বাংলাদেশে তামাকের ব্যবহার বিগত ১৩ বছরে হ্রাস পেলেও ২০৩০ সালের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন চ্যালেঞ্জিং হবে। বুধবার (২৩ এপ্রিল) বাংলাদেশ মেডিক্যাল ইউনিভার্সিটিতে ( বিএমইউ) ‘বাংলাদেশে তামাক ব্যবহারের প্রবণতা ও পূর্বাভাস’ শীর্ষক গবেষণার ফলাফল প্রকাশ অনুষ্ঠানে এ আশঙ্কার প্রকাশ করা হয়।
ইউনিভার্সিটির শহীদ ডা. মিল্টন হলে আয়োজিত অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ মেডিক্যাল ইউনিভার্সিটির প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর (গবেষণা ও উন্নয়ন) অধ্যাপক ডা. মো. মুজিবুর রহমান হাওলাদার। প্রধান অতিথি ছিলেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব শেখ মোমেনা মনি। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ মেডিক্যাল ইউনিভার্সিটি জার্নালের এক্সিকিউটিভ এডিটর অধ্যাপক ডা. এম মোস্তফা জামান। বিশেষ অতিথি ছিলেন স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের যুগ্ম-সচিব (বিশ্ব স্বাস্থ্য) মো. মামুনুর রশিদ। স্বাগত বক্তব্য রাখেন বিএমইউর প্রিভেনটিভ এ্যান্ড সোশাল মেডিসিন অনুষদের ডিন ও পাবলিক হেলথ এ্যান্ড ইনফরমেটিকস বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মো. আতিকুল হক।
প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর (গবেষণা ও উন্নয়ন) অধ্যাপক ডা. মোঃ মুজিবুর রহমান হাওলাদার বলেন, তামাক ব্যবহার (ধূমপান ও ধোঁয়াবিহীন) এই দুটোই বাংলাদেশের মানুষের স্বাস্থ্য ঝুঁকির জন্য দায়ী এবং উদ্বেগজনক। এই ঝুঁকি কমানোর ক্ষেত্রে গণ মানুষকে সম্পৃক্ত ও সচেতন করতে হবে। গণ মাধ্যম এক্ষেত্রে বড় ভূমিকা রাখতে পারে। তামাক ব্যবহারের মাত্রা ও ঝুঁকি শহর ও গ্রাম পর্যায়ে আলাদাভাবে তুলে ধরা জরুরি। বিভিন্ন কমিউনিটির মধ্যে তামাকের ব্যবহার কেমন তাও তুলে ধরা যেতে পারে। ধোঁয়াবিহীন তামাক ব্যবহারে তরুণরা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, তা নিয়েও ভাবতে হবে।
অধ্যাপক ড. এম মোস্তফা জামান বলেন, জনস্বাস্থ্য ও তথ্যবিজ্ঞান বিভাগ, বাংলাদেশ মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় ও তার গবেষক দল, জাতীয় পর্যায়ের খানা জরিপ GATS এবং STEPS এর তথ্য বিশ্লেষণে করে দেখেছেন যে, ২০০৯ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত তামাক ব্যবহারের হার উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে, তবে বর্তমান গতিতে এগোলে ২০৩০ সালের মধ্যে তামাকের ব্যবহার ৩০ শতাংশ কমানোর বৈশ্বিক লক্ষ্য পূরণ সম্ভব নয়।
গবেষণা ও বিশ্লেষণের প্রধান ফলাফল হলো ২৫-৬৯ বছর বয়সী বাংলাদেশীদের তামাক ব্যবহার (ধূমপান ও ধোঁয়াবিহীন) ২০০৯ সালে ৫৪ শতাংশ থেকে কমে ২০২২ সালে ৪৭ শতাংশে নেমেছে (১৩ শতাংশ আপেক্ষিক হ্রাস)। ধূমপানের হার ২৭ শতাংশ থেকে ২২ শতাংশ এ (১৯ শতাংশ আপেক্ষিক হ্রাস)। ধোঁয়াবিহীন তামাকের ব্যবহার ৩৬ শতাংশ থেকে ৩১ শতাংশ (১৪ শতাংশ আপেক্ষিক হ্রাস)। লিঙ্গভিত্তিক বিশ্লেষণে পুরুষদের মধ্যে তামাক ব্যবহারের হ্রাস নারীদের তুলনায় কিছুটা বেশি। শহর ও গ্রামীণ এলাকায় তামাক ব্যবহার কমলেও শহুরে অঞ্চলে হ্রাসের হার বেশি স্পষ্ট।
তথ্য বিশ্লেষণে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এনসিডি (অসংক্রামক রোগ) প্রতিরোধ রোডম্যাপ অনুযায়ী, ২০৩০ সালের মধ্যে তামাক ব্যবহার ৩০ শতাংশ কমানোর লক্ষ্য অর্জন করতে হলে বর্তমান নীতিমালার গতি দ্বিগুণ করতে হবে। ২০০৯-২০২২ সালের প্রবণতা বিশ্লেষণে দেখা যায়, বর্তমান হারে তামাক ব্যবহার কমলে ২০৩০ সালে হার দাঁড়াবে প্রায় ৪২ শতাংশ, যা কাঙ্খিত লক্ষ্যের চেয়ে বেশি।
সুপারিশসমূহের মধ্যে রয়েছে তামাক নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি জোরদার করে বর্তমান হ্রাসের হার ত্বরান্বিত করতে হবে। ব্যাবহারিক গবেষণা পরিচালনা করা প্রয়োজন, বিশেষ করে নীতি ও আইনের দিকে বিশেষ নজর দিয়ে, যাতে অপর্যাপ্ত হ্রাসের কারণ চিহ্নিত করা যায়। সর্বশেষ তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছিল ২০২২ সালে। অতএব, দ্রুত আরেকটি জরিপ করা প্রয়োজন, সম্ভব হলে ২০২৫-২০২৬ সালের মধ্যে।
বিশেষজ্ঞদের মন্তব্যে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ‘তামাক ব্যবহার হ্রাসে বাংলাদেশের অগ্রগতি প্রশংসনীয়, তবে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য (এসডিজি) অর্জনে আরও কঠোর নীতি ও সামাজিক সচেতনতা প্রয়োজন। ধোঁয়াবিহীন তামাকের ব্যবহার কমাতে বিশেষ উদ্যোগ নিতে হবে।
আরও পড়ুন