বিশ্বজুড়ে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে ধানে আর্সেনিকের মাত্রা বাড়ছে- এমন আশঙ্কাজনক তথ্য উঠে এসেছে সাম্প্রতিক এক গবেষণায়। বৈজ্ঞানিক সাময়িকী দ্য ল্যানসেট প্ল্যানেটারি হেলথ-এ প্রকাশিত ওই গবেষণার তথ্য অনুযায়ী, তাপমাত্রা মাত্র ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস বাড়লেই ধানে অজৈব আর্সেনিকের ঘনত্ব বেড়ে যায়। আর এই উপাদানটি দীর্ঘমেয়াদে মানুষের শরীরে প্রবেশ করলে ক্যানসারসহ নানা জটিল রোগের ঝুঁকি বাড়ায়। বিশেষ করে ফুসফুস, ত্বক এবং মূত্রাশয়ের ক্যানসারের আশঙ্কা উল্লেখযোগ্য হারে বাড়তে পারে বলে সতর্ক করেছেন বিজ্ঞানীরা।
নিউইয়র্কের কলম্বিয়া ইউনিভার্সিটির মেইলম্যান স্কুল অব পাবলিক হেলথ ও চীনের অ্যাকাডেমি অব সায়েন্সেসের যৌথ গবেষণায় বলা হয়েছে, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে মাটির রাসায়নিক বৈশিষ্ট্যে যে পরিবর্তন আসছে, তা ধানের শিকড়কে মাটি থেকে আর্সেনিক সহজে শোষণের সুযোগ করে দিচ্ছে। দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলো, যেখানে চাল প্রধান খাদ্য, সেখানে এই পরিবর্তন জনস্বাস্থ্যের ওপর গুরুতর প্রভাব ফেলতে পারে।
গবেষণাপত্রের প্রধান গবেষক লুইস জিস্কা জানান, বর্তমান হারে উষ্ণতা ও কার্বন নিঃসরণ চলতে থাকলে ২০৫০ সালের মধ্যে এশিয়ার কোটি কোটি মানুষ আর্সেনিক সম্পর্কিত স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়তে পারে। গবেষণায় সাতটি দেশের ২৮টি ধানের জাত বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, তাপমাত্রা ও কার্বন ডাইঅক্সাইডের সম্মিলিত প্রভাবে অজৈব আর্সেনিকের ঘনত্ব বেশ কয়েকগুণ পর্যন্ত বেড়ে যেতে পারে।
এই উদ্বেগজনক পরিস্থিতি মোকাবিলায় গবেষকেরা বেশ কিছু প্রস্তাবনা দিয়েছেন। এর মধ্যে রয়েছে ধানের এমন জাত উদ্ভাবন, যা মাটি থেকে কম আর্সেনিক শোষণ করে। মাটিতে সিলিকন, লোহা ও ফসফরাস জাতীয় খনিজ উপাদান প্রয়োগের মাধ্যমেও আর্সেনিকের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করা যেতে পারে। রান্নার সময় ধান ধোয়ার পদ্ধতি, পানির অনুপাত ও রন্ধন প্রক্রিয়াও আর্সেনিকের পরিমাণ কমাতে সহায়ক হতে পারে বলে মত গবেষকদের।
ইন্টারন্যাশনাল রাইস রিসার্চ ইনস্টিটিউটের প্রধান বিজ্ঞানী জওহর আলী বলেন, “আমরা ইতোমধ্যেই এমন কিছু ধানের জাত পেয়েছি, যেগুলোতে আর্সেনিকের মাত্রা তুলনামূলকভাবে কম। তবে এই প্রযুক্তিকে মাঠ পর্যায়ে ছড়িয়ে দিতে পর্যাপ্ত বিনিয়োগ প্রয়োজন।”
বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থার মতে, ২০২৩ সালে বায়ুমণ্ডলে CO₂-এর মাত্রা পৌঁছেছে রেকর্ড ৪২০ পিপিএম-এ, যা প্রাক-শিল্প যুগের তুলনায় দেড় গুণ বেশি। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই প্রবণতা যদি নিয়ন্ত্রণে না আনা যায়, তবে ভবিষ্যতে খাদ্য নিরাপত্তা এবং জনস্বাস্থ্যের ওপর ব্যাপক নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।
আরও পড়ুন