Advertisement
Doctor TV

রবিবার, ১৩ জুলাই, ২০২৫


অকাল মৃত্যু ঠেকাতে তামাক আইনের সংস্কার জরুরি

Main Image

ছবিঃ সংগৃহীত


তামাকজনিত কারণে বাংলাদেশে প্রতি বছর প্রায় ১ লাখ ৬১ হাজার মানুষ অকাল মৃত্যুবরণ করছেন। জনস্বাস্থ্যের এই ভয়াবহ ক্ষতি রোধে এবং তামাকের সহজলভ্যতা কমাতে দ্রুত তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংস্কারের দাবি জানিয়েছে দেশের ১৯টি তামাকবিরোধী সংগঠন। শনিবার দুপুরে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনি মিলনায়তনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানানো হয়। যৌথভাবে এ আয়োজনের আয়োজন করে অ্যান্টি টোব্যাকো মিডিয়া এলায়েন্স (আত্মা), বাংলাদেশ ক্যান্সার সোসাইটি, ঢাকা আহছানিয়া মিশন, ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন, প্রজ্ঞা, ডব্লিউবিবি ট্রাস্টসহ ১৯টি সংগঠন।

 

সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা বলেন, বর্তমানে যে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন রয়েছে, তা তামাক কোম্পানির স্বার্থ রক্ষায় তৈরি হওয়ায় এতে বহু ফাঁকফোকর রয়ে গেছে। যার ফলে জনগণের স্বাস্থ্য সুরক্ষার পরিবর্তে কোম্পানিগুলোই লাভবান হচ্ছে। দেশে মোট মৃত্যুর ৭১ শতাংশই অসংক্রামক রোগজনিত এবং এসব রোগের অন্যতম প্রধান কারণ তামাক। হৃদরোগ, ক্যানসার, স্ট্রোকসহ বহু অসংক্রামক রোগের পেছনে তামাক বড় ভূমিকা রাখছে, অথচ এখনও দেশের ৩৫ দশমিক ৩ শতাংশ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ তামাকজাত পণ্য ব্যবহার করে যাচ্ছে।

 

বক্তারা বলেন, জাতিসংঘ ঘোষিত টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি)-তে ২০৩০ সালের মধ্যে অসংক্রামক রোগজনিত মৃত্যু এক-তৃতীয়াংশ কমিয়ে আনার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। কিন্তু শক্তিশালী ও আধুনিক তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন ছাড়া এ লক্ষ্য অর্জন সম্ভব নয়। তারা জানান, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ২০২২ সালে এফসিটিসি বা ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন অন টোব্যাকো কন্ট্রোল-এর আলোকে আইন সংশোধনের উদ্যোগ নেয়। বর্তমানে একটি উচ্চপর্যায়ের উপদেষ্টা কমিটি সংশোধিত আইনের খসড়া চূড়ান্ত করার কাজ করছে।

 

খসড়ায় ধূমপানের জন্য নির্ধারিত ‘স্মোকিং জোন’ বাতিল, খুচরা ও খোলা তামাকজাত দ্রব্য বিক্রি নিষিদ্ধ, বিক্রয়স্থলে তামাকজাত পণ্যের প্রদর্শন নিষিদ্ধ, ই-সিগারেট ও ভ্যাপিং জাতীয় পণ্যের নিষেধাজ্ঞা এবং তামাক কোম্পানির সামাজিক দায়বদ্ধতা কার্যক্রমে সম্পৃক্ত হওয়া নিষিদ্ধ করার মতো প্রস্তাব অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। বক্তারা বলেন, আইন সংশোধনের উদ্যোগ নেওয়ার পর থেকেই তামাক কোম্পানিগুলো বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রচার করে নীতিনির্ধারকদের প্রভাবিত করার চেষ্টা করছে। তারা কর্মসংস্থান কমে যাওয়া, রাজস্ব হারানো ও ধূমপান বেড়ে যাওয়ার মতো অসত্য তথ্য ছড়িয়ে এই প্রক্রিয়া থামানোর অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

 

তবে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) তথ্য বলছে, ২০০৫ সালে প্রথম তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন প্রণয়ন এবং ২০১৩ সালের সংশোধনের পরও সিগারেট খাত থেকে রাজস্ব আয় নিয়মিতভাবে বেড়েছে। সংবাদ সম্মেলনে আরও জানানো হয়, স্মোকিং জোন ব্যবস্থা পরোক্ষ ধূমপান নিয়ন্ত্রণে কার্যকর নয় বলেই ৭৯টি দেশ এই ব্যবস্থা বাতিল করেছে। তরুণদের ভ্যাপিং আসক্তি রোধে ভারত, থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুরসহ ৪২টি দেশ ই-সিগারেট নিষিদ্ধ করেছে এবং ১১৮টি দেশ খুচরা সিগারেট বিক্রি বন্ধ করেছে।

 

বক্তারা বলেন, ব্রাজিল, তুরস্কসহ যেসব দেশে কঠোর তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন রয়েছে, সেখানে তামাক ব্যবহার উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে। বাংলাদেশেও একই রকম দৃঢ় অবস্থান নিতে হবে। সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক ডা. খন্দকার আব্দুল আউয়াল রিজভী, বাংলাদেশ ক্যানসার সোসাইটির সভাপতি অধ্যাপক ডা. গোলাম মহিউদ্দিন ফারুক, অ্যান্টি টোব্যাকো মিডিয়া অ্যালায়েন্সের (আত্মা) আহ্বায়ক ও বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের প্রধান অপরাধ প্রতিবেদক লিটন হায়দার, ঢাকা আহছানিয়া মিশনের স্বাস্থ্য ও ওয়াশ সেক্টরের পরিচালক ইকবাল মাসুদ, ডরপ-এর উপনির্বাহী পরিচালক মোহাম্মদ জোবায়ের হাসান এবং প্রত্যাশা–এর সাধারণ সম্পাদক হেলাল আহমেদ।

আরও পড়ুন