও দাদী-নানীর মতো পরিবারের সিনিয়র সদস্যরা এসব ট্যাবু রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। এছাড়া গর্ভপাত, প্রসবজনিত জটিলতা ও অন্যান্য স্বাস্থ্যঝুঁকির কারণে বিশেষ খাবার থেকে বিরত থাকার ভুল ধারণাও প্রচলিত। গবেষণার সুপারিশে বলা হয়, এই ফুড ট্যাবু দূর করে পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণে উৎসাহিত করতে হবে এবং ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর সংস্কৃতি সম্মান করে উপযুক্ত স্বাস্থ্য শিক্ষা কর্মসূচি চালানো জরুরি।

 

বাংলাদেশে প্রায় ৫৪টি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী রয়েছে, যাদের মধ্যে চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা, তঞ্চঙ্গ্যা, মু, সাঁওতাল, খাসি, গারো, বম, হাজং এবং মণিপুরী উল্লেখযোগ্য। আনুমানিক ১৬ লাখেরও বেশি সদস্য নিয়ে এই জনগোষ্ঠীগুলো দেশের সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যকে সমৃদ্ধ করে। প্রতি বছর ৯ আগস্ট বিশ্বব্যাপী ‘আদিবাসী দিবস’ পালিত হয়, যা উপলক্ষে এই গবেষণা ও সেমিনারের আয়োজন করা হয়।

 

অনুষ্ঠানে বিএমইউ কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. নাহরীন আখতার, নিপসম পরিচালক অধ্যাপক ডা. মোঃ জিয়াউল ইসলাম এবং অন্যান্য গবেষকগণ বক্তব্য রাখেন। পাবলিক হেলথ এন্ড ইনফরমেটিকস বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মোঃ আতিকুল হক সভাপতিত্ব করেন, এবং সহযোগী অধ্যাপক ডা. মোঃ খালেকুজ্জামান সঞ্চালনা করেন।

 

এই গবেষণা ও সংশ্লিষ্ট সুপারিশগুলো বাংলাদেশের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর স্বাস্থ্য উন্নয়নে নতুন দিগন্ত উন্মোচনের পাশাপাশি জাতির সমগ্র স্বাস্থ্যসেবায় অন্তর্ভুক্তি ও ন্যায়সঙ্গত প্রগতির পথ সুগম করবে বলে আশা করা হচ্ছে।

আরও পড়ুন