ছবিঃ সংগৃহীত
আজকের দিনে এমন কাউকে খুঁজে পাওয়া কঠিন, যিনি ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম কিংবা ইউটিউবে রিল বা শর্টস না দেখে একটি দিন কাটিয়েছেন। ইচ্ছায় হোক বা অজান্তেই হোক, আমরা সবাই কোনো না কোনোভাবে এই স্বল্পদৈর্ঘ্যের ভিডিওর জগতে জড়িয়ে পড়েছি। অনেকের জন্য তো এগুলো হয়ে উঠেছে নিত্যদিনের অংশ।
ফেসবুক রিল সাধারণত সর্বোচ্চ তিন মিনিট, ইনস্টাগ্রাম রিল ৯০ সেকেন্ড এবং ইউটিউব শর্টস এক মিনিটের মধ্যে সীমাবদ্ধ। এই সংক্ষিপ্ত ভিডিওগুলো অনেকটা নেশার মতো কাজ করে একবার দেখা শুরু করলে আর থামা যায় না। কিন্তু অবিরাম এই ভিডিও দেখার প্রভাব মস্তিষ্কে ঠিক কেমন পড়ছে, তা সম্পর্কে আমরা খেয়াল রাখি না।
চীনের একদল গবেষক এবং মনোবিজ্ঞানী এই বিষয়ে বিস্তারিত বিশ্লেষণ করেছেন। শিক্ষামূলক প্ল্যাটফর্ম ‘সাই’-এর মনোবিজ্ঞানী অ্যান্ড্রি রাইজিক জানিয়েছেন, ছোট ভিডিও দেখার অভ্যাস মানুষের মস্তিষ্ক, মানসিক স্বাস্থ্য ও আচরণে লক্ষণীয় পরিবর্তন আনতে পারে। যেমন, এটি মানুষকে পরশ্রীকাতর বা হিংসুক করে তুলতে পারে—অন্যের জীবন বা সফলতা দেখে ঈর্ষা জন্ম নিতে পারে।
২০২৪ সালের চীনের ইন্টারনেট উন্নয়ন সংক্রান্ত এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, দেশটিতে শর্টস ব্যবহারকারীর সংখ্যা ১ বিলিয়নেরও বেশি, যা মোট ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর প্রায় ৯৫ শতাংশ। এর বড় একটি অংশ কিশোর-কিশোরী ও প্রবীণ ব্যবহারকারীদের নিয়ে গঠিত।
চীনের তিয়ানজিন নরমাল ইউনিভার্সিটির গবেষণায় ১১২ জন কলেজ শিক্ষার্থীর ওপর পরিচালিত একটি গবেষণায় উঠে এসেছে শর্টস ও রিলের প্রভাব:
১. ঈর্ষা ও আসক্তি: যারা সহজে ঈর্ষান্বিত হন, তারা রিল বা শর্টসে বেশি আসক্ত হয়ে পড়েন। অনেক সময় নেতিবাচক আবেগ থেকে মুক্তি পেতেও তারা ভিডিও দেখতে শুরু করেন।
২. মস্তিষ্কে পরিবর্তন: রিল বা শর্টসের অতিরিক্ত আসক্তি মস্তিষ্কের আবেগ নিয়ন্ত্রণ ও সিদ্ধান্ত গ্রহণে ভূমিকা রাখা অংশকে প্রভাবিত করে। যদিও তা স্থায়ী ক্ষতি নয়, কিন্তু কার্যকারিতা ব্যাহত হতে পারে।
৩. জিনের ভূমিকা: গবেষকরা এমন কিছু জিন শনাক্ত করেছেন, যা শর্ট ভিডিওর প্রতি আসক্তির প্রবণতার সঙ্গে সম্পর্কিত। অর্থাৎ, কারও আসক্তির ঝোঁক জন্মগতও হতে পারে।
৪. কিশোররা বেশি ঝুঁকিতে: বয়ঃসন্ধিকালে সক্রিয় কিছু জিন কিশোরদের এই ভিডিওর প্রতি আরও বেশি আকৃষ্ট করে তোলে। তাই তাদের জন্য ঝুঁকি তুলনামূলকভাবে বেশি।
মস্তিষ্কে রিল ও শর্টসের যে রকম প্রভাব পড়ে
মস্তিষ্কের রিওয়ার্ড সিস্টেম পরিবর্তন: দ্রুত দৃশ্যান্তর ও আবেগ জাগানিয়া কনটেন্টের কারণে মস্তিষ্কের ‘রিওয়ার্ড সিস্টেম’ এমন ভিডিওকে পুরস্কার হিসেবে গণ্য করতে শেখে। এতে করে মস্তিষ্ক বারবার একই উদ্দীপনা চায়, যা আসক্তিকে আরও বাড়ায়।
মনোযোগ কমে যাওয়া: মস্তিষ্কের প্রিফ্রন্টাল কর্টেক্স অংশ, যা পরিকল্পনা ও নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ, তা অতিরিক্ত রিল দেখা থেকে দুর্বল হয়ে যেতে পারে। ফলে নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়ে ভিডিও দেখা।
তথ্য গ্রহণের ধরনে পরিবর্তন: দীর্ঘ সময় শর্টস দেখলে মস্তিষ্ক সহজ, গতিশীল তথ্যে অভ্যস্ত হয়ে ওঠে। এতে জটিল বা দীর্ঘ বিষয়বস্তুতে মনোযোগ দেওয়া কঠিন হয়ে পড়ে।
আবেগ নিয়ন্ত্রণে সমস্যা: অনেকেই নেতিবাচক আবেগ ভুলে থাকতে রিল বা শর্টস দেখে থাকেন। তবে দীর্ঘমেয়াদে এটি সেই আবেগ আরও বাড়িয়ে দিতে পারে।
রিল বা শর্টস সবসময় খারাপ নয় অনেক সময় এগুলো তথ্যবহুল, মজাদার বা শিক্ষণীয়ও হতে পারে। তবে অতিরিক্ত ব্যবহারে অভ্যাসগত পরিবর্তন হওয়া স্বাভাবিক। কার উপর কেমন প্রভাব ফেলবে, তা নির্ভর করে ব্যক্তিগত বৈশিষ্ট্য, মানসিক অবস্থা ও ব্যবহারের ধরনের ওপর। তবে বিশেষ করে কিশোর-কিশোরীদের ক্ষেত্রে সচেতনতা ও পরিমিত ব্যবহার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
আরও পড়ুন