ঢাকা:
নানা ব্যস্ততায় সময় দেওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে। বাচ্চা চুপ করাতে, খাওয়াতে কিংবা একটু নিজের সময় পেতে—শিশুর হাতে তুলে দেওয়া হয় মোবাইল, ট্যাব বা টিভি রিমোট। এতে আপাতদৃষ্টিতে কাজ সহজ হয়ে গেলেও, শিশুর ভবিষ্যতের জন্য এই “সহজ সমাধান” বড় ধরনের বিপদ ডেকে আনছে—এমনটাই বলছেন বিশেষজ্ঞরা।
শিশুদের মানসিক ও শারীরিক বিকাশে মোবাইল ডিভাইসের অতিরিক্ত ব্যবহার যে কতটা ক্ষতিকর, তা উঠে এসেছে সাম্প্রতিক গবেষণায়।
মস্তিষ্কের বিকাশে ব্যাঘাত
শিশুর মস্তিষ্ক বিকাশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সময় তার শৈশব। এ সময় বাস্তব জগত থেকে শেখার দরকার হয় চোখ, কান ও মন খুলে। কিন্তু মোবাইলের দ্রুতগতির ভিজ্যুয়াল, ঝলমলে অ্যানিমেশন ও তড়িৎ রঙ শিশুর মনোযোগ ধরে রাখার ক্ষমতা নষ্ট করে, বলে মত মনোবিজ্ঞানীদের।
ভাষা শেখার গতি কমে যায়
শিশুরা কথা বলা শেখে আশেপাশের মানুষের মুখ দেখে ও শব্দ শুনে। নিয়মিত স্ক্রিনে ডুবে থাকলে তারা পরিবার বা আশপাশের মানুষের সঙ্গে কথা বলার সুযোগ পায় না। এতে তাদের ভাষা শেখার গতি ধীর হয়, বাক্য গঠনে সমস্যা দেখা দেয়।
চোখের দৃষ্টিশক্তি ঝুঁকিতে
লম্বা সময় স্ক্রিনে তাকিয়ে থাকলে শিশুর চোখে চাপ পড়ে, চোখ শুষ্ক হয়, ঝাপসা দেখা দিতে পারে। অনেক সময় কম বয়সেই মাইনাস পাওয়ার বা চশমা পরার প্রয়োজন পড়ে যায়।
ওজন বাড়া ও শারীরিক নিষ্ক্রিয়তা
মোবাইল ব্যবহারে শিশুর চলাফেরা কমে যায়। খেলার মাঠের বদলে তারা বসে থাকে স্ক্রিনের সামনে। এতে শরীরে ফ্যাট জমে, ওজন বাড়ে এবং পরবর্তীতে ডায়াবেটিস বা হরমোনজনিত সমস্যার ঝুঁকি তৈরি হয়।
আচরণগত সমস্যা ও আসক্তি
ডিভাইস থেকে দূরে রাখলেই অনেক শিশুই চিৎকার, রাগ বা মারমুখী আচরণ করে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটি আসক্তির লক্ষণ। দিনের পর দিন মোবাইল হাতে থাকলে শিশুরা ধীরে ধীরে আত্মনিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে, আবেগ নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না।
ঘুমে ব্যাঘাত
মোবাইলের স্ক্রিন থেকে নিঃসৃত নীল আলো (blue light) শিশুর মস্তিষ্কে ঘুমের সংকেত পাঠানো বন্ধ করে দেয়। ফলে ঘুম আসতে দেরি হয়, ঘুম গভীর হয় না। পরদিন সকালেই দেখা দেয় ক্লান্তি, বিরক্তি ও মনোযোগহীনতা।
সামাজিক দক্ষতার অভাব
যেহেতু শিশুরা স্ক্রিনে ব্যস্ত থাকে, তারা অন্যের সঙ্গে মিশে কথা বলা, খেলাধুলা বা সহানুভূতির মতো সামাজিক গুণাবলি পর্যাপ্তভাবে শেখে না। ফলে বড় হয়ে সম্পর্ক তৈরির ক্ষেত্রেও তারা পিছিয়ে পড়ে।
সমাধান কী?
বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দেন—
শেষ কথায় সতর্কতা
স্বস্তির জন্য শিশুর হাতে তুলে দেওয়া মোবাইল হয়তো মুহূর্তের শান্তি দেয়, কিন্তু দীর্ঘমেয়াদে তা হতে পারে তার বিকাশের বড় বাধা।
এই ছোট ছোট অভ্যাসগুলোই গড়ে তোলে একটি প্রজন্মের ভবিষ্যৎ—সুস্থ, সাবলীল আর পরিপূর্ণ করে।
আরও পড়ুন