ডা. সাঈদ এনাম
পাইরোমেনিয়া কী?
পাইরোমেনিয়া একটি বিরল কিন্তু গুরুতর মানসিক সমস্যা, যেখানে আক্রান্ত ব্যক্তি বারবার ইচ্ছাকৃতভাবে আগুন লাগান—কোনো বাস্তব লাভ, প্রতিশোধ বা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে নয়; বরং এ কাজ তারা করেন মানসিক উত্তেজনা বা হঠাৎ জমে যাওয়া চাপ থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য। এ ধরনের রোগীর কাছে আগুন লাগিয়ে দেওয়া যেন এক ধরনের মানসিক প্রশান্তি লাভ বা তৃপ্তির উৎস। এ রোগ "ইমপাল্স কন্ট্রোল ডিসঅর্ডার" এর অন্তর্ভুক্ত , ( Impulse Control Disorder)।
কারা এতে বেশি আক্রান্ত হন?
সাধারণত কিশোর ও তরুণ পুরুষদের মধ্যে এই রোগের প্রবণতা বেশি দেখা যায়। যাদের পারিবারিক অবহেলা, শারীরিক বা মানসিক নির্যাতনের অভিজ্ঞতা রয়েছে, কিংবা আগুনের প্রতি অস্বাভাবিক কৌতূহল দেখা যায়—তাদের মধ্যে এ রোগ হওয়ার ঝুঁকি তুলনামূলকভাবে বেশি। গবেষণায় দেখা গেছে, আমাদের সমাজে প্রকৃত পাইরোমেনিয়া ১% এর কম।
কেন এটি ভয়ানক?
পাইরোমেনিয়া রোগী বড় ধরনের আগুন লাগায় না— অনেকে শুধু কাগজ, কাঠ বা কাপড় জ্বালিয়ে আনন্দ পায়। কিন্তু এসব ছোট আগুনও বিপজ্জনক, কারণ সেখান থেকেই বড় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। এতে মানুষের জানমালের ক্ষতি হতে পারে, আর যে আগুন লাগায়, সে নিজেও আইনের ঝামেলায় জড়িয়ে পড়তে পারে।
করণীয় ও সচেতনতা:
পাইরোমেনিয়া নিরাময়যোগ্য একটি মানসিক সমস্যা। কিন্তু দুঃখজনকভাবে অনেকেই এটিকে জ্বীন-ভূতের আছর, ভৌতিক ব্যাপার বা যাদু-টোনার প্রভাব বলে ভুল করেন। ফলে সময়মতো চিকিৎসা না পেয়ে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে। অথচ যদি সময়মতো শনাক্ত করা যায়, তাহলে এই রোগ পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব।
যদি কোনো শিশু বা কিশোর বারবার আগুন নিয়ে খেলে, আগুন দেখলে অস্বাভাবিক আনন্দ বা উত্তেজনা প্রকাশ করে—তাকে অবহেলা না করে দ্রুত একজন মনোরোগ বিশেষজ্ঞের (সাইকিয়াট্রিস্ট) পরামর্শ নেওয়া উচিত। এতে করে তার নিজের এবং আশপাশের সবার নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।
চিকিৎসা:
কগনিটিভ বিহেভিয়ার থেরাপি (CBT) এবং প্রয়োজনে নিউরোটিক বা এন্টিসাইকোটিক ওষুধের মাধ্যমে এ রোগ নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব।
ডা. সাঈদ এনাম
সহযোগী অধ্যাপক (সাইকিয়াট্রি),
সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ।
আরও পড়ুন