মঙ্গলবার (৪ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর একটি রেস্তোরাঁয় বিশ্ব ক্যানসার দিবস উপলক্ষে দিগন্ত মেমোরিয়াল ক্যানসার ফাউন্ডেশন আয়োজিত সংবাদ সম্মেলন
গত বছরে ১৪২০ জন ক্যানসার রোগীকে দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসা সেবা দিয়েছে দিগন্ত মেমোরিয়াল ক্যানসার ফাউন্ডেশন। এই সেবার মধ্যে রোগীদের হাসপাতাল ভর্তির ব্যবস্থা, প্রতিদিন অ্যাম্বুলেন্সে হাসপাতালে যাতায়াত, কাউন্সেলিং এবং নিয়মিত ফলো-আপসহ নানা সুবিধা রয়েছে। মঙ্গলবার (৪ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর একটি রেস্তোরাঁয় বিশ্ব ক্যানসার দিবস উপলক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানানো হয়।
দিগন্ত মেমোরিয়াল ক্যানসার ফাউন্ডেশনের সদস্য সচিব অধ্যাপক ডা. মো. নওফেল ইসলাম জানান, বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটি ক্যানসার হোম পরিচালনা করছে। এখানে রোগীদের জন্য দুই বেলা পুষ্টিকর খাবারের ব্যবস্থা, নিয়মিত চিকিৎসকের ফলো-আপ এবং নার্সদের তত্ত্বাবধানে সেবার কার্যক্রম চলমান। ২০২৪ সালে ১৪২০ রোগীকে এ ধরনের সেবা দেওয়া হয়েছে।
ফাউন্ডেশনটির প্রতিষ্ঠার ইতিহাস তুলে ধরে অধ্যাপক ডা. নওফেল বলেন, ২০০৩ সালে চিকিৎসক দম্পত্তির ক্যানসার আক্রান্ত ছেলের চিকিৎসা তহবিলের অব্যবহৃত অর্থ দিয়ে প্রতিষ্ঠিত হয় দিগন্ত মেমোরিয়াল। এছাড়া সদস্যদের চাঁদা, অনুদান এবং যাকাত থেকেও প্রতিষ্ঠানটি অর্থ সংগ্রহ করে। প্রতিষ্ঠানটি সরকারের অনুমোদিত এবং এনবিআর থেকে রিবেট পাওয়া একটি সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান।
বিশ্ব ক্যানসার দিবস উপলক্ষে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন অধ্যাপক ডা. সায়েবা আক্তার। তিনি ক্যানসার প্রতিরোধে সচেতনতা এবং কাউন্সেলিংয়ের গুরুত্ব তুলে ধরে বলেন, কিছু কিছু ক্যানসার প্রতিরোধযোগ্য, এবং এর মধ্যে এইচপিভি ভ্যাকসিন অন্যতম। তিনি আরও বলেন, ক্যানসারের চিকিৎসা অত্যন্ত ব্যয়বহুল, ফলে শুধু রোগী নয়, তাদের পরিবারও আর্থিক ও সামাজিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। তাই ক্যানসার প্রতিরোধ এবং স্ক্রিনিংয়ে আরও গুরুত্ব দেওয়া উচিত।
স্বাস্থ্য সংস্কার কমিশনের কাজ উল্লেখ করে অধ্যাপক ডা. সায়েবা আক্তার বলেন, ক্যানসার রোগীদের দেশের বাইরে যাওয়া তখনই প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে, যখন দেশে তাদের সাধ্যের মধ্যে চিকিৎসা নিশ্চিত হবে। তিনি আরও জানান, সরকারি হাসপাতালে রেডিওলজির মেশিনগুলো দীর্ঘদিন নষ্ট হয়ে রয়েছে, যার কারণে সিন্ডিকেটের বাধায় সমস্যাগুলো সমাধান হচ্ছে না। এ বিষয়ে সম্মিলিত উদ্যোগ প্রয়োজন।
ক্যানসার বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. এম ফখরুল ইসলাম বলেন, সমাজে ক্যানসার সম্পর্কে একটি ভুল ধারণা রয়েছে যে, ক্যানসার রোগী ভালো হয় না। কিন্তু যদি ক্যানসার প্রাথমিক অবস্থায় শনাক্ত করা যায় এবং সঠিক চিকিৎসা শুরু করা যায়, তবে রোগী দীর্ঘ সময় সুস্থ জীবনযাপন করতে পারেন। এ বিষয়গুলো নিয়ে সচেতনতা তৈরি করতে হবে।
বিশ্ব ক্যানসার দিবসের অনুষ্ঠানে গাইনী ক্যানসার বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. বেগম রোকেয়া আনোয়ার জানান, জাতীয় ক্যানসার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে রেডিওথেরাপির একটি নতুন মেশিন স্থাপন করা হয়েছে। এছাড়া, জনসংখ্যাভিত্তিক ক্যানসার রেজিস্ট্রি আগামী মাস থেকে শুরু হবে, এবং বিএসএমএমইউর সঙ্গে এই প্রকল্পে কাজ চলবে।
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন জাতীয় ক্যানসার হাসপাতালের প্রাক্তন পরিচালক অধ্যাপক ডা. গোলাম মোস্তফা, ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ ডা. আবদুস সালাম সহ অন্যান্য বিশেষজ্ঞরা।
আরও পড়ুন