Advertisement
Doctor TV

রবিবার, ২৭ জুলাই, ২০২৫


গাজা থেকে ২৮ জন চিকিৎসককে আটকে রেখেছে ইসরায়েল: হেলথকেয়ার ওয়ার্কার্স ওয়াচ

Main Image

ছবিঃ সংগৃহীত


গোপন অভিযানে গাজার একজন শীর্ষ চিকিৎসক ডা. মারওয়ান আল-হামসকে আটক করার পর ইসরায়েলি কারাগারে বন্দি গাজার চিকিৎসকের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৮ জনে এমনটাই জানিয়েছে ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য সংগঠন হেলথকেয়ার ওয়ার্কার্স ওয়াচ (HWW)। এদের মধ্যে আটজনই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক, যারা অস্ত্রোপচার, হাড়ের চিকিৎসা, হৃদরোগ, ইনটেনসিভ কেয়ার এবং শিশুস্বাস্থ্যে কাজ করতেন।

 

সংগঠনটি জানায়, আটক ২৮ জনের মধ্যে ২১ জনকে ৪০০ দিনের বেশি সময় ধরে আটকে রাখা হয়েছে। তাদের কারও বিরুদ্ধেই কোনো অভিযোগ আনা হয়নি। চলতি জুলাই মাসে আরও তিনজন স্বাস্থ্যকর্মীকে নতুন করে আটক করা হয়েছে।

 

সোমবার গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানায়, রাফাহর আবু ইউসুফ আল-নাজ্জার হাসপাতালের পরিচালক ডা. আল-হামসকে আন্তর্জাতিক রেড ক্রসের একটি ফিল্ড হাসপাতালের সামনে থেকে ইসরায়েলি একটি গোপন ইউনিট ধরে নিয়ে যায়। তার অবস্থান এখনো জানা যায়নি। ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষও এ নিয়ে কোনো মন্তব্য করেনি।

 

পরদিন মঙ্গলবার, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) জানায়, দেইর আল-বালাহর একটি আশ্রয়কেন্দ্র থেকে তাদের দুই কর্মীকে আটক করা হয়েছে। তাদের মধ্যে একজন এখনও ইসরায়েলের হেফাজতে রয়েছেন।

WHO জানায়, ২০২৩ সালের অক্টোবরে হামাস-ইসরায়েল যুদ্ধ শুরুর পর থেকে এখন পর্যন্ত ইসরায়েলি বাহিনী ৩০০-র বেশি স্বাস্থ্যকর্মীকে আটক করেছে। তবে HWW এর হিসাব মতে, এ সংখ্যা ৪০০ ছাড়িয়েছে।

সংগঠনটির পরিচালক মুআথ আলসার বলেন, “অনেক চিকিৎসককে হাসপাতালেই দায়িত্ব পালন করার সময় ধরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এরপর মাসের পর মাস তাদের কোথাও যোগাযোগ করতে দেওয়া হয়নি, প্রয়োজনীয় চিকিৎসা থেকেও বঞ্চিত রাখা হয়েছে, আর বন্দিশালার অবস্থা ছিল অত্যন্ত করুণ। আমরা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানাই—এই অবৈধভাবে আটক চিকিৎসকদের দ্রুত মুক্তির জন্য ইসরায়েলের ওপর চাপ সৃষ্টি করুন।”

ইতোমধ্যে গাজার স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ধসে পড়েছে। চিকিৎসকরাও চরম খাদ্য সংকটে ভুগছেন, যার ফলে অনেকেই দুর্বল হয়ে পড়েছেন। এতে আহত ও অপুষ্ট রোগীদের জরুরি সেবা দেওয়া কঠিন হয়ে উঠেছে বলে জানিয়েছে দ্য গার্ডিয়ান ও আরবি ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিস্টদের একটি দল।

 

গত ফেব্রুয়ারিতে দ্য গার্ডিয়ান প্রকাশিত এক অনুসন্ধানে কয়েকজন মুক্তিপ্রাপ্ত ফিলিস্তিনি চিকিৎসক জানান, বন্দি অবস্থায় তারা শারীরিক নির্যাতন, মারধর ও অপমানের শিকার হয়েছেন।

বর্তমানে আটক থাকা চিকিৎসকদের মধ্যে রয়েছেন কামাল আদওয়ান হাসপাতালের পরিচালক ডা. হুসাম আবু সাফিয়া। তাকে ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে ওফার কারাগারে নেওয়া হয়। তার আইনজীবী স্কাই নিউজকে জানিয়েছেন, তার শারীরিক অবস্থা দিন দিন খারাপ হচ্ছে এবং তাকে পিটিয়ে নির্যাতন করা হচ্ছে।

 

এদিকে দ্য গার্ডিয়ানকে দেওয়া এক বিবৃতিতে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (IDF) দাবি করেছে, গাজার কিছু চিকিৎসক হামাসের সঙ্গে যুক্ত সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িত। তবে তারা কোনো প্রমাণ দেখায়নি। বিবৃতিতে বলা হয়, “সন্দেহভাজনদের আটক করে তদন্ত করা হয়। যদি তাদের বিরুদ্ধে কিছু না পাওয়া যায়, তবে তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়। আমরা চিকিৎসকদের চিকিৎসক হিসেবে নয়, বরং তাদের সন্ত্রাস সংশ্লিষ্টতার কারণে আটক করি।”

ইসরায়েলি হেফাজতে থাকাকালে অন্তত দুইজন শীর্ষ চিকিৎসকের মৃত্যু হয়েছে। কামাল আদওয়ান হাসপাতালের স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. ইয়াদ আল-রান্তিসি মারা যান শিকমা কারাগারে। আর আল-শিফা হাসপাতালের অর্থোপেডিক বিভাগের প্রধান ডা. আদনান আল-বুরশ মারা যান ওফার কারাগারে নেওয়ার কিছুদিন পর, ২০২৪ সালের এপ্রিল মাসে। সাবেক বন্দিরা দাবি করেছেন, ডা. আল-বুরশকে শারীরিকভাবে নির্যাতন এবং যৌন সহিংসতার শিকার করা হয়েছিল। এখনো তাদের মৃতদেহ পরিবারগুলোর কাছে হস্তান্তর করা হয়নি।

 

গাজার চিকিৎসকদের আটকের ঘটনায় WHO এবং জাতিসংঘ কড়া প্রতিবাদ জানিয়েছে এবং তাদের অবিলম্বে মুক্তি দাবি করেছে। জাতিসংঘ, HWW, হিউম্যান রাইটস ওয়াচ এবং ফিজিশিয়ানস ফর হিউম্যান রাইটস ইসরায়েলের মতো সংস্থাগুলোর প্রতিবেদনে বন্দি চিকিৎসকদের ওপর চালানো নির্যাতন, সহিংসতা এবং মানসিক নিপীড়নের প্রমাণ উপস্থাপন করা হয়েছে।

আরও পড়ুন