ছবিঃ সংগৃহীত
মশা-যত ছোট, তত ভয়ংকর। বিরক্তিকর গুঞ্জন ছাড়াও এদের এক বড় পরিচয় আছে: বিশ্বের সবচেয়ে বেশি প্রাণঘাতী প্রাণী হিসেবে মশা এখন স্বীকৃত। প্রতিবছর লক্ষ লক্ষ মানুষ মারা যায় শুধুমাত্র মশাবাহিত রোগে। বাংলাদেশও এই ঝুঁকি থেকে মুক্ত নয়। এ দেশে শনাক্ত মশার প্রজাতি ১২৩টি, আর এর মধ্যে পাঁচটি মারাত্মক রোগ ছড়াচ্ছে নিরবে ম্যালেরিয়া, ফাইলেরিয়া, ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া ও জাপানিজ এনসেফালাইটিস। এসব রোগের প্রকোপ বাড়ছে বৃষ্টির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে।
ম্যালেরিয়া
ম্যালেরিয়া বহন করে স্ত্রী অ্যানোফিলিস মশা। বাংলাদেশে ৩৬টি অ্যানোফিলিস প্রজাতির মধ্যে সাতটি ম্যালেরিয়া ছড়াতে সক্ষম। বিশেষজ্ঞদের মতে, চারটি প্রজাতিই মূল বাহক হিসেবে বেশি সক্রিয়।
বর্তমানে পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের ১৩টি জেলায় ম্যালেরিয়ার উপস্থিতি বেশি। বিশেষ করে বর্ষাকালে সংক্রমণ বাড়ে।
২০০৮ সালে আক্রান্তের সংখ্যা ছিল প্রায় ৮৫,০০০ যেখানে ১৫৪ জনের মৃত্যু হয়েছিল। এখন সেই সংখ্যা কমলেও পার্বত্য এলাকায় রোগটি আবার মাথাচাড়া দিচ্ছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ২০৩০ সালের মধ্যে ম্যালেরিয়া নির্মূলের লক্ষ্যে কাজ করছে।
ফাইলেরিয়া
ফাইলেরিয়া রোগে আক্রান্ত হলে হাত, পা কিংবা যৌনাঙ্গ পর্যন্ত অস্বাভাবিকভাবে ফুলে যেতে পারে। স্থানীয়ভাবে একে গোদ রোগ বলা হয়।
এই রোগ ছড়ায় কিউলেক্স ও ম্যানসোনিয়া মশার মাধ্যমে। দেশে এখন পর্যন্ত ৩৪টি জেলায় ফাইলেরিয়া রোগী শনাক্ত হয়েছে। এটি ধীরে ধীরে শরীরে ক্ষতি করে, কিন্তু পরিণতি ভয়াবহ হতে পারে।
ডেঙ্গু
ডেঙ্গুর নাম এখন সবার পরিচিত। শহর তো বটেই, গ্রামেও এই রোগ ভয় ধরিয়ে দিচ্ছে। এডিস ইজিপ্টি ও অ্যালবোপিকটাস প্রজাতির মশা এই ভাইরাস ছড়ায়। এগুলো পরিষ্কার জমা পানিতে বংশবিস্তার করে ফুলের টব, বালতি, ড্রাম, ফ্রিজের ট্রে, ছাদে জমা পানি সবই হতে পারে ডেঙ্গুর উৎস।
উপসর্গগুলো বেশ ভয়াবহ: তীব্র জ্বর, গা ও হাড়ভাঙা ব্যথা, চোখের পেছনে ব্যথা, র্যাশ, বমি, এমনকি শরীর থেকে রক্তক্ষরণ পর্যন্ত হতে পারে। সবচেয়ে বিপজ্জনক অবস্থা হয় যখন রক্তে প্লাটিলেট কমে যায়।
স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা বলছেন, ডেঙ্গুতে মৃত্যুর প্রধান কারণ—চিকিৎসা নিতে দেরি করা।
চিকুনগুনিয়া
২০০৮ সালে বাংলাদেশে প্রথম শনাক্ত হয় চিকুনগুনিয়া। এটিও এডিস মশার মাধ্যমে ছড়ায়। উপসর্গ অনেকটা সাধারণ ভাইরাস জ্বরের মতো হলেও, হাড়ের জোড়ে জোড়ে অসহ্য ব্যথা এই রোগের বড় বৈশিষ্ট্য।
অনেক রোগী জ্বর সেরে গেলেও সপ্তাহ, এমনকি মাসের পর মাস ব্যথা নিয়ে কষ্ট পান। ফলে এই রোগকে হালকাভাবে নেয়ার সুযোগ নেই।
জাপানিজ এনসেফালাইটিস
বাংলাদেশে প্রথম ১৯৭৭ সালে মধুপুরে এই রোগ শনাক্ত হয়। কিউলেক্স মশা বহন করে এই ভাইরাস, যা সরাসরি মস্তিষ্কে সংক্রমণ ঘটায়। লক্ষণ হিসেবে থাকে জ্বর, মাথা ঘোরা, খিঁচুনি, এমনকি মানসিক বিভ্রান্তি।
রাজশাহী, রংপুর, চট্টগ্রাম ও খুলনা অঞ্চলে জাপানিজ এনসেফালাইটিস রোগের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে।
নিজেকে রক্ষা উপায়
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রতিরোধই এইসব মশাবাহিত রোগের বিরুদ্ধে সবচেয়ে বড় অস্ত্র।
প্রাকৃতিক কিছু উপায়
অনেকে কেমিক্যাল ব্যবহার না করে প্রাকৃতিকভাবে মশা তাড়ানোর চেষ্টা করেন। কিছু কার্যকর কৌশল:
মশাবাহিত রোগ আমাদের নিত্যজীবনের অদৃশ্য শত্রু। একটু অসতর্কতা থেকেই ঘটে যেতে পারে বড় বিপদ। তাই সচেতন থাকুন, পরিবেশ পরিষ্কার রাখুন, মশা তাড়ান নিজে বাঁচুন, অন্যকেও বাঁচান।
আরও পড়ুন