বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) একদল গবেষক অধিক পুষ্টি ও ওষুধি গুণসম্পন্ন এবং উচ্চ ফলনশীল রঙিন মিষ্টি আলুর তিনটি নতুন জাত উদ্ভাবন করেছেন। নতুন উদ্ভাবিত আলুর নাম হলো- ‘বাউ মিষ্টি আলু- ৭, ৮ ও ৯’। এই আলুতে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্থোসায়ানিন, কেরাটিন, ফাইবার এবং খনিজ পদার্থ রয়েছে। এ কারণে এই আলু নিয়মিত খেলে তা ক্যান্সার, ডায়াবেটিস, কোষ্ঠকাঠিন্যসহ নানান ধরনের জটিল রোগ প্রতিরোধে কার্যকর ভূমিকা রাখবে বলে আশা করছেন গবেষকরা। সূত্রঃ জাগোনিউজ।
ইন্টারন্যাশনাল পটেটো সেন্টারের (সিআইপি) অর্থায়নে গবেষণাটি পরিচালিত হয়। এতে নেতৃত্ব দেন বাকৃবির কৌলিতত্ত্ব ও উদ্ভিদ প্রজনন বিভাগের অধ্যাপক এ বি এম আরিফ হাসান খান।
গবেষণাটি করার উদ্দেশ্য সম্পর্কে অধ্যাপক এ বি এম আরিফ হাসান খান বলেন, বর্তমানে দেশে প্রায় ২৪ হাজার হেক্টর জমিতে মিষ্টি আলুর চাষ হচ্ছে। যা থেকে আড়াই লাখ টনের কিছু বেশি আলু উৎপাদন হয়। অর্থাৎ প্রতি হেক্টরে গড় ফলন ১০ টনের সামান্য বেশি। তবে দেশে মিষ্টি আলুর চাহিদা উৎপাদনের চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ। মূলত মিষ্টি আলুর উৎপাদন বাড়ানো এবং পুষ্টি চাহিদা পূরণই আমাদের এই গবেষণার মূল উদ্দেশ্য। আশা করি নতুন উদ্ভাবিত জাতগুলো দেশে মিষ্টি আলুর উৎপাদন বাড়াতে এবং পুষ্টি চাহিদা পূরণে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখবে।
গবেষণার পদ্ধতি সম্পর্কে ওই অধ্যাপক জানান, পেরুর রাজধানী লিমায় অবস্থিত ইন্টারন্যাশনাল পটেটো সেন্টারের সদরদপ্তর থেকে বীজ এনে পলিক্রস ব্রিডিংয়ের মাধ্যমে চারা উৎপাদন করা হয়। এরপর সাড়ে চার বছরের গবেষণায় মিষ্টি আলুর রঙিন তিনটি জাত উদ্ভাবন করা হয়। এসব আলু দেখতে বেগুনি, কমলা ও গোলাপি রঙের।
নতুন উদ্ভাবিত মিষ্টি আলুর চাষাবাদ পদ্ধতি ও ফলন সম্পর্কে অধ্যাপক আরিফ বলেন, নতুন উদ্ভাবিত জাত তিনটি সাধারণ মিষ্টি আলুর চেয়ে তিনগুণ বেশি ফলনশীল। এ জাতের আলু সারা বছর চাষযোগ্য। মাত্র ৯০-১০০ দিনের মধ্যে ফসল ঘরে তোলা যায়। এর চাষাবাদ পদ্ধতিও খুবই সহজ, ফলনও ভালো। এই আলু চাষে কৃষকরা যেমন লাভবান হবেন, তেমনি দেশের পুষ্টি চাহিদা মেটাতে সহায়ক হবে।
নতুন জাতের এই আলুগুলো কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর (ডিএই) ও বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএডিসি) মাধ্যমে সারা দেশে দ্রুত ছড়িয়ে দেওয়ার তাগিদে ইতিমধ্যে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।
তিনি আরও জানান, উদ্ভাবিত নতুন জাতের মিষ্টি আলুর গ্লাইসেমিক ইনডেক্স ভাতের চেয়ে কম। ফলে ডায়াবেটিস রোগীরা এটি অনায়াসে খেতে পারবেন। যেহেতু আলুগুলো রঙিন জাতের তাই এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্থোসায়ানিন, কেরাটিন, ফাইবার এবং খনিজ পদার্থ। এই আলু নিয়মিত খেলে তা ক্যান্সার, ডায়াবেটিস, কোষ্ঠকাঠিন্যসহ নানান ধরনের জটিল রোগ প্রতিরোধে কার্যকর ভূমিকা রাখবে।
প্রসঙ্গতঃ অধ্যাপক এ বি এম আরিফ হাসান খান নিউজিল্যান্ডের ম্যাসি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ২০১১ সালে ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জন করেন। পরবর্তীতে ২০১৫ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত দক্ষিণ কোরিয়ার সুনচুন ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি থেকে পোস্টডক্টরাল গবেষণা সম্পন্ন করেন। বর্তমানে তিনি সরিষা, ধান, গম ও মিষ্টি আলুর উন্নত জাত উদ্ভাবন নিয়ে গবেষণা করছেন।
অধ্যাপক রবিন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ২০১৮, ২০২০ এবং ২০২২ সালে ‘সেরা প্রকাশনা অ্যাওয়ার্ড’ লাভ করেন। এছাড়া ২০২২, ২০২৩ ও ২০২৪ সালের বাউরেসের বার্ষিক গবেষণা অগ্রগতি কর্মশালায় সেরা ‘প্রবন্ধ উপস্থাপক’ অ্যাওয়ার্ড লাভ করেন।
আরও পড়ুন